রপ্তানি আয়ের গোঁজামিল নিরসনে উদ্যোগী হোন

দেশের অর্থনীতির প্রধান বহির্খাত হচ্ছে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স। এ দুটো খাতের ওপর ভর করেই মূলত দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গড়ে ওঠে। বর্তমানে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার চরম সংকট চলছে। এমন পরিস্থিতিতে রপ্তানি আয় সঠিকভাবে প্রত্যাবাসন হওয়া আবশ্যক। কিন্তু সরকারের দুই সংস্থার হিসাবে রপ্তানি আয়ের দুই ধরনের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে এক ধরনের গোঁজামিল রয়েছে। দেশের সামগ্রিক স্বার্থে এই গোঁজামিলের অবসান হওয়া আবশ্যক।

দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘চলতি অর্থবছরের ৬ মাস: দেশে আসেনি রপ্তানি আয়ের সাড়ে ৮ বিলিয়ন ডলার!’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (২০২৩ সালের জুলাই থেকে থেকে ডিসেম্বর) দুই সংস্থার রপ্তানি আয়ের হিসাবের মধ্যে বড় ব্যবধান পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ সময়ে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবের মধ্যে পার্থক্য দাঁড়িয়েছে সাড়ে আট বিলিয়ন ডলারের বেশি।

হিসাব অনুযায়ী, গরমিল সবচেয়ে বেশি তৈরি পোশাক খাতে। ইপিবি বলছে, অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে পোশাক রপ্তানি হয়েছে ২৩ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলারের। আর বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এ খাতে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ১৬ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার। এত বড় ধরনের ব্যবধান কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

গত কয়েক বছর ধরেই রপ্তানি আয়ের হিসাবে গরমিল নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বিগত পাঁচ বছরে দুই সংস্থার হিসাবের মধ্যে গরমিলের পরিমাণ ৪০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এ নিয়ে গণমাধ্যমে নানা সময় প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তরফে এই গরমিল নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। এর ফলে জনমনে সন্দেহ দেখা দেয়া স্বাভাবিক যে, রপ্তানির অর্থ ঠিকমতো দেশে না আসায় সেই অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে কিনা।

দেশ থেকে অর্থ পাচার হচ্ছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর একাধিকার বলেছেন, দেশ থেকে যে অর্থ পাচার হয়, তার প্রায় ৯০ শতাংশ সংঘটিত হয় আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যের আড়ালে। বাণিজ্যভিত্তিক অর্থ পাচারের বেশ কিছু ঘটনা কেন্দ্রীয় ব্যাংক চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছে বলেও গভর্নর জানিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো অসাধু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। এভাবে অর্থ পাচারকারীদের ছাড় দেয়া হলে পাচার আরও বেড়ে যেতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইপিবির হিসাবের মধ্যকার গরমিলের কারণ খুঁজে বের করে এক্ষেত্রে অর্থ পাচারের কোনো ঘটনা ঘটে থাকলে সে বিষয়ে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেয়া আবশ্যক বলে মনে করি। সংশ্লিষ্ট মহল এ বিষয়ে উদ্যোগী হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০