কাজী সালমা সুলতানা: ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা দিলে রাজধানী ঢাকায় প্রচণ্ড বিক্ষোভ শুরু হয়। স্বতঃস্ফূর্তভাবে শহরের সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। এদিন ঢাকা স্টেডিয়ামে বিসিসিপি ও আন্তর্জাতিক একাদশের মধ্যে ক্রিকেট ম্যাচ ভণ্ডুল হয়ে যায় এবং দর্শকরা স্টেডিয়াম থেকে বের হয়ে মিছিলে অংশগ্রহণ করে।
মিছিলগুলো আওয়ামী লীগপ্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছ থেকে নির্দেশ লাভের জন্য মতিঝিলের হোটেল পূর্বাণীর দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এ সময় হোটেল পূর্বাণীতে আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারি পার্টির বৈঠক চলছিল। ঢাকায় বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ঢাকা থেকে অভ্যন্তরীণ ও আন্তঃদেশীয় গন্তব্যের বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করায় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতারা পৃথক বিবৃতিতে তীব্র প্রতিবাদ জানায়। হোটেল পূর্বাণীতে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগপ্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় পরিষদ অধিবেশন স্থগিত ঘোষণার কঠোর প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, বাংলার জনগণ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছে।
তিনি এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সর্বাত্মক আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে ২ মার্চ ঢাকা শহরে, ৩ মার্চ সারা বাংলায় হরতাল পালন এবং ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনসভা করার ঘোষণা দেন।
সন্ধ্যার পর বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে মওলানা ভাসানীর সঙ্গে আলোচনার জন্য সন্তোষে প্রতিনিধি পাঠান। রাতে ৩২ নম্বর ধানমন্ডিতে তার বাসভবনে উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে করেন।
এদিন পাকিস্তান মুসলিম লীগের প্রধান আবদুল কাইয়ুম খান প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার ঘোষণাকে ‘একমাত্র সঠিক সিদ্ধান্ত’ হিসেবে অভিহিত করে স্বাগত জানান। এর প্রতিবাদে তার দলের মহাসচিব খান এ. সবুর দলের সদস্যপদ ও সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগের কথা ঘোষণা করেন।
রাতে প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান ‘খ’ অঞ্চলের অর্থাৎ পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক শাসনকর্তা লে. জেনারেল সাহেবজাদা এম. এয়াকুব খানকে প্রদেশের বেসামরিক শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন।
গভীর রাতে ‘খ’ অঞ্চলের সামরিক প্রশাসক এক নতুন আদেশ জারি করে সংবাদপত্রে দেশের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে কোনো খবর বা ছবি প্রকাশ না করার নির্দেশ দেন।
জুলফিকার আলি ভুট্টোর পিপলস পার্টি এদিন পশ্চিম পাকিস্তানে যে সাধারণ ধর্মঘট পালনের আহ্বান করেছিল, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে সন্ধ্যায় তা প্রত্যাহার করে নেয়।
তথ্যসূত্র: স্বাধীনতার দলিল; মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর