Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 5:35 pm

যৌতুক প্রথা বন্ধে সচেতন হওয়া দরকার

যৌতুক বা পণ হলো সংস্কৃত থেকে উৎসারিত বাংলা শব্দ। প্রাচীন হিন্দুসমাজে এর উৎপত্তি ঘটে। তৎকালীন হিন্দুসমাজে এটি ছিল কন্যাপণ (বরপক্ষ কর্তৃক কনেকে দেয়া)। হিন্দু সমাজে নারীরা সম্পদের উত্তরাধিকারী হতো না। এছাড়া কনেপক্ষ বিয়ের মাধ্যমে তাদের একজন সদস্যকে হারাচ্ছেন, এর ক্ষতিপূরণ হিসেবে কনের পরিবারকে বরপক্ষ কর্তৃক বিভিন্ন সম্পদ প্রদান করা হতো। কালক্রমে এটি বরপণে (কনেপক্ষ কর্তৃক বরকে দেয়া) রূপ নেয় এবং একটি সামাজিক ব্যাধি হিসেবে দেখা দেয়। মুসলিম ও অন্যান্য সমাজেও এটি মহামারি রূপে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে বাংলাদেশে যৌতুক একটি প্রথায় পরিণত হয়েছে এবং অন্যতম জাতীয় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ মুসলিম। ইসলামে নিষেধাজ্ঞা থাকার পরেও সাম্প্রতিক সময়ে দেশের মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপকভাবে যৌতুকের হীন প্রতিযোগিতা লক্ষণীয়।

দেশীয় আইনে যৌতুক গ্রহণ একটি অপরাধ এবং অন্যায় কাজ। ১৯৮০ সালে বাংলাদেশে যৌতুক নিরোধ আইন প্রণীত হয়। এরপর দুই দফায় সংশোধন করে ২০১৮ সালে তা হালনাগাদ করে যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৮ নামে নতুন আইন পাস করা হয়।

আইনে বলা হয়েছে, ‘যৌতুক’ অর্থ বিবাহের এক পক্ষ কর্তৃক অন্য পক্ষের কাছে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের পূর্বশর্ত হিসাবে বিবাহের সময় বা তৎপূর্বে বা বৈবাহিক সম্পর্ক বিদ্যমান থাকাকালে, বিবাহ অব্যাহত রাখিবার শর্তে, বিবাহের পণ বাবদ, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে, দাবিকৃত বা বিবাহের এক পক্ষ কর্তৃক অপর পক্ষেকে প্রদত্ত বা প্রদানের জন্য সম্মত কোনো অর্থ-সামগ্রী বা অন্য কোনো সম্পদ, তবে মুসলিম ব্যক্তিগত আইন (শরিয়াহ্) প্রযোজ্য হয় এমন ব্যক্তিগণের ক্ষেত্রে দেনমোহর বা মোহরানা অথবা বিবাহের সময় বিবাহের পক্ষগণের আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব বা শুভাকাক্সক্ষী কর্তৃক বিবাহের কোনো পক্ষকে প্রদত্ত উপহারসামগ্রী ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবে না। যৌতুক দাবি করার দণ্ড- যদি বিবাহের কোনো এক পক্ষ, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে, বিবাহের অন্য কোনো পক্ষের নিকট কোনো যৌতুক দাবি করেন, তাহা হইলে উহা হইবে এই আইনের অধীন একটি অপরাধ এবং তজ্জন্য তিনি অনধিক ৫ (পাঁচ) বছর কিন্তু অন্যূন এক বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডের দণ্ডনীয় হবেন।

বিয়ের ক্ষেত্রে যৌতুক চাওয়া, দেওয়া কিংবা গ্রহণ করার কোনো সুযোগ নেই। তথাপি হেন কাজ থেকে মানুষকে বিরত রাখা সম্ভব হচ্ছে না। যৌতুকের কারণে প্রতি বছর হাজারও নারী শ্বশুরবাড়িতে নির্যাতনের শিকার হয়। এমনকি এভাবে অনেক নারী খুন হয়ে যায়। আবার অনেকে আত্মহননের পথ বেছে নেয়। এভাবে পরিবার ও সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।

যৌতুক থেকে চিরতরে পরিত্রাণের জন্য সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে সরকার পুরো দেশে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে। আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে যেন কেউ বেরিয়ে যেতে না পারে, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।

মাহমুদুল ইসলাম মারুফ শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়