রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন আজ

শেয়ার বিজ প্রতিনিধি, রংপুর: রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচন আজ। প্রচারণা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পুরো রসিক এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দিয়েছে জেলা পুলিশ ও নির্বাচন কমিশন। গতকাল বুধবার নির্বাচনী সরঞ্জাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। নগরীর শালবন সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজ কেন্দ্রে বসানো হয়েছে ইভিএম মেশিন।

রসিক নির্বাচনে মেয়র পদে সাতজন এবং কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ২৭৬ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মেয়র প্রার্থীরা হলেন আওয়ামী লীগের সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু (নৌকা), জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা (লাঙ্গল), বিএনপির কাওসার জামান বাবলা (ধানের শীষ), ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের এটিএম গোলাম মোস্তফা (হাতপাখা), বাসদের আবদুল কুদ্দুস (মই), এনপিপির সেলিম আক্তার (আম), স্বতন্ত্র প্রার্থী আসিফ শাহরিয়ার (হাতী)।

গতকাল নির্বাচনী সরঞ্জাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। ১৯৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ১০৮টিকে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সব প্রস্তুতি সম্পন্নের কথা জানিয়েছেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জিএম সাহাতাব উদ্দিন।

রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে নগরীতে ১৮ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বর্ডার গার্ডের সদস্যরা টহল দিচ্ছেন ৩৩টি ওয়ার্ডে। প্রায় চার লাখ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। বহিরাগতদের ইতোমধ্যে নির্বাচনী এলাকা ত্যাগ করতে বলা হয়েছে। বিজিবি মোতায়েনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রংপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু রাফা মোহাম্মদ আরিফ।

রংপুর জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, নগরীর শালবন সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজ কেন্দ্রে ইভিএম মেশিন বসানো হয়েছে। ইভিএম মেশিনে দুই হাজার ৪৪ ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এছাড়া সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজ, সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং লায়ন্স স্কুল ও কলেজ ভোটকেন্দ্র।

অপরদিকে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে গত সোমবার মধ্যরাতের পর নির্বাচনী এলাকার বহিরাগতদের অবস্থান ও চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। গতকাল বুধবার মধ্যরাত থেকে সব ধরনের যন্ত্রচালিত বাহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা জানানো হয়েছে নির্বাচন কমিশনের পরিপত্রে। নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা যানবাহনের মধ্যে রয়েছে, বেবিট্যাক্সি, অটো রিকশা, ট্যাক্সি ক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার, বাস, ট্রাক ও টেম্পো।

এদিকে নিয়মিত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরা মাঠে নেমেছেন। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকেও তিনটি ওয়ার্ডে একজন করে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। খুলনার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোস্তফা ফারুককে প্রধান সমন্বয়কারী করে ১১ জন ইসির পর্যবেক্ষক মাঠে থাকবেন। প্রতিটি কেন্দ্রে ২৪ জন করে পুলিশ ও আনসার সদস্য মোতায়েন থাকবেন। ৩৩ জন নির্বাহী ও ১১ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবেন। আট সদস্যের র‌্যাবের ৩৩টি দল কাজ করবে।

গতকাল বুধবার সকালে রংপুর পুলিশ লাইন্স মাঠে নির্বাচনী কাজে দায়িত্বে থাকা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে ছিলেন রসিক নির্বাচন রিটার্নিং কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র সরকার, রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক, জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান ও পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান। ব্রিফিং শেষে প্রতি কেন্দ্রের সদস্যরা তাদের নির্বাচনী সরঞ্জাম নিয়ে নিজ কেন্দ্রে রওনা দেন।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জিএম সাহাতাব উদ্দিন জানান, নিরাপত্তার চাদরে রসিক এলাকাকে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন পরিচালনাকারী প্রায় সাড়ে তিন হাজার প্রিজাইডিং ও সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার মাঠে থাকবেন।

রিটার্নিং কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র সরকার জানান, নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবিসহ নিরাপত্তাবাহিনীর সাত হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। নির্বাচন উপলক্ষে চার স্তরের নিরাপত্তা থাকবে রসিক এলাকায়।

রংপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল এ) সাইফুর রহমান জানান, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে জেলা পুলিশের মোবাইল টিম, স্ট্রাইকিং ফোর্স, সাদা পোশাকে পুলিশসহ র‌্যাব মাঠে থাকবে। এছাড়া কেন্দ্রে আনসার বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে পুলিশ সদস্যরা থাকবেন। নগরীতে যানবাহন চলাচলে শিথিলতা জারি করা হয়েছে।

রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক জানান, নিরাপত্তা নিয়ে কোনো সংশয় নেই। ভোটাররা নির্বিঘেœ ভোট দিয়ে বাসায় ফিরতে পারবেন। সিটির ভোটার নয়, এমন বহিরাগতদের সিটির বাইরে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। হোটেল-মোটেলে যাতে কোনো ধরনের বহিরাগত রাত যাপন করতে না পারেন সেজন্য চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, এবার রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় মোট ভোটার তিন লাখ ৯৩ হাজার ৯৯৪ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার এক লাখ ৯৭ হাজার ৬৩৮ জন ও পুরুষ ভোটার এক লাখ ৯৬ হাজার ৩৫৬ জন।

এদিকে রংপুর সিটি করপোরেশনের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা বলেছেন, সেখানে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হবে। গতকাল রাজধানীর নির্বাচন ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

এ সময় তিনটি ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করা হবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, সম্পূর্ণ নিরাপদ হলে একটি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) মেশিন ব্যবহার করা হবে। নতুন ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নিশ্চিত হওয়া যাবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম, শাহাদাত হোসেন চৌধুরী এবং ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।

 

 

 

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০