দেশের পোশাক শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। সোমবার রাজধানী উপকণ্ঠে সাভারের আশুলিয়ায় তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিতে এক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচজন। একই দিন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সঙ্গে শ্রমিক নেতাদের বৈঠকের কমিটির প্রধান ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সাংবাদিকদের বলেছেন, সাম্প্রতিক অতীতে বাংলাদেশে যে উন্নয়ন হয়েছে, শ্রমজীবীরা তাদের ন্যায্য হিস্যা পাননি। শ্রমিকদের মজুরি যথোপযুক্ত নয়। সেই সঙ্গে তাদের স্বার্থ সুরক্ষায় বাসস্থান, মাতৃত্বকালীন সুবিধাসহ যেসব ব্যবস্থা থাকার কথা, সেগুলোও যথেষ্ট নয়।
রানা প্লাজা ধস ও তাজরীন ফ্যাশনস অগ্নিকাণ্ড বহির্বিশ্বে আমাদের সুনাম শুধু নষ্ট করেনি, ব্যবসায়িক ক্ষতিরও কারণ হয়েছে। ক্রয়াদেশ প্রত্যাহার কিংবা বিকল্প বাজার খুঁজে নিয়েছে ক্রেতাদের অনেকে। দুর্ঘটনাগুলোর কারণে আমাদের পোশাক খাতে ‘নাক গলানো’র সুযোগও পেয়েছে ক্রেতারা। অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স জোট করে আমাদের শ্রমিকদের নিরাপত্তা, কারখানা ভবন সংস্কার ও কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণে কাজ করেছে দীর্ঘদিন। তবে বলা যায়, এসব ভালোভাবেই সামাল দিয়েছেন পোশাক মালিকরা। পরিবেশবান্ধব ও কর্মপরিবেশ বিবেচনায় আমাদের পোশাক কারখানা বিশ্বসেরা হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে এখন। ক্রেতাদের আস্থা ফিরিয়ে আনতেও সক্ষম হয়েছে খাতটি।
দুর্ভাগ্যজনক হলো সাম্প্রতিক সময়ে পোশাক খাতে এক প্রকার অস্থিরতা বিরাজ করছে। শ্রমিকরা বেতন বৃদ্ধিসহ সুযোগ-সুবিধা চেয়ে নানা কর্মসূচি পালন করছেন। তাদের ন্যায্য ও যৌক্তিক দাবিকে আমরা সমর্থন করি। কিন্তু দাবি আদায়ে অনড় অবস্থান কাম্য নয়। আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতেই মালিক-শ্রমিকদের মতপার্থক্য কমিয়ে আনতে হবে। অবশ্যই মনে রাখতে শিল্প টিকে থাকলে তারা চাকরি করতে পারবেন। বাস্তবতা বিবেচনা না করে পোশাক শ্রমিকরা বেশি দাবি করলে অবস্থা জটিলই হবে।
ন্যূনতম মজুরি যতটুকু বাড়বে, সরকারের কাছে সেটুকু সুবিধাও চেয়েছেন তারা। সেজন্য নতুন করে কর হ্রাস বা নগদ সহায়তা চেয়েছেন। সরকার অবশ্য এরই মধ্যে এ খাতে উৎসে ও করপোরেট কর কমিয়েছে।
ন্যূনতম মজুরি নিয়ে পারস্পরিক দূরত্ব কমিয়ে আনতে উভয় পক্ষকে নমনীয় হতে হবে। মালিকপক্ষ যথাসময়ে ন্যায্য বেতন, ভাতা, ভবিষ্য তহবিলসহ সামাজিক সুরক্ষার অন্যান্য উপকরণ প্রভৃতি পরিশোধের পাশাপাশি কর্মপরিবেশ, বিশুদ্ধ পানিসহ শ্রম আইনে বর্ণিত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করবেন বলেও প্রত্যাশা। শ্রমিকরাও দায়িত্ব পালনে যত্নবান থাকবেন আশা করি। শ্রম আইন অনুযায়ী পাঁচ বছর অন্তর মজুরিকাঠামো পর্যালোচনার বিধান রয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারকেও যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।
রপ্তানির মাধ্যমে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার ৮৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। এটি এগিয়ে নিতে হবে দেশের স্বার্থেই। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ খাতকে এগিয়ে নেয়ার দায়িত্ব সবার।