শনিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘এলডিসি-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের প্রস্তুতি’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণে গুরুত্ব দিয়েছেন। কী চ্যালেঞ্জে পড়বে, সে বিষয়ে ধারণা দিয়েছেন তারা।
গত কয়েক দশকে রপ্তানি বাড়লেও রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্র্যকরণে বাংলাদেশ বেশ পিছিয়ে। একটি শিল্প খাতেই যত প্রণোদনা, ছাড়, সুযোগ-সুবিধা, নীতিসহায়তা রয়েছে। বিশ্লেষকরা সব খাতেই মনোযোগ দিতে বলে আসছেন।
বাণিজ্য বাড়াতে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ে স্থিতিশীলতা আনয়নের পাশাপাশি বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে এসইজেডসমূহে সব ধরনের সেবাপ্রাপ্তি এবং ব্যবসা পরিচালন ব্যয় কমিয়ে আনতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য দেশে বৈদেশিক মুদ্রার সহায়ক বিনিময় হার নির্ধারণ করা জরুরি। ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ সহায়ক হলেই রপ্তানি খাতে সাফল্য আসবে। সেই সঙ্গে শুল্কহার বেশি থাকলে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ব্যাহত হয়। তাই সহায়ক রাজস্ব নীতিমালার কোনো বিকল্প নেই।
বরাবর আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। দেশে যে হারে আমদানি হচ্ছে, সে পরিমাণ বাড়ছে না রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স। আমাদের বৈদেশিক বাণিজ্য মূলত এ দুটি পণ্যই টিকিয়ে রেখেছে। তৈরি পোশাক ও রেমিট্যান্সের মতো বড় খাতগুলোয় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় সার্বিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হচ্ছে।
আমরা মনে করি, রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণ, বাজার সম্প্রসারণ এবং আমদানিনির্ভরতা কমানো গেলে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা সম্ভব। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে পুরোপুরি বের হয়ে গেলে বড় রপ্তানি গন্তব্য আমেরিকা-ইউরোপের বাজারে বেশ কিছু বাণিজ্য সুবিধা হারাবে। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শুধু তৈরি পোশাকের ওপর নির্ভর না করে রপ্তানি পণ্য বৈচিত্র্য করার জন্য কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, সেটি নিয়মিত পর্যালোচনা করতে হবে। অন্য দেশগুলোর কোথায় কীসের চাহিদাÑসেগুলো বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কার্যপরিধি নির্ধারণ করতে হবে। এলডিসি থেকে উত্তরণ হলে বিদ্যমান অনেক সুবিধা হারানোর বিপরীতে কিছু সুবিধাও মিলবে। পরিবেশগত বিষয়সহ অনেক কঠিন শর্ত পূরণ করেই সুবিধাগুলো অর্জন করতে হবে।
পণ্যবৈচিত্র্য ও দক্ষতা বাড়াতে পারলে বিশ্ববাজারে অনেক ভালো করব। সে জন্য যত বেশি সম্ভব মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করতে হবে ক্রেতা দেশগুলোর সঙ্গে। তৈরি পোশাকের বাইরে দেশের ইলেকট্রনিকস, চামড়াসহ বিভিন্ন শিল্প অনেক ভালো করছে। এসব পণ্যের রপ্তানি সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে। দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রতি আরও জোর দিতে হবে। এর মাধ্যমে দেশের রপ্তানি সম্ভাবনা আরও বাড়বে। শ্রমিকের মজুরিসহ বিভিন্ন খরচ জেনে ক্রেতারা মূল্য নির্ধারণ করে দিচ্ছে। সেটাই আমাদের মেনে নিতে হচ্ছে। অথচ ব্র্যান্ডিং হলে মূল্য নির্ধারণের সমস্যা থাকবে না। আমাদের সাইকেল বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। কিন্তু এর কাঁচামাল বাইরে থেকে আনতে হয়। ফলে উৎপাদন খরচ বেশি হয়। এসব সীমাবদ্ধতা ও বাধা কাটিয়ে উঠতে হবে।
বাণিজ্য সম্ভাবনা বাড়ানোর জন্য বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক কলাকৌশল বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সম্ভাব্য সব প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলেই প্রত্যাশা।