হুমাযুন কবীর মানিক, রংপুর: রংপুরের গংগাচড়া উপজেলার চেংমারী ইউনিয়নের পশ্চিম মান্দ্রাইন গ্রামে বেগুন চাষ করে ভাগ্য উন্নয়ন করেছেন অনেকে। এ গ্রামে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে শুধু বেগুনের চাষ। এর আশপাশে আরও বেশ কয়েকটি গ্রামে ব্যাপকহারে আবাদ হচ্ছে বেগুনের। ইতোমধ্যে লম্বা চিকন বেগুন স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সরবরাহ করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এ এলাকায় উৎপাদিত বেগুন সব জায়গায় চেংমারী বেগুন বলে ব্যাপক পরিচিত। এ বছর তেমন রোগ বালাই না হওয়ায় ভালো ফলন আশা করছেন বেগুন চাষিরা।
বেগুন চাষি প্রমথ চন্দ্র সরকার এ বছর ৪০ শতক জমিতে স্থানীয় লম্বা চিকন জাতের বেগুন আবাদ করেছেন। আষাঢ় মাসে বেগুনের গাছ রোপণ করে আশ্বিন মাস থেকে বেগুন উত্তোলন শুরু করেছেন। এখন প্রতি সপ্তাহে ১০ থেকে ১৩ মণ পর্যন্ত বেগুন উত্তোলন করছেন। তিনি প্রতি মণ বেগুন বিক্রি করছেন প্রকার ভেদে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়। শুরুর দিকে এক হাজার ৫০০ থেকে করে এক হাজার ৬০০ টাকা বিক্রি করেছেন। এ পর্যন্ত ৫০ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করেছেন। আরও ৪০ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন। গত বছর বৃষ্টিতে তার বেগুনের জমি নষ্ট হয়েছিল।
বেগুন চাষি জগদীশ চন্দ্র সরকার বলেন, পশ্চিম মান্দ্রাইন গ্রামে প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে বেগুনের আবাদ হয়েছে। এ ছাড়া গংগাচড়া উপজেলায় ব্যাপকহারে কৃষকেরা বেগুন আবাদে ঝুঁকছেন। তিনি বলেন, গত বছর এ সময় প্রতি মণ বেগুনের দাম ছিল প্রকার ভেদে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা। গত বছর তিনি ৩৫ শতক জমিতে বেগুন চাষ করে বিক্রি করেছিলেন এক লাখ ৩৫ হাজার টাকা। এ বছর ৫০ শতক জমিতে বেগুন আবাদ করেছেন। এ পর্যন্ত ৭০ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করেছেন। এবার ফলন ভালো হয়েছে।
বেগুন চাষি আবুল মাস্টার এ বছর ১০০ শতক জমিতে বেগুনের আবাদ করেছেন। প্রতিদিন এক মণের বেশি বেগুন উত্তোলন করছেন। তিনি জানান আরও এক মাস গাছ থেকে বেগুন সংগ্রহ করবেন। তিনি বলেন, রোগ বালাই যদি ব্যাপকভাবে আক্রমণ না করে বর্তমান বেগুনের দাম যদি অব্যাহত থাকে তাহলে ভালো লাভ হবে।
এদিকে রংপুর সদর উপজেলার খটখটিয়া এবং গংগাচড়া উপজেলার চেংমারী ইউনিয়নসহ আশপাশের উৎপাদিত বেগুন খেতে সুম্বাদু এবং ব্যাপক পরিচিত হওয়ায় স্থানীয় ব্যবসায়ীর পাশাপাশি দূর থেকে ব্যবসায়ীরা জমি থেকে বেগুন কেনার জন্য ভিড় করেন। এতে কৃষকেদের উৎপাদিত বেগুন বিক্রির জন্য হাট-বাজারে নিয়ে যাওয়ার খরচ সাশ্রয় হচ্ছে।
পশ্চিম মান্দ্রাইন গ্রামে বেগুন কিনতে আসা ব্যবসায়ী মো. নুরুন নবী বলেন, গংগাচড়াসহ রংপুর জেলার প্রধান সিটি করপোরেশন কাঁচাবাজারে চেংমারী বেগুনের ব্যাপক চাহিদা আছে। তাই জমিতে এসেছি তুলনামূলক কমদামে দেখেশুনে বেগুন নিতে। তাছাড়া এখন সব ব্যবসায়ী কাঁচা সবজি কেনার জন্য কৃষকের জমিতে যাওয়া নিয়মে পরিণত হযেছে। তিনি বলেন, প্রতি কেজি বেগুন ১৬ থেকে ১৭ টাকায় কৃষকদের কাছ থেকে কিনে ২০ টাকা দরে খুচরা বিক্রেতারদের মাঝে বিক্রি করেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের চেয়ে এ বছর প্রায় ২০ হেক্টর বেশি জমিতে বেগুনের আবাদ হয়েছে। এ বছর ১০০ হেক্টর জমিতে বেগুনের আবাদ হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, সারা বছরেই বেগুনের আবাদ হয়। বর্তমানে খরিপ মৌসুমের বেগুনের ফলন বিক্রি করছে কৃষকেরা। শীত মৌসুমের আগাম বেগুন হওয়ায় কৃষকেরা দাম ভালো পাচ্ছেন। তিনি বলেন, রোগ-বালাইয়ের তেমন কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষকেরা ভালো ফলন পাচ্ছেন।
Add Comment