রডে টনপ্রতি দাম বাড়ল ৪ হাজার টাকা

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: নির্মাণ মৌসুমের শুরুতে কয়েকদিনের ব্যবধানে আবারও ইস্পাত পণ্যের দাম বাড়ল টনপ্রতি চার হাজার টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্র্যাপের সংকটের কারণে দাম বেড়েছে। যদিও গত এক বছরের ইস্পাতের দাম জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধি, লকডাউন, বন্দরজট, ডলার দাম বৃদ্ধি এসব কারণে প্রায় ৪০ শতাংশ দাম বেড়েছে। সর্বশেষ দেশের বাজারে ডিজেল-কেরোসিনের দাম বৃদ্ধির কারণে আরেক দফা দাম বাড়বে। যার প্রভাব অনেক আবাসন ও উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে পড়েছে।

ইস্পাত কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, করোনাভাইরাসের প্রভাবে জাহাজ ও কনটেইনার ভাড়া বেড়েছে তিনগুণেরও বেশি। আবার বিভিন্ন দেশে লকডাউন ও করোনাভাইরাসের কারণে সংকুচিত হয় সরবরাহ ব্যবস্থা। এর মধ্যে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি, কাঁচামালের সংকট, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিসহ প্রভৃতি কারণে প্রতিনিয়ত বাড়ছে ইস্পাতের দাম। গতকাল বিএসআরএমের টনপ্রতি রড বিক্রি হয় ৭৮ হাজার ৫০০ টাকায়, একেএস ৭৭ হাজার ৫০০, জিপিএইচ ইস্পাত ৭৭ হাজার, কেএসআরএম ৭৬ হাজার ৫০০ এবং আরএসআরএম ৭৬ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। আগের সপ্তাহে টনপ্রতি বিএসআরএম রডের দাম ছিল ৭৫ হাজার টাকা, একেএস ৭৪ হাজার, জিপিএইচ ইস্পাত ৭৪ হাজার, কেএসআরএম ৭৩ হাজার, আরএসআরএম ৭১ হাজার টাকা। প্রতিনিয়ত ইস্পাত পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে নির্মাণকাজ পরিচালনায় হিমশিম খেতে হচ্ছে বেসরকারি উদ্যোক্তা ও ব্যক্তি মালিকানাধীন নির্মাণকাজ পরিচালনাকারীদের।

অন্যদিকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড এলাকায় শিপ ব্রেকিং অ্যান্ড রি-সাইক্লিং ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কয়েকজন জানান, বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের আগে আমদানিকৃত পুরোনো জাহাজ থেকে প্রাপ্ত প্রতিটন স্ক্র্যাপের দাম পড়ত ৪০০ ডলার। কিন্তু সংক্রমণের পর টনপ্রতি দাম ৩০০ ডলারে নেমে আসে। যদিও ২০২০ সালের নভেম্বরের দিকে টনপ্রতি ৩৭০-৩৮০ ডলারেও পুরোনো জাহাজ আমদানি হয়েছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারের পুরোনো জাহাজ টনপ্রতি ৬০০ ডলারের নিচে কোনো জাহাজ পাওয়া যাচ্ছে না। আর অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা থাকায় প্রতি টন মেল্টিং স্ক্র্যাপের দমি চলছে ৬৮০ ডলার। এর মধ্যে বিদেশি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কিছু দেশীয় এজেন্টরা গত কয়েক মাস ধরে কৌশলে জাহাজের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। একই জাহাজ একাধিক শিপব্রেকিং ইয়ার্ড মালিকের কাছে ভিন্ন ভিন্ন দামে প্রস্তাব দিয়ে অসুস্থ প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

বাড়ি নির্মাণে কাজ শুরু করেছেন মনিরুজ্জামান রিয়াদ। তিনি বলেন, কাজ শুরুর আগে হিসাব করে বাজেট ঠিক করলাম। আর কাজ শুরুর পর সব হিসাব পাল্টে গেল। বাজেটের চেয়ে ৫০ শতাংশ খরচ বাড়ছে। মূলত ইস্পাতের দাম প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাঁচ হাজার টাকা বেড়েছে। আবার ফিটিংসের দামও দ্বিগুণ। এভাবে হলে তো আমাদের চাপে পড়ে যেতে হবে। কিন্তু ব্যাংক তো এত কিছু বুঝবে না।

এ বিষয়ে আরেফিন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী কামাল আহমেদ বলেন, বর্তমানে প্রতি টন মেল্টিং স্ক্র্যাপ ৫৯ হাজার করে বিক্রি হচ্ছে। আর আন্তর্জাতিক বাজারের বুকিং রেটও ৬২০ ডলার চলছে। তবে দাম কমার তেমন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে জিপিএইচ ইস্পাতের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলমাস শিমুল বলেন, ‘বছর খানেক আগে টনপ্রতি স্ক্র্যাপের দাম ছিল ২৬০ ডলার, যা এখন ৫৭০ থেকে ৬০০ ডলার। একইভাবে ম্যাঙ্গানিজের দাম ছিল ৮০০ ডলার, এখন ১৮০০ ডলার। টনপ্রতি কনটেইনার ভাড়া ছিল ৪০-৪৫ ডলার, এখন ১০০ ডলারেও পাওয়া যাচ্ছে না। অর্থাৎ সবকিছু দ্বিগুণেরও বেশি। কিন্তু ইস্পাতের দাম তো দ্বিগুণ হয়নি। কারণ অনেকের কাছে ৪২০ ডলার, ৪৮০ ও ৫০০ ডলারের কাঁচামাল কেনা থাকায় ইস্পাতের দাম খুব বেশি বাড়েনি। এখন আমরা ৫৪ হাজার টাকায় লোকাল স্ক্র্যাপ পাচ্ছি না। দাম আরও বাড়তে পারে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০