Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 5:39 pm

রফতানির শর্তে কুমির পালনে লাইসেন্স দেবে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক: লাইসেন্স ছাড়া কুমির লালন-পালন, খামার স্থাপন করা যাবে না। লালন-পালন শেষে রফতানির শর্তে এ লাইসেন্স দেওয়া হবে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এ লাইসেন্স দেবে। এ মন্ত্রণালয় থেকে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ এর ধারা ৫২, ২৪ ধারা অনুযায়ী কুমির লালন-পালন বিধিমালা, ২০১৯ জারি করা হয়েছে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর এ বিধিমালা জারি করে।
বিধিমালায় বলা হয়, আবেদনের পর প্রধান ওয়ার্ডেন বা ওয়ার্ডেনের অধীনস্ত ফরেস্ট রেঞ্জার, ওয়াইল্ড লাইফ রেঞ্জার, ওয়াইল্ড লাইফ সুপারভাইজার, ওয়াইল্ড লাইফ ইন্সপেক্টর বা তদূর্ধ্ব কোনো বন কর্মকর্তা এ লাইসেন্স ইস্যু করবেন। এ লাইসেন্স ব্যতীত কোনো খামারি কুমির লালন-পালন, খামার স্থাপন বা আমদানি-রফতানি করতে পারবেন না। এ বিধিমালা কার্যকরের আগে যেসব খামারি কুমির লালন-পালন ও খামার স্থাপন, আমদানি-রফতানি করে থাকলে বিধিমালা কার্যকরের ৬০ দিনের মধ্যে লাইসেন্স নিতে হবে। খামারির আবেদনের ৩০ দিনের মধ্যে যাচাই শেষে লাইসেন্স ফি প্রদান সাপেক্ষে এক বছরের জন্য লাইসেন্স ইস্যু করা হবে। লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়ার এক মাস আগে নবায়ন করতে হবে।
আরও বলা হয়, কুমির অনুযায়ী খামারিকে পজেশন সার্টিফিকেট ইস্যু করা হবে। লাইসেন্স প্রাপ্তির পর কোনো খামারি পজেশন সার্টিফিকেট ব্যতীত কুমির নিজ মালিকানায় রাখতে পারবেন না। প্রত্যেক কুমিরের জন্য বাৎসরিক ভিত্তিতে পজেশন ফি দিলেই পজেশন সার্টিফিকেট দেওয়া হবে। নির্দিষ্ট ফি জমা দেওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে পজেশন সার্টিফিকেট ইস্যু করা হবে। বাৎসরিক পজেশন ফি দিয়ে পজেশন সার্টিফিকেট নবায়ন করা যাবে। লাইসেন্স ও পজেশন সার্টিফিকেট হারিয়ে গেলে জরিমানা দিয়ে খামারি আবার দুটি সার্টিফিকেট পাবেন।
লাইসেন্স ইস্যুর শর্তাবলির মধ্যে বলা হয়, কুমির লালন-পালন বা খামার স্থাপনে কমপক্ষে পাঁচ একর বন্যামুক্ত ভূমি থাকতে হবে। যার দূরত্ব হবে সুন্দরবন থেকে ন্যূনতম ১০০ কিলোমিটার দূরে। তবে যেখানে খামার করা হবে সেখানে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহ সুবিধা ও সহজ যোগাযোগের ব্যবস্থা থাকতে হবে। খামারের উদ্দেশ্যে কুমির আমদানি করা যাবে। তবে আন্তর্জাতিক সব নিয়ম মেনে আমদানি করতে হবে। কোনোভাবেই প্রকৃতি হতে কুমির সংগ্রহ করা যাবে না। শুধু সাইটিস রেজিস্ট্রি করা খামার হতে কুমির সংগ্রহ করতে হবে।
প্রাথমিক পর্যায়ে ২০টি বংশ প্রদানকারী কুমির অথবা ১০০টি হ্যাচিং নিয়ে একটি খামার চালু করতে হবে; যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী পরিচালনা করতে হবে। খামার পরিচালনার জন্য ন্যূনতম দুজন প্রশিক্ষিত বিশেষজ্ঞ থাকবেন; যার প্রাণিবিদ্যা, অ্যানিম্যাল হাসবেন্ডারি, ফিশারিজ, কনজারভেশন বায়োলজি বিষয়ে স্নাতকোত্তর বা সমমানের ডিগ্রি রয়েছে। এছাড়া একজন ভেটেনারি সার্জন, খামার ব্যবস্থাপনার ওপর দুজন অভিজ্ঞ ব্যবস্থাপক থাকতে হবে। নিরাপদ অবকাঠামো, দুই মিটার উচ্চতা সম্পন্ন নিরাপত্তা বেষ্টনী, বর্জ্য পরিশোধন প্ল্যান্ট, খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা, কুমিরজাত পণ্যের প্রক্রিয়াজাতের জন্য সংরক্ষণাগার, কোয়ারেন্টাইন শেড, হ্যাচারি ও ইনফিউবেশন কক্ষ থাকতে হবে। কর্মীদের ঝুঁকি ও নিরাপত্তা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া, প্রজনন ও সংরক্ষিত কুমির সহজে শনাক্তে পৃথক ট্যাগিং করতে হবে। প্রতিটি কুমিরের দেহে স্থানীয় বন কর্মকর্তার উপস্থিতিতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত টেকনিশিয়ান দ্বারা বন বিভাগের সরবরাহ করা মাইক্রোচিপস লাগাতে হবে।
বিধিমালায় বলা হয়, সাইটিস রেজিস্ট্রি করা খামার হতে কুমির বা কুমিরজাত পণ্য আমদানি-রফতানি করতে হবে। খামারের কুমির রফতানিযোগ্য হওয়ার পর দক্ষ ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তি দ্বারা কুমির বা কুমিরজাত পণ্য সংগ্রহ করে তা পৃথকভাবে ট্যাগিং করে সংরক্ষণাগারে সংরক্ষণ করতে হবে। রফতানি করতে হলে ওয়ার্ডেন বরাবর আবেদন করে অনুমতি নিতে হবে। রাজস্ব পরিশোধের পর রফতানির জন্য সাইটিস সার্টিফিকেট ইস্যু করা হবে। খামারিকে কুমিরের সংখ্যা হ্রাস-বৃদ্ধি ও আমদানি-রফতানি সংক্রান্ত রেজিস্টার রাখতে হবে। খামার পরিদর্শন শেষে লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ হলে লাইসেন্স স্থগিত, পজেশন সার্টিফিকেট বাতিল করা হবে। প্রতিটি খামারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জ্ঞান প্রদানের জন্য গবেষণার সুযোগ দিতে হবে।