Print Date & Time : 16 June 2025 Monday 10:29 pm

রপ্তানি তথ্যের সঙ্গে অর্থনীতির অন্যান্য সূচকের সমন্বয় হোক

রপ্তানি তথ্য নিয়ে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। দুই অর্থবছরের ২০ মাসের রপ্তানি হিসাব থেকে ২৩ বিলিয়ন ডলার উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ওপর দায় চাপিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সরকারকে দেয়া চিঠিতে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি বলেছে, এনবিআরের প্রতিনিধি সরবরাহকৃত রপ্তানির ডেটাসেটে একাধিকবার রপ্তানির হিসাব থাকার বিষয়টি ইতোমধ্যে তাদের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক রপ্তানি আয়ের তথ্য-উপাত্ত তফসিলি ব্যাংকগুলোর শাখা থেকে সংগ্রহ করে থাকে। ফলে সেই তথ্য-উপাত্তের সঙ্গে প্রকৃত রপ্তানির তেমন পার্থক্য থাকে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংগ্রহ এবং ইপিবি কর্তৃক প্রকাশিত রপ্তানিসংক্রান্ত তথ্যে পার্থক্য থাকার কারণগুলোকে চিহ্নিত করে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি বলেছে, একই রপ্তানি তথ্য এবং পণ্যের এইচএস কোড একাধিকবার ইনপুট দেওয়া হয়েছে। পণ্যের কাটিং, মেকিং এবং ট্রিমিংয়ের ক্ষেত্রে শুধু তৈরির মাশুল পাওয়ার কথা, কিন্তু ইপিবি কাপড়সহ সব যন্ত্রাংশের হিসাব করেছে। ইপিবি অনেক সময় নমুনা পণ্যের দামও ইনপুট দিয়েছে, অথচ নমুনা পণ্যের কোনো দাম হিসাবে আসার কথা নয়।

ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ বলেছেন, রপ্তানি আয় নিয়ে ইপিবি’র তথ্যই সঠিক। এদের দাবি, ব্যবসায়ীরা দুইভাবে রপ্তানি করেনÑ ব্যাংক টু ব্যাংক এলসি এবং ক্রেতাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে। এলসির ক্ষেত্রে প্রথমে রপ্তানিকারক কাপড় ও সুতা টাকা দিয়ে আমদানি করেন; তারপর পণ্য রপ্তানি করেন। এখানে পুরো মূল্য রপ্তানি হিসেবে ধরা হয়। অন্য পদ্ধতি হলো, কাপড় ও সুতা বিনামূল্যে ক্রেতারা পাঠিয়ে দেন। ক্রেতারা শুধু রপ্তানিকারককে সিএমটি (কস্ট অ্যান্ড মেকিং চার্জ) পরিশোধ করেন। কিন্তু ইপিবি এখানে পুরোটাই  রপ্তানি মূল্য (আয়) দেখায়।

দীর্ঘদিন ধরেই দেশের রপ্তানি আয় নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইপিবির কাছ থেকে দুই ধরনের তথ্য পাওয়া যাচ্ছিল। ফলে কোনটি নির্ভরযোগ্য তথ্য, সেটি বোঝাই কষ্টকর হয়ে পড়ে।

যারা ইপিবির তথ্যকে সঠিক বলে আখ্যা দিচ্ছেন, তারাও সংস্থাটির কোনো হিসাব ও হিসাব সংরক্ষণের পদ্ধতি নিয়ে দোলাচলে আছেন। যেমনÑ রপ্তানিকারক সুতা আর কাপড় বিনামূল্যে পেয়েছেন নাকি কিনেছেন; সেটা মূল বিষয় নয়। সমস্যা হলো ইপিবি যখন পুরো মূল্য দেখায় তখন ক্রেতা শুধু সিএমটি পান। এজন্যই বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে অসামঞ্জস্য দেখা দেয়। তাদের মধ্যে সমন্বয় করতে হবে। ইপিবিকে দেখতে হবে, ইপিজেড থেকে যে রপ্তানি হয়, তা একবার হিসাবে ধরা হয় আবার যখন গার্মেন্টস থেকে রপ্তানি হয় তখন সেটা আবার হিসাবে ধরা হয়। ফলে  একই রপ্তানি দুবার দেখানোয় হিসাবে গরমিল দেখা দেয়। রপ্তানি তথ্যের সঙ্গে অর্থনীতির অন্যান্য তথ্য-উপাত্ত সূচকের সমন্বয় করা গেলে সঠিক হিসাব প্রণয়ন করা সম্ভব।