রপ্তানি থেকেই ‘আসবে’ বাড়তি উৎসে করের সমান রাজস্ব

নিজস্ব প্রতিবেদক; মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ে বৈশ্বিক সংকটের মধ্যে তৈরি পোশাকশিল্পে উৎসে কর না বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে পরিস্থিতি ‘স্বস্তিকর’ থাকলে রপ্তানি থেকেই ‘অনেক’ রাজস্ব আসবে বলে জানিয়েছে বিজিএমইএ। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকদের এ সংগঠনের সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘রপ্তানির কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা গেলে সেখান থেকেই বাড়তি রাজস্ব চাহিদা পূরণ হবে।’
গত সপ্তাহে জাতীয় সংসদে উত্থাপিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে পোশাকশিল্পের উৎসে কর দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে এক শতাংশে উন্নীত করার প্রস্তাব দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বাজেটকে সামগ্রিকভাবে ইতিবাচক জানিয়ে প্রশংসা করলেও বিজিএমইএ সভাপতি উৎসে কর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বলেন, ‘বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এ শিল্পের জন্য তা অত্যন্ত দুরূহ হবে। শিল্প এ মুহূর্তে মহামারি থেকে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, কর বাড়ানোর জন্য এটি সঠিক সময় নয়। বর্তমানে অস্থিরতাময় বিশ্ব বাণিজ্য পরিস্থিতি আমাদের পোশাকশিল্পের জন্যও বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।’
এ বিষয়ে সংগঠনের অবস্থান তুলে ধরে বর্তমান পরিস্থিতিতে উৎসে কর বৃদ্ধির প্রস্তাব পোশাকশিল্পের টিকে থাকার সংগ্রামটি আরও কঠিন করে তুলবে বলে জানান তিনি।
ফারুক হাসান বলেন, ‘আমাদের একান্ত অনুরোধ, রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে কর শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ আগামী পাঁচ বছর পর্যন্ত কার্যকর রাখলে শিল্পটি বর্তমান সংকটকালে স্বস্তিতে থাকবে। শিল্প টিকে থাকলে রাজস্ব আসবে, নতুন নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে।’
বিজিএমইএর হিসাবে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি ছিল ২৭ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার। ৮৩ দশমিক ৪৫ টাকা এক্সচেঞ্জ রেট ধরে টাকার অঙ্কে রপ্তানি আয় হয়েছিল দুই লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ হারে এক হাজার ১৬৬ কোটি টাকা উৎসে কর দেয়া হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে রপ্তানি ছিল ৩১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার। ৮৩ দশমিক ৯৫ টাকা এক্সচেঞ্জ রেট ধরে টাকার অঙ্কে রপ্তানি আয় হয় দুই লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ হারে এক হাজার ৩২০ কোটি টাকা কর আদায় হয়।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে রপ্তানি ৪১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। ৮৭ টাকা এক্সচেঞ্জ রেট ধরে টাকার অঙ্কে রপ্তানি আয় হবে তিন লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ হারে এক হাজার ৭৮৩
কোটি টাকা উৎসে কর দেয়া হবে। রপ্তানির সঙ্গে সঙ্গে উৎসে কর আদায় বাড়ার ধারাবাহিক এই অগ্রগতি তুলে ধরে আগামী কয়েক বছর তা অব্যাহত থাকবে বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন বিজিএমইএ সভাপতি।
ফারুক হাসান বলেন, ‘নতুন করে করের বোঝা না বাড়ালেও বরং পোশাকশিল্পে রপ্তানি বাড়িয়ে বাড়তি করের সমান কর সরকারি কোষাগারে দেয়া সম্ভব হবে।’
তিনি জানান, আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৪৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি হলে ৯২ টাকা এক্সচেঞ্জ রেটে টাকার অঙ্কে রপ্তানি হবে চার লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ হারে উৎসে দুই হাজার ৭০ কোটি টাকা কর দেয়া হবে। আমরা যদি প্রতিযোগী সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে রপ্তানি বাড়াতে পারি, তাহলে করহার না বাড়িয়েও রাজস্ব বাড়ানো সম্ভব হবে। এতে সামষ্টিক অর্থনীতি উপকৃত হবে।
প্রস্তাবিত বাজেটের মূল্যায়নে তিনি জানান, বাজেটে মানবসম্পদ উন্নয়ন, কৃষি, স্বাস্থ্য ও সামাজিক কল্যাণ ও নিরাপত্তা খাতে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। এছাড়া সর্বজনীন পেনশন চালুর ঘোষণাকে ‘যুগান্তকারী পদক্ষেপ’ অভিহিত করেন তিনি।
এছাড়া করপোরেট করহার কমিয়ে আনার ফলে তা খরচ কমবে এবং শিল্প, বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানমুখী অর্থনৈতিক উন্নয়নের রূপকল্প বাস্তবায়নে সহায়ক হবে এবং দেশের রপ্তানি আয় বাড়াতে সহায়তা করবে বলে মনে করেন ফারুক হাসান।
গত ৯ জুন জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ সালের জন্য ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব দেয়া হয়। প্রস্তাবিত বাজেটে রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য বেশ কিছু স্তরে করছাড় দেয়া হয়। এসব বিষয় তুলে ধরে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘বিভিন্ন ধরনের করের হার কমিয়ে আরও কর্মসংস্থান তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, যা প্রধানমন্ত্রীর বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতার পরিচায়ক।’
বিশ্বে নন-কটন ও ম্যান মেড ফাইবারের সম্ভাবনাময় বাজারের চাহিদা এবং এ-সংক্রান্ত পরিসংখ্যান তুলে ধরে এই খাতে নতুন করে প্রণোদনা সুবিধা চালু করার দাবি জানান ফারুক হাসান। তিনি বলেন, ‘নন-কটন খাতে বিনিয়োগ ও রপ্তানি উৎসাহিত করতে এবং নন-কটন পোশাক রপ্তানির ওপর ১০ শতাংশ হারে বিশেষ প্রণোদনা প্রদানের জন্য অনুরোধ করছি।’
বিজিএমইএ সভাপতি জানান, বর্তমানে মোট পোশাক রপ্তানির প্রায় ৭৪ শতাংশই কটনের তৈরি, যেখানে বিশ্বের মোট টেক্সটাইল কনজাম্পশনে কটনের শেয়ার মাত্র ২৫ শতাংশ। বর্তমান বিশ্বে ভোক্তাদের ক্রমাগত জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং টেকসই ও পরিবেশবান্ধব পোশাকের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে নন-কটন পণ্যের চাহিদা বাড়ছে।
তিনি জানান, ২০১৭ সালে মেন মেড ফাইবারের টেক্সটাইল ট্রেডের পরিমাণ ছিল প্রায় ১৫০ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে বাংলাদেশের শেয়ার ছিল মাত্র পাঁচ শতাংশ। অথচ প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনামের দখলে ছিল ১০ শতাংশ। তাই নন-কটন বস্ত্র খাতে বিনিয়োগ সুরক্ষিত ও উৎসাহিত করার জন্য বিশেষ নীতি সহায়তা একান্ত অপরিহার্য।
সংবাদ সম্মেলনে চলতি বাজেটে নগদ সহায়তার ওপর ১০ শতাংশ হারে আয়কর প্রত্যাহার ও পরিবেশবান্ধব কারখানা তৈরির অন্যতম উপাদান সোলার প্যানেলের ওপর আরোপ করা এক শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি করা হয়।
বিজিএমইএ সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম, এসএম মান্নান কচি ও পরিচালক আব্দুল্লাহিল রাকিব অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০