কাজী সালমা সুলতানা: ১৫ মার্চ, ১৯৭১। এদিনও সারা বাংলায় অফিস-আদালতে পূর্ণ কর্মবিরতি চলে। রাজধানী ঢাকায় দিনব্যাপী সভা ও শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। সরকারি ও বেসরকারি ভবনের শীর্ষে এবং যানবাহনে কালো পতাকা ওড়ে।
আওয়ামী লীগের নির্দেশানুযায়ী আন্দোলন ও প্রশাসন চলতে থাকে। ছাঁটাই ও কোর্ট মার্শালের ভয় উপেক্ষা করে সামরিক প্রতিষ্ঠানের সহস াধিক বেসামরিক কর্মচারী কাজে যোগদানে বিরত থাকেন।
এদিন প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান কড়া নিরাপত্তার মধ্যে করাচি থেকে ঢাকায় আসেন। বিমানবন্দরে সামরিক গভর্নর লে. জেনারেল টিক্কা খান তাকে স্বাগত জানান। এ সময় কোনো সাংবাদিক ও বাঙালিকে বিমানবন্দরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি।
এদিন কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ বঙ্গবন্ধুর অনুরোধে ঢাকার চেকপোস্টগুলো তুলে নেয়। পরিষদ এদিন বায়তুল মোকাররম চত্বরে সমাবেশ করে। এতে বাংলাদেশ রক্ষায় সব নাগরিককে অস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানানো হয়।
খুলনার হাদিস পার্কের জনসভায় বাংলা জাতীয় লীগপ্রধান আতাউর রহমান খান বলেন, বাংলার প্রতিটি মানুষ আজ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পেছনে একতাবদ্ধ। তিনি বলেন রেডিও, টিভি, ইপিআর, পুলিশবাহিনী, সেক্রেটারিয়েটসহ সব প্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশ মেনে চলছে।
রাতে ঢাকায় প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ বিবৃতির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ঘোষিত অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের কথা ব্যাখ্যা করে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে জনগণের নিরঙ্কুশ সাড়া পাওয়া গেছে।
তাজউদ্দীন আহমদ বলেন, সারাদেশে এখন এক ঐতিহাসিক অভ্যুত্থান ঘটছে।
পাকিস্তানের সাবেক স্পিকার আব্দুল জাব্বার খান শেখ মুজিবের প্রতি সমর্থন জানান।
পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলি ভুট্টো করাচিতে সংবাদ সম্মেলনে নতুন দাবি উত্থাপন করে বলেন, কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ ও পিপলস পার্টির সমন্বয়ে কোয়ালিশন সরকার গঠন করতে হবে। তিনি বলেন, ‘সংখ্যাগরিষ্ঠতাভিত্তিক সরকার পাকিস্তানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।’ করাচিতে অন্য এক জনসভায় কয়েকজন প্রখ্যাত রাজনৈতিক নেতা এই দাবির প্রতিবাদ করেন।
আগের দিনে সমাবেশে জহুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘ব্যারাকের বাসিন্দাদের ব্যারাকের মাঝেই থাকা দরকার।’ সন্ধ্যায় ‘চট্টগ্রাম শিল্প-সাহিত্য পরিষদ’ শিল্পীরা অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিনের নাটক ‘এবারের সংগ্রাম’ মঞ্চস্থ করে। এদিন রাতে হালিশহরের চুনা ফ্যাক্টরির মোড়ে (বর্তমানে আর্টিলারির মোড়) কয়েকজন বিহারি তিন বাঙালি যুবককে প্রকাশ্যে জবাই করে।
এদিন কবি সুফিয়া কামালের সভাপতিত্বে তোপখানা রোডে নারীদের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বেতার ও টিভি শিল্পীরা দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন। উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সদস্যরা ভ্রাম্যমাণ ট্রাক নিয়ে গণসংগীত ও পথনাটক পরিবেশন করেন। পাকিস্তান মেডিকেল সমিতি পূর্বাঞ্চল শাখা ও সরকারি চিকিৎসক সমিতির যৌথ উদ্যোগে শহিদ মিনারে চিকিৎসকদের এক সমাবেশে চলমান সংগ্রামের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করা হয়।
তথ্যসূত্র: মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও তৎকালীন সংবাদপত্র