প্রায় প্রতিবছরই রপ্তানি আয়ের তথ্যে গরমিল দেখা যায়। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি), রপ্তানিকারকদের তথ্যে বড় ফাঁরাক দেখা যায়। বাংলাদেশ ব্যাংক মূলত ইপিবি প্রদত্ত তথ্যই ব্যবহার করে। কোনো কোনো বার দুই সংগঠনের তথ্যে বড় পার্থক্য থাকে যে, নীতিনির্ধারকদেরও বিভ্রান্ত হতে হয়। রপ্তানি বাড়া-কমাকে একেক পক্ষ একেক ব্যবহার করে; এর কিছু তো উদ্দেশ্যমূলকও বটে। রপ্তানিকারকরা বেশি রপ্তানি দেখিয়ে সরকারের কাছ থেকে আরও সুবিধা নিতে চায়, সরকার সাফল্য হিসেবে দেখায়, আবার বিরোধী দল ব্যর্থতার কথা বলে। কিন্তু যে উদ্দেশ্যই থাকুক, সঠিক তথ্য-পরিসংখ্যান থাকলেই সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হয়। রপ্তানি বাড়াতে সরকার কত কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, ছাড়-সুযোগ দিচ্ছে; সেটির সুফল দেশ ও অর্থনীতি তথা সাধারণ মানুষ কতটা পাচ্ছে, সেটিই বড় বিষয়।
রপ্তানি বাড়িয়ে দেখানোয় কোনো সার্থকতা নেই। বরং প্রকৃত বিষয় আড়ালে চলে যায়। আদৌ রপ্তানি হচ্ছে কি না, সে প্রশ্নও ওঠে। গতবার নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে ব্যাখ্যা দিতে হয়েছে।
সে সময় বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, রপ্তানি তথ্যের সংজ্ঞার গরমিলের কারণে রপ্তানি আয় দেশে না আসার পরিমাণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি জানিয়েছে, কোনো পণ্য রপ্তানি হওয়ার ১২০ দিনের মধ্যে দেশে আসার নিয়ম রয়েছে। আবার বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশিদের মালিকানাধীন কোম্পানির মুনাফাও দেশে আনতে হয়।
গতকাল শেয়ার বিজের প্রধান প্রতিবেদন ছিল রপ্তানি আয় নিয়ে, ‘২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল: ইপিবির তথ্যে রপ্তানি আয় ৪৭ বিলিয়ন এনবিআরের হিসাব ৩৬ বিলিয়ন ডলার’
দেশের প্রকৃত রপ্তানি কত, তা নিয়ে গত কয়েক বছর ধরেই প্রশ্ন উঠছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রপ্তানির যে হিসাব প্রকাশ করছে দেশে অর্থ ফেরত আসছে তার চেয়ে অনেক কম। গত কয়েক বছরে এ দুই হিসাবে পার্থক্য বেড়েই চলেছে। রপ্তানি আয় বেশি দেখানোয় বাণিজ্য ভারসাম্যের সঠিক হিসাবও পাওয়া যাচ্ছিল না। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইপিবির পরিবর্তে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রপ্তানি আয়ের হিসাব গ্রহণ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক।
বিশ্ব চরাচরে ভালো-মন্দ ও সত্য-মিথ্যা পাশাপাশি অবস্থান করে। এখান থেকে যারা সত্যকে খুঁজে নিতে পারেন, তারাই উদ্দেশ্য পূরণে সফল হয়। সব ক্ষেত্রেই সঠিক তথ্য-উপাত্ত অত্যাবশ্যক। এটি না পেলে করণীয় নির্ধারণও অসম্ভব। প্রত্যাশিত মান বজায় রেখে দেশের উন্নয়ন হচ্ছে কি না, সেটি বুঝতে হলেও নির্ভরযোগ্য তথ্য-উপাত্ত দরকার। এসব তথ্য সরকারকে সাফল্য-ব্যর্থতা নিরূপণে সহায়তা করে। গবেষক-বিশ্লেষকরাও তথ্য-উপাত্তের চুলচেরা বিশ্লেষণ করে সরকারকে করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ দেন। কিন্তু তথ্য বস্তুনিষ্ঠ ও নির্ভরযোগ্য না হলে দেশের প্রকৃত অবস্থা উঠে আসে না। তাতে সরকার যেমন আত্মমূল্যায়ন করতে পারে না, তেমনই গবেষক-বিশ্লেষকদের বিশ্লেষণও ফলপ্রসূ হয় না। রপ্তানির অর্থ যথাসময়ে দিশে আসছে কি না, সে অর্থ বিদেশেই থেকে যাচ্ছে কি না, পাচার হচ্ছে কি না; এমন অনেক প্রশ্ন বিবেচনায় নিতে হয়। সুষম টেকসই উন্নয়নের জন্য সঠিক উপাত্তের উপযোগিতা অনুধাবনপূর্বক সরকার রপ্তানি আয়ের সঠিক তথ্য নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলেই প্রত্যাশা।