প্রতিনিধি, রংপুর: ভোট উৎসবের কারণে বই উৎসবে ভাটা পড়বে এমন ভাবনা চেপে বসেছিল অভিভাবকদের। তবে সেই ধারণা বদলেও দিয়েছে সরকার। প্রতি বছরের মতো এবারের নতুন বছরে নতুন বইয়ে উৎসবে মাতবে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা। পহেলা জানুয়ারি বই উৎসবের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে রংপুর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এরই মধ্যে বিভাগের প্রতিটি বিদ্যালয়ে নিজ উদ্যোগে পাঠ্যবই পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে নানা শঙ্কা থাকলেও প্রাথমিক অধিদপ্তর বলছে, চাহিদার শতভাগ বই পেয়েছে তারা। তবে মাধ্যমিকে চাহিদার ৬০ শতাংশ বই মিলেছে। এখন তাদের সময় কাটছে বিদ্যালয়গুলোয় বই পাঠানোর ব্যস্ততায়। উদ্দেশ্য একটাই বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীরা যাতে নতুন বই স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গে নিতে পারেন নতুন বইয়ের ঘ্রাণ।
সরেজমিন রংপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় গিয়ে দেখা গেল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ চাহিদাপত্র অনুযায়ী বই সরবরাহের দায়িত্ব নিয়েছেন, কেউবা করছেন বাইন্ডিংয়ের কাজ। শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে বই সরবরাহের পরেই এমন ব্যস্ততা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। সারাদেশের ন্যায় রংপুর অঞ্চলেও পহেলা জানুয়ারি থেকে বই বিতরণ উৎসব শুরু করতেই তাদের এই প্রচেষ্টা।
এদিকে নির্বাচন ঘিরে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন কর্মসূচির কারণে যথাসময়ে বই পৌঁছানো সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন খোদ শিক্ষকরাও। তবে সব বাধা কাটিয়ে এবারই প্রথমবার নিজ উদ্যোগে প্রতিটি বিদ্যালয়ে বই পৌঁছে দিচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এতে খুশি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আর অভিভাবকরা বিষয়টি জেনে ফেলছেন স্বস্তির নিঃশ্বাস, শিক্ষার্থীরাও আছে আনন্দে।
জানা গেছে, মাধ্যমিক পর্যায়ে এখনও শতভাগ বই আসেনি। ফলে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির অনেক শিক্ষার্থীই বছরের প্রথম দিকে নতুন বইয়ের ঘ্রাণ নাও পেতে পারেন। তবে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ শতভাগ বই পেয়েছে। আর মাধ্যমিক স্তরে বই মিলেছে ৬০ শতাংশ। মাধ্যমিকে রংপুর অঞ্চলে মোট চাহিদা ছিল ২ কোটি ৭৭ লাখ ৪৩ হাজার ৫৪৩ কপি আর এখন পর্যন্ত বিদ্যালয়গুলোয় ১ কোটি ১৩ লাখ ৪ হাজার ২৫৫ কপি বই পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
মাধ্যমিক উচ্চশিক্ষা বিভাগ সূত্র বলছে, রংপুর বিভাগে ৩ হাজারে বেশি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৪ লাখের বেশি। সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ১ জানুয়ারি বই দেয়ার কথা থাকলেও, মাধ্যমিকের অনেক বই এখনও আসেনি। তবে মাধ্যমিক বিভাগীয় শিক্ষা কর্মকর্তা বলছেন বই আসছে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছে সময়মতো বই পৌঁছে যাবে।
প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের উপ-পরিচালক মো. মুজাহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, প্রাথমিকে চাহিদার সব বই এসেছে। পহেলা জানুয়ারি উৎসবমুখর পরিবেশে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে বই বিতরণ করা হবে।
এদিকে রংপুর বিভাগে মাধ্যমিক পর্যায়ে বইয়ের চাহিদা ২ কোটি ৭৭ লাখ ৪৩ হাজার ৫৪৩ পিস। এনসিটিবি কর্তৃক বরাদ্দ মিলেছে ২ কোটি ৫৬ লাখ ৬৯ হাজার ৬৮৫। এর মধ্যে এনসিটিবি কর্তৃক প্রাপ্ত বইয়ের সংখ্যা ১ কোটি ৪৫ লাখ ৯৬৮ পিস। যার মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে ১ কোটি ১৩ লাখ ৪ হাজার ২৫৫ পিস বই। মোট বই প্রাপ্তির শতকরা হার ৬০ শতাংশ ছাড়িয়েছে।
রংপুর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগীয় উপপরিচালক শফিকুল ইসলাম জানান, বিভাগের মোট চাহিদার মধ্যে মাধ্যমিক পর্যায়ের ৬০ শতাংশ বই এসেছে। বাকি বই আসছে। সময়মতো সব বই শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে যাবে। নতুন বছরের শুরুতেই বই বিতরণের যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।