নিজস্ব প্রতিবেদক: বহুস্তরভিত্তিক করকাঠামোর পরিবর্তে সিগারেটের ক্ষেত্রে দুটি মূল্যস্তর প্রচলন এবং সম্পূরক শুল্কের একটি অংশ সুনির্দিষ্ট কর (স্পেসিফিক ট্যাক্স) আকারে আরোপ করার দাবি করা হলেও প্রস্তাবিত বাজেটে এর কোনো প্রতিফলন নেই। বরং সিগারেটের মূল্যস্তরকে নি¤œ, মধ্যম, উচ্চ ও অতি উচ্চস্তর হিসেবে বিভক্ত করে অতি উচ্চস্তরের সিগারেটের মূল্য ও করহার (১০ শলাকা ১০১ টাকা) তৃতীয় অর্থবছরের মতো অপরিবর্তিত রাখার মাধ্যমে বহুজাতিক তামাক কোম্পানিগুলোর বিপণন ব্যবসা সম্প্রসারণের সুযোগ অব্যাহত রাখা হয়েছে। এর মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য নয়, তামাক ব্যবস্থা সুরক্ষা পাবে বলে দাবি করা হয়েছে।
গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে তামাকের করবিষয়ক বাজেট পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করা হয়। প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) ও অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স -আত্মার উদ্যোগে তামাকবিরোধী সংগঠন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, ঢাকা আহছানিয়া মিশন, অ্যাসোসিয়েশন ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট (এসিডি), ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল অ্যাকশন (ইপসা), ন্যাশনাল অ্যান্টি টোব্যাকো প্ল্যাটফর্ম এবং তামাকবিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ) সম্মিলিতভাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, নি¤œস্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের সর্বনি¤œ মূল্য ৩২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে এবং সম্পূরক শুল্ক মাত্র তিন শতাংশ বৃদ্ধি করে ৫৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে এ স্তরের সিগারেটের মূল্য বৃদ্ধি পাবে মাত্র ১৮.৫২ শতাংশ। বিড়ি কারখানার মালিকদের চাপের কাছে নতি স্বীকার করে প্রস্তাবিত বাজেটে বহুল প্রচলিত ফিল্টারবিহীন বিড়ির ২৫ শলাকার মূল্য ১২.৫ টাকা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। যদিও অর্থমন্ত্রী ২০৩০ সালের মধ্যে বিড়ির উৎপাদন বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন, তবে এ ঘোষণা বাস্তবায়নের কোনো দিকনির্দেশনা প্রদান না করায় এর কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় রয়েছে। গত তিন বছরে মাথাপিছু জাতীয় আয় (নমিন্যাল) বেড়েছে ২৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ। অথচ একই সময়ে সিগারেট ও বিড়ির দাম অপরিবর্তিত থাকায় কিংবা সামান্য বৃদ্ধি পাওয়ায় ধূমপানের হার হ্রাস পাবে না। একই সঙ্গে তরুণ প্রজš§ ধূমপান শুরু করতে খুব সামান্যই নিরুৎসাহিত হবে। প্রস্তাবিত বাজেটে তামাকপণ্যের রফতানি উৎসাহিত করার অজুহাতে প্রক্রিয়াজাত তামাকপণ্যের ওপর আরোপিত ২৫ শতাংশ রফতানি শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে যা জনস্বাস্থ্যবিরোধী পদক্ষেপ। তামাকের আর্থসামাজিক ক্ষতি স্বীকার করেও এ ধরনের দ্বৈতনীতি গ্রহণ শুধুমাত্র তামাক কোম্পানির প্ররোচনাতেই সম্ভব হয়েছে। এ পদক্ষেপের মাধ্যমে দেশে তামাক ও তামাকজাত পণ্যের উৎপাদনকেই মূলত উৎসাহিত করা হবে যা, ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে বড় বাধা হিসেবে কাজ করবে।
আরও বলা হয়, প্রস্তাবিত বাজেটে প্রতি ১০ গ্রাম জর্দা এবং গুলের খুচরা মূল্য ২৫ টাকা এবং সম্পূরক শুল্ক ৬৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যে করারোপের ক্ষেত্রে প্রচলিত এক্স-ফ্যাক্টরি প্রাইস বাতিল করে বিড়ি-সিগারেটের ন্যায় খুচরা মূল্যের ওপর করারোপ প্রথা চালু করায় জর্দা ও গুল থেকে কর আদায়ের জটিলতা কমবে। বাংলাদেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠী বিশেষত নারীদের মাঝে এ পণ্য ব্যবহারের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। এ বিশাল জনগোষ্ঠীকে জর্দা-গুল ব্যবহারের স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে রক্ষার ক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রীর এ প্রয়াস নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় উদ্যোগ।
সংবাদ সম্মেলনে অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, বাংলাদেশে নি¤œস্তরের সস্তা সিগারেটের ভোক্তাই সবচেয়ে বেশি। তাই চ‚ড়ান্ত বাজেটে নি¤œস্তরের প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের মূল্য ৩৫ টাকা করার দাবি জানাচ্ছি। এছাড়া তিনি প্রক্রিয়াজাতপূর্বক তামাক পণ্যের ওপর রফতানি শুল্ক পুনর্বহাল করার জন্য সরকারের প্রতি আহŸান জানান। ড. রুমানা হক বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে সিগারেটের চারটি মূল্যস্তর বহাল রাখা হয়েছে। এতে করে ভোক্তার স্তর পরিবর্তনের সুযোগ অব্যাহত থাকবে যা তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে। অন্যদিকে তামাকপণ্য রফতানি উৎসাহিত করাকে অনৈতিক আখ্যা দিয়ে জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল মালিক বলেন, আমাদের দেশে তামাক উৎপাদন করে অন্য দেশের জনগণকে সস্তায় তামাক ব্যবহারে উৎসাহিত করা অনৈতিক। আমরা শুধু তামাকমুক্ত বাংলাদেশই নয়, বরং তামাকমুক্ত বিশ্ব গড়তে চাই। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এটিএ বাংলার প্রধান প্রতিবেদক ও অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স (আত্মা) কো-কনভেনর নাদিরা কিরণ।

Print Date & Time : 29 June 2025 Sunday 2:45 pm
রফতানিতে শুল্কছাড়ে তামাক ব্যবসা সুরক্ষা পাবে
পত্রিকা ♦ প্রকাশ: