রপ্তানি পণ্যের উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক: রপ্তানি বাড়াতে নতুন পণ্য উৎপাদনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নতুন আরও কী কী পণ্য আমরা উৎপাদন করতে পারি এবং রপ্তানি করতে পারি, সে বিষয়ে গবেষণা করে বের করতে হবে। কোন কোন দেশে কী কী পণ্যের চাহিদা রয়েছে, সেটা অনুধাবন করে সেই পণ্য যেন আমরা উৎপাদন করতে পারি, সেটাও বিবেচনা করতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

গতকাল বাংলাদেশ ‘ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সামিট’ উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এ সামিটে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন।

সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমি আশা করি এই সম্মেলনের মাধ্যমে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য দেশি-বিদেশি শিল্প উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে এসব খাতের সম্ভাবনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন এবং বিশ্ববাজারে বাংলাদেশি পণ্যের নব নব দ্বার উম্মোচিত হবে, রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশ কাক্সিক্ষত বিনিয়োগ আকর্ষণে সক্ষম হবে।’

সামিটে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের নতুন পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানির ওপর গুরুত্ব দেয়ার জন্য অনুরোধ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘যেসব প্রতিষ্ঠান আছে, বিশেষ করে বেসরকারি খাত, আমি তাদের অনুরোধ করব, এই বিষয়টার দিকে আপনারা বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবেন। কারণ আমাদের রপ্তানি পণ্যের সংখ্যা আরও বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের চাহিদা থাকে। বাংলাদেশ এমন একটা দেশ, আমরা ইচ্ছা করলে সবকিছুই করতে পারি। এই আত্মবিশ্বাস আমার আছে, যেটা জাতির পিতা বলে গেছেন।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনে বিশ্বব্যাপী আজকে যে ক্ষতি হচ্ছে, বাংলাদেশ যাতে তার থেকে মুক্তি পায়, সেদিকে লক্ষ রেখে শুরু থেকেই আমরা আমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। কাজেই আমরা বিশ্বে প্রথম শতবর্ষের বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ বাস্তবায়ন শুরু করেছি। আমাদের আগামী প্রজন্ম অর্থাৎ প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন একটা সুন্দর, নিরাপদ ও উন্নত জীবন পায়, সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে, সেদিকে লক্ষ রেখেই আমরা এই ব-দ্বীপটাকে উন্নত করার পরিকল্পনা নিয়েছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বিভিন্নভাবে সুযোগ সৃষ্টি করছি। কারণ বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানটা কিন্তু বিবেচনা করলে যারা বিনিয়োগ করতে আসবেন, তারা শুধু বাংলাদেশ পাবেন না, দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় তাদের একটা সুযোগ থাকবে এই বাজারগুলো ধরার ও রপ্তানি করার। বাংলাদেশ সারা প্রাচ্য-পাশ্চাত্য একটা ব্রিজ হিসেবে গড়ে উঠবে ভবিষ্যতে, যেটা আমাদের দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের আরও প্রসার ঘটাতে সহায়তা করবে।’

‘আমরা কাজ করে যাচ্ছি দেশের উন্নয়নের জন্য, যদিও করোনায় আমাদের অগ্রগতিটা থেমে গেল। যদি করোনা মহামারিটা না হতো তাহলে হয়তো আমরা আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারতাম। করোনা মহামারি মোকাবিলায় আমার দেশের মানুষের যাতে কষ্ট না হয় বা ব্যবসা-বাণিজ্য যাতে থমকে না যায়, এজন্য প্রায় এক

লাখ ৮৭ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দিয়েছি। এমনকি যাতে তারা ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যেতে পারেন, আবার মানুষও যেন না খেয়ে কষ্ট না পায়, সেদিকে লক্ষ আমরা রেখেছি। এখন আমরা টিকা দেয়াও শুরু করেছি। মানুষকে সুরক্ষা দেওয়াটা আমাদের কর্তব্য,’ তিনি বলেন।

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। আগামী প্রজš§ পাবে জাতির পিতার স্বপ্নের আত্মমর্যাদাশীল, উন্নত ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ। বাংলাদেশের অনেক পণ্য রয়েছে আমরা এরই মধ্যে রপ্তানি করছি। সাত দিনব্যাপী এই সম্মেলনে আমাদের দেশের ৯টি খাত, যেমন অবকাঠামো, তথ্যপ্রযুক্তি, চামড়া, ওষুধ, স্বয়ংক্রিয় ক্ষুদ্র প্রকৌশল, কৃষিপণ্য, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, পাট, বস্ত্র, শিল্পসহ অতি চাহিদাসম্পন্ন ভোগ্যপণ্যসহ ক্ষুদ্র ব্যবসাকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে, যা আমি মনে করি অত্যন্ত সময়োপযোগী।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। শুধু তাৎক্ষণিকভাবে কী করা উচিত, সেটা নয়। সরকার গঠনের পর থেকেই আমাদের লক্ষ্য ছিল আশু করণীয় কী এবং মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করা। সেভাবে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি বলেই আজকে আমাদের এ সাফল্য এসেছে। আমরা প্রেক্ষিত পরিকল্পনা রূপকল্প-২০২১ প্রণয়ন করেছিলাম ২০১০-২০২১। আর এখন আমরা করেছি রূপকল্প-২০৪১, অর্থাৎ ২০২১ থেকে ২০৪১ সালের বাংলাদেশ কেমন হবে, কীভাবে আমরা উন্নত করবÑএরই ভিত্তিতে আমরা পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি দেশকে।’

দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ‘সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আমরা একটা আঞ্চলিক বিমানবন্দর হিসেবে গড়ে তুলছি, যাতে আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোও সেটা ব্যবহারে সক্ষম হয়। আমাদের চট্টগ্রাম পোর্টকে উন্নত করছি, মোংলা পোর্ট এবং নতুন একটা করেছি পায়রা পোর্ট। সেটাও গভীর সমুদ্রবন্দর হিসেবে ভবিষ্যতে গড়ে উঠবে।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০