Print Date & Time : 26 June 2025 Thursday 3:45 am

রফতানি বেড়েছে তৈরি পোশাকের

নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) দেশের সার্বিক রফতানি আয় গত অর্থবছরের এই সময়ের চেয়ে বেড়েছে। সাত দশমিক ৩৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে এ সময়ের রফতানিতে। রফতানি আয়ের এ প্রবৃদ্ধি অর্জনে চালকের ভূমিকায় ছিল বরাবরের মতোই তৈরি পোশাক খাত। তবে প্লাস্টিক ও চামড়াসহ বেশ কিছু খাতের রফতানিতে নেতিবাচক ধারা লক্ষ করা গেছে।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। কৃষি ও শিল্পপণ্যের রফতানির তথ্যের ভিত্তিতে সংস্থাটি গতকাল এ প্রতিবেদন দিয়েছে। তবে সেবা খাতের হালনাগাদ রফতানি আয়ের প্রতিবেদন এখনও প্রকাশ করা হয়নি।

গতকাল প্রকাশিত তথ্যমতে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারিতে পণ্য রফতানি করে দেশের মোট আয় হয়েছে দুই হাজার ৪৩৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের এ সময়ে রফতানির পরিমাণ ছিল দুই হাজার ২৭১ কোটি ৯২ লাখ ডলার। সে হিসাবে অর্থবছরের প্রথম আট মাসে রফতানির প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাত দশমিক ৩৮ শতাংশ।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে সেবা খাত বাদে রফতানির মোট লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে সাড়ে ৩৭ বিলিয়ন ডলার (তিন হাজার ৭৫০ কোটি ডলার)। সে হিসাবে এ আট মাসে রফতানি আয়ের কৌশলগত লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই হাজার ৪৪০ কোটি ২০ লাখ ডলার। আর অর্জিত রফতানি আয় দুই হাজার ৪৩৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার। সে হিসেবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫০ লাখ ডলার পিছিয়ে আছে অর্জন।

প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী প্লাস্টিক পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, কাঠের আসবাবপত্র এবং প্রকৌশল পণ্যের রফতানি আয় কমেছে। তবে পাটের সুতা (ইয়ার্ন), তৈরি পোশাক ও কৃষিপণ্যসহ অধিকাংশ খাতের আয় বেড়েছে।

শীর্ষ খাত হিসেবে রফতানিতে তৈরি পোশাক খাতের অবদান দেখা গেছে বরাবরের মতোই ৮২ শতাংশের কিছু বেশি। এর মধ্যে নিটওয়্যারের রফতানি হয়েছে এক হাজার ১২ কোটি ৫৬ লাখ ডলার এবং ওভেন খাতের রফতানি আয় হয়েছে এক হাজার ১৩ কোটি তিন লাখ ডলার।

উল্লেখ্য, গত বছর দেশের পোশাক খাতের প্রবৃদ্ধির হার গত এক দশকের মধ্যে সর্বনি¤œ ছিল। সে কারণে অনেকেই পোশাক খাতের প্রবৃদ্ধিতে ধস নামার কারণে উদ্বেগ প্রকাশ করছিলেন। কিন্তু এ বছরের শুরু থেকেই পোশাক খাতের রফতানি আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। টাকার মূল্য ডলারের তুলনায় কিছুটা অবনমনের কারণে এ প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, গত অর্থবছরের শেষ দিকে পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে টাকার মান অবনমনের দাবি জানিয়ে আসছিলেন।

অবশ্য উল্লেখযোগ্য খাতগুলোর মধ্যে প্লাস্টিক পণ্যের রফতানি পাঁচ মাস ধরেই হ্রাস পেতে দেখা যাচ্ছে। নভেম্বরে প্রকাশিত অর্থবছরের প্রথম চার মাসের প্রতিবেদন অনুসারে, এ খাতে রফতানি আয় ছিল দুই কোটি ৯৭ লাখ ডলার, যা গত বছরের ওই সময়ের আয়ের চেয়ে ৪০ শতাংশ কম কম ছিল। লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও প্লাস্টিক খাতের রফতানি আয় পিছিয়ে ছিল ৩৫ শতাংশ। এ মাসের প্রতিবেদনেও দেখা যাচ্ছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩২ শতাংশ ও গতবছরের প্রথম আট মাসের আয়ের চেয়ে ২১ শতাংশ পিছিয়ে আছে প্লাস্টিক খাতের রফতানি আয়। এ খাতে গত আট মাসে রফতানি আয় হয়েছে ছয় কোটি ৪৯ লাখ ডলার।

চামড়া খাতের শুধু পাদুকার রফতানি কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও কাঁচা চামড়ার রফতানি গত বছরের চেয়ে কম হয়েছে। এই সময়ে চামড়া রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫ কোটি ৬১ লাখ ডলার। কিন্তু রফতানি হয়েছে ১২ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য মিলে এ সময়ে সর্বমোট সাড়ে ৭৮ কোটি ডলার রফতানি আয় হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পাঁচ শতাংশ কম।

এদিকে আলাদাভাবে শুধু ফেব্রুয়ারির রফতানির তথ্যেও দেখা গেছে ভালো প্রবৃদ্ধি। ফেব্রুয়ারিতে ৩০৭ কোটি ২১ লাখ ডলারের রফতানি হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রা থেকে প্রায় দেড় শতাংশ বেশি। গত বছরের ফেব্রুয়ারির রফতানি আয় ছিল ২৭০ কোটি ৫৯ লাখ। অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাসেই রফতানিতে ৩৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার বা সাড়ে ১৩ শতাংশ রফতানির প্রবৃদ্ধি হয়েছে।