খাবারদাবার ও চলাফেরা ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না। এ ধারণা থেকে ১৯৮৫ সালে ইফাদ অটোস লিমিটেডের জš§। প্রথমদিকে দেশে উন্নত যানবাহন সরবরাহ করা তাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল। আর এর মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে বিশালত্বের দিকে যাত্রা করে ইফাদ অটোস। কালক্রমে তারা গড়ে তোলে ইফাদ গ্রুপ।
১৯৮৫ সালে ইফাদ এন্টারপ্রাইজেস লিমিটেডও গড়ে তোলা হয়। তখন ভারতভিত্তিক ইএলজিআই ইকুইপমেন্ট লিমিটেডের পণ্য আমদানি করে দেশে বাজারজাত করতো ইফাদ এন্টারপ্রাইজেস। বাংলাদেশের ওষুধ, রসায়ন, বস্ত্র, মেডিক্যাল, খাদ্য ও পানীয় খাতের জন্য এয়ার কমপ্রেসার আমদানি করতো তারা।
দুই বছর পর ১৯৮৭ সালে ভারতের অশোক লেল্যান্ড গাড়ির পরিবেশক হয় ইফাদ গ্রুপ। বর্তমানে সাড়ে ৭ থেকে ৪৯ টন পর্যন্ত পণ্য পরিবহনে সক্ষম ট্রাক, ফুল সাইজ ডিজেল বাস, ডাবল ডেকারসহ সিএনজিচালিত বাস আমদানি করছে গ্রুপটি। দেশে প্রায় ৭ হাজার প্রতিষ্ঠানের কাছে এসব যানবাহন সরবরাহ করে ইফাদ অটোস।
বর্তমানে তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে রয়েছে ইফাদ মাল্টিপারপাস লিমিটেড, ডায়না ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড, ইফাদ এগ্রো কমপ্লেক্স লিমিটেড, ইফাদ মাল্টি প্রোডাক্টস লিমিটেড প্রভৃতি।
এ বছর দেশে সবচেয়ে বড় গাড়ি সংযোজন কারখানা চালু করেছে ইফাদ গ্রুপ। বছরে ১০ হাজার গাড়ি সংযোজনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছে তারা।
ইফাদ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ইফতেখার আহমেদ টিপু। এ গ্রুপের বর্তমান চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৪৯ সালে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় জš§গ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশ অটোমোবাইলস অ্যাসেম্বলারস অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএএএমএ) প্রেসিডেন্ট। দৈনিক নবরাজ নামে একটি জাতীয় পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা ইফতেখার আহমেদ। তিনিই পত্রিকাটির বর্তমান সম্পাদক ও প্রকাশক। নানা বিজনেস অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছেন। সমাজসেবক হিসেবে তার নামডাক রয়েছে। বিশেষ করে প্রতিবন্ধী মানুষের শিক্ষাব্যবস্থায় তার ভূমিকা প্রশংসনীয়। শিক্ষার পাশাপাশি কর্মমুখী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে সমাজের অবহেলিত মানুষের জন্য কাজ করে চলেছেন ইফতেখার আহমেদ টিপু। লেখক হিসেবেও তার সুনাম রয়েছে।
খাদ্যশিল্পে বিনিয়োগ করেছে ইফাদ গ্রুপ। ২০০৩ সাল থেকে আটা, ময়দা, সুজি, লবণ উৎপাদন করে আসছে তাদের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ইফাদ মাল্টি প্রোডাক্টস লিমিটেড। শিল্পখাত থেকে শুরু করে সাধারণ ভোক্তাদের জন্যও তারা লবণ উৎপন্ন করে থাকে। ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলার রুহিতপুরে তাদের লবণের কারখানা অবস্থিত। আটার কারখানা রয়েছে ঢাকার আশুলিয়ায়। দিনে ১৬০ টন আটা উৎপাদনে সক্ষম এ কারখানা।
ঢাকার সাভার উপজেলায় ইফাদ গ্রুপ গড়ে তুলেছে একটি শিল্প পার্ক। ১০ একর জায়গার ওপর স্থাপন করা হয়েছে এ পার্ক। ইনস্ট্যান্ট নুডল্স, স্টিক নুডল্স, নানা রকম বিস্কুট, কুকিজ, মসলা, বোতলজাত পানি প্রভৃতি উৎপন্ন হয় এ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে। ভারত, শ্রীলংকা, আফগানিস্তান, ভিয়েতনাম ও ইরান থেকে মসলার কাঁচামাল আমদানি করে তারা। তাদের প্রস্তুতকৃত মসলার ব্র্যান্ডের নাম মহারাজ। দেশের চাহিদা মিটিয়ে ভারত, মালদ্বীপ, ভুটান, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, ওমান, সৌদি আরব, ইতালি, ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি হয় ইফাদ মাল্টি প্রোডাক্টসের পণ্য।
কৃষিখাতেও বিনিয়োগ করেছে গ্রুপটি। ইফাদ এগ্রো কমপ্লেক্স লিমিটেডের কারখানা ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায়। এটি স্থাপন করা হয় ২০০৪ সালে। সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে উন্নতমানের মৎস্য হ্যাচারি। প্রতি মৌসুমে পাঁচ হাজার কেজি রেণু (মাছের ডিম) উৎপাদনে সক্ষম এ হ্যাচারি। বছরে ১০ মিলিয়ন পোনা উৎপাদন হয় এখানে। প্রতিবছর পনেরশ টন মাছচাষ করা হয় এ হ্যাচারিতে। দেশের মৎস্যখাতে ভূমিকা রাখার জন্য ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় ও থাই ফিশ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সনদ অর্জন করেছে ইফাদ অ্যাগ্রো কমপ্লেক্স। দিনে ২৫০ টন পোলট্রি ও ফিশ ফিড তৈরির চেষ্টা করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। অদূর ভবিষ্যতে পোলট্রি হ্যাচারি স্থাপনের ইচ্ছা রয়েছে তাদের।
প্রযুক্তিখাতে বিনিয়োগ করেছে ইফাদ গ্রুপ। দি ডিজিটাল প্রফেসর লিমিটেড নামে তাদের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অনলাইন মার্কেটিংসহ ওয়েবসাইট ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট, কনটেন্ট তৈরি ও উন্নয়ন, গ্রাফিক ডিজাইন, ব্র্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কনসালট্যান্সি, সামাজিক যোগাযোগ ব্যবস্থাপনা, মোবাইল অ্যাপ ও উন্নয়ন, ফিল্ম প্রোডাকশন প্রভৃতি সেবা দিয়ে থাকে এ ডিজিটাল প্রফেসর। এটি প্রতিষ্ঠা করেন ইফতেখার আহমেদ টিপুর কনিষ্ঠ সন্তান তাশফীন আহমেদ। তিনি ইফাদ গ্রুপের পরিচালনা পর্ষদেও রয়েছেন।
ইফতেখার আহমেদ টিপুর তিন সন্তান ইফাদ গ্রুপের সঙ্গে জড়িত। বড় ছেলে তানভীর আহমেদ প্রতিষ্ঠানটিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। মেজ ছেলে তাসকীন আহমেদ ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টরের দায়িত্বে আছেন।
Add Comment