মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান রক্ত। এর মাধ্যমে প্রাণীদেহে অক্সিজেনসহ যাবতীয় পুষ্টি উপাদান পৌঁছে থাকে। রক্ত ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না। অথচ প্রতিনিয়ত বিভিন্নভাবে রক্ত দূষিত হচ্ছে। খাবার, বায়ু, পরিবেশ প্রভৃতি এজন্য দায়ী। রক্ত কোনো জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলে তা সম্পূর্ণ শরীরে ছড়িয়ে পড়ে, বিভিন্ন রোগ বাসা বাঁধে শরীরে। তাই রক্তকে টক্সিন কিংবা ক্ষতিকর উপাদান থেকে মুক্ত করা প্রয়োজন। রক্ত থেকে ক্ষতিকর বিষাক্ত পদার্থ কিংবা টক্সিনকে বের করে দিতে সাহায্য করে কিছু খাবার। দেখে নিন এর কয়েকটি
রসুন
রসুনে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও খনিজ পদার্থ থাকায় ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমিয়ে রক্ত বিশুদ্ধ করতে সাহায্য করে। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া থেকে শরীরকে বাঁচায়। তাই প্রতিদিন এক কোয়া রসুন খান।
গাজর
গাজরে রয়েছে গ্লটেথিয়ান নামে একটি উপাদান, যা এক ধরনের ক্লিনজিং এজেন্ট। এই উপাদানটি রক্তকে পরিষ্কার করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া ভিটামিন এ, বি, সি, কে-তে প্রচুর পটাশিয়াম রয়েছে। এই উপাদানগুলো শরীর থেকে টক্সিন বের করে দিতে সাহায্যে করে। তাই রক্ত পরিশুদ্ধ রাখতে বেশি করে গাজর খান। কাঁচা গাজর চিবিয়ে খেতে পারলে আরও ভালো। এছাড়া ত্বক, চুল ও চোখের জন্য খুব উপকারী এটি।
লেবু
লেবুর মধ্যে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা শরীরে উপস্থিত বিশেষ কিছু এনজাইমের কর্মক্ষতা বৃদ্ধি করে। এই এনজাইমগুলো শরীরে উপস্থিত টক্সিনগুলোকে দ্রবণীয় উপাদানে রূপান্তরিত করে। ফলে সেগুলো সহজে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। শরীরে টক্সিনের মাত্রা যত কমবে, তত রক্ত পরিশুদ্ধ থাকবে।
করলা
করলায় প্রচুর মাত্রায় ডিটক্সিফাইং এজেন্ট রয়েছে। তাই করলা জাতীয় তেঁতো খাবার খেলে রক্ত পরিশুদ্ধ হয়। নানা রোগের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচা যায়। এই খাবার খাওয়ার ফলে ব্রণের মতো ত্বকের প্রকোপ যেমন কমে, তেমনি নানা ধরনের জটিল শারীরিক সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
আপেল
আপেলে থাকে প্রচুর ভিটামিন, ফাইবার। এর রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। এটা কোলেস্টেরল কমিয়ে রক্ত পরিশুদ্ধ রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া হার্ট ও লিভার ভালো রাখে।
ব্রকলি
রক্ত থেকে ক্ষতিকর টক্সিন পদার্থ দূর করতে ব্রকলি পরিচিত একটি খাবার। এতে ভিটামিন সি, কেসহ ক্যালসিয়াম, ওমেগা থ্রি, ফ্যাটি অ্যাসিড, ফাইবার, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস প্রভৃতি রয়েছে। তাই রক্ত পরিশুদ্ধ রাখতে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ব্রকলি রাখার চেষ্টা করুন।
অ্যাভোকাডো
নানা পুষ্টিগুণসম্পন্ন ফল এটি। কোলেস্টেরল কমিয়ে দিতে অ্যাভোকাডোর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। ধমনীতে অনেক সময় ব্লক তৈরি হয়, তা দূর করতে বেশ কার্যকর এই ফলটি। এছাড়া এতে গ্লুটাথিয়ন নামক উপাদান রয়েছে, যা লিভারকে বিষাক্ত পদার্থ মুক্ত রাখতে সাহায্য করে।
বিট
ভিটামিন এ, বি, সি, কে, ফলিক এসিড ও প্রচুর আঁশ রয়েছে বিটে। এটি রক্ত থেকে টক্সিন দূর করে লিভারকে সুস্থ রাখে। এছাড়া বিট রক্ত স্বল্পতা দূর করে থাকে।
হলুদ
রক্তকে পরিষ্কার রাখতে হলুদের ভূমিকা অতুলনীয়। হলুদ অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে। এছাড়া ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস ও শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা কমানোর মতো বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে হলুদে। তাই রান্নায় ব্যবহার করুন কাঁচা হলুদ।
পুদিনা পাতা
অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল সমৃদ্ধ পাতা পুদিনা। নিয়মিত খেলে রক্ত পরিশোধিত হয়। তাই পুদিনা পাতা খাওয়ার চেষ্টা করুন।
লাল মরিচ
ভিটামিন এ, বি, সি, ই, কে যেমন আছে প্রচুর, তেমনি রয়েছে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম। এসব উপাদান রক্ত পরিশোধনে সাহায্য করে।
আদা
এতে কার্কিউমিন নামে এক ধরনের
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে, যা
রক্তকে পরিশুদ্ধ করার পাশাপাশি একাধিক রোগের প্রকোপ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই প্রতিদিন অল্প করে হলেও আদা খাওয়া উচিত।
শরীরে সঠিকভাবে রক্ত পরিবহন করার মাধ্যমে আমরা সুস্থ থাকি। যখন রক্ত পরিশুদ্ধ থাকে তখন শরীর সুন্দরভাবে কাজ করে। এতে লিভার ও কিডনিসহ গুরুত্বপূর্ণ সব অঙ্গ বিকল হওয়ার ঝুঁকি কমে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। মাথাব্যথা, ক্লান্তি, চুলকানিসহ বিভিন্ন চর্মরোগ থেকে মুক্তি মেলে।
শিপন আহমেদ
