অর্থবছরের প্রথম আট মাস

রপ্তানি আয় কমেছে ৪.৭৯ শতাংশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি (২০১৯-২০২০) অর্থবছরের শুরুতেই হোঁচট খায় দেশের রপ্তানি আয়। সে হোঁচটের নেতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। চলতি অর্থবছরের আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) রপ্তানি খাতে যে আয় হয়েছে, তা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২ দশমিক ৭২ শতাংশ কম। অর্জিত এ আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় চার দশমিক ৭৯ শতাংশ কম।

রপ্তানি খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নগদ প্রণোদনা ও সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের পরও রপ্তানি আয় কমছে। তৈরি পোশাক, চামড়া, প্লাস্টিকসহ বড় বড় খাতে আয় কমে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে সার্বিক রপ্তানি খাতে। এছাড়া বিশ্ববাজারে পোশাকের চাহিদা কম থাকায় অর্ডারও কমছে। সঙ্গে পণ্যের মূল্যও কমে গেছে। পাশাপাশি দেশের অবকাঠামোগত সমস্যা, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন না করা, ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহারসহ বিভিন্ন কারণে রপ্তানি বাণিজ্যে নেতিবাচক ধারা রয়েছে। আগামীতে এ অবস্থা হবে আরও ভয়াবহ। কারণ এরই মধ্যে বিশ্ববাজারকে হেলিয়ে দিয়েছে চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস। চীন ছাড়িয়ে এশিয়া-ইউরোপ-আমেরিকা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়া এ মহামারি যদি আরও মারাত্মক আকার ধারণ করে, তাহলে রপ্তানি বাণিজ্য বড় ক্ষতির মুখে পড়বে।

গতকাল পর্যন্ত রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে পণ্য রপ্তানিতে আয়ের লক্ষ্য ঠিক করা হয় তিন হাজার ছয় কোটি ৭০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে রপ্তানি আয় হয়েছে দুই হাজার ৬২৪ কোটি ১৮ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২ দশমিক ৭২ শতাংশ কম এবং একই সঙ্গে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় চার দশমিক ৭৯ শতাংশ কম।

ইপিবির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, একক মাস হিসাবে গত ফেব্রুয়ারিতে রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৩২ কোটি ২৩ লাখ ডলার। এ সময় লক্ষ্য ছিল ৩৭২ কোটি ২০ লাখ ডলার। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ফেব্রুয়ারিতেই আয় কমেছে ১০ দশমিক ৭৪ শতাংশ। এ মাসে প্রবৃদ্ধিও কম হয়েছে এক দশমিক ৮০ শতাংশ। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রপ্তানি করে আয় হয় ৩৩৮ কোটি ৩২ লাখ ডলার।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে মোট রপ্তানি আয়ে পোশাকের অবদান ৮৩ দশমিক ২৫ শতাংশ। তবে হোমটেক্স, টেরিটাওয়েলসহ এ খাতের অন্যান্য রপ্তানির উপখাত হিসাব করলে তৈরি পোশাক খাতের অবদান ৮৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। তৈরি পোশাকের রপ্তানি কমার মানে এর প্রভাব পুরো রপ্তানি খাতে পড়েছে।

ইপিবির তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি শেষে পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে দুই হাজার ১৮৪ কোটি ৭৪ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ কম। একই সময়ে রপ্তানি প্রবৃদ্ধিও কমেছে পাঁচ দশমিক ৫৩ শতাংশ।

পোশাকশিল্পের বাইরে অন্য খাতগুলোতেও রপ্তানি আয় কমেছে। ইপিবির তথ্যানুসারে, চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি শেষে কৃষিপণ্য রপ্তানিতে আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ কম হয়েছে। আট মাসে কৃষিপণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে ৬৬ কোটি ৭৩ লাখ ডলার।

এ সময়ে প্লাস্টিকপণ্য রপ্তানিতেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম হয়েছে আয়। কমেছে প্রবৃদ্ধির পরিমাণও। আট মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্লাস্টিকপণ্য রপ্তানিতে আয় হয়েছে ২৩ দশমিক ৯১ শতাংশ কম। লক্ষ্যমাত্রা ৯ কোটি ৯১ লাখ ২০ হাজার ডলার থাকলেও হয়েছে সাত কোটি ৫৪ লাখ ২০ হাজার ডলার।

অন্যদিকে আট মাসে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতেও অর্জন হয়নি লক্ষ্যমাত্রা। কমেছে প্রবৃদ্ধি। এ পণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছে ৬৩ কোটি ৭৬ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২ দশমিক ৫১ শতাংশ কম। প্রবৃদ্ধিও কমেছে ৯ দশমিক শূন্য চার শতাংশ।

এ সময় বেড়েছে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি। চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি শেষে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তারি করে বাংলাদেশ আয় করেছে ৬৯ কোটি ৭৬ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৮ দশমিক ১২ শতাংশ বেশি। প্রবৃদ্ধিও গত বছরের একই সময়ের চেয়ে এ আট মাসে হয়েছে ২৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি।

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি করে চার হাজার ৫৩ কোটি ডলার আয় করে বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছর (২০১৯-২০২০) রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৪ বিলিয়ন বা পাঁচ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। এর মধ্যে পণ্য খাতে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা চার হাজার ৫৫০ কোটি ডলার ও সেবা খাতে ৮৫০ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের রপ্তানি আয়ের চেয়ে এ লক্ষ্যমাত্রা ১৫ দশমিক ২০ শতাংশ বেশি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০