রফতানি হচ্ছে বিষমুক্ত শিম

ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় বিষমুক্ত পদ্ধতিতে উৎপাদিত শিম দেশের গণ্ডি পেরিয়ে রফতানি হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের কাতার, কুয়েত, ওমান, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে। ভাগ্য বদল হচ্ছে কৃষকের, দেশে আসছে বৈদেশিক মুদ্রা। অধিক লাভ পেয়ে খুশিতে শিম চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষি পর্যায়ে। এ বছর উপজেলার এক গ্রামেই পাঁচ শতাধিক চাষি শিম চাষ করেছেন।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ভালুকা উপজেলার কাচিনা ইউনিয়নের কাচিনা ব্লকের তালাব গ্রামে আইপিএম প্রকল্পের মাধ্যমে সমন্বিত পদ্ধতিতে ব্যাপক শিম চাষ হচ্ছে। এতে ওই গ্রামের পাঁচ শতাধিক কৃষক পরিবারের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেছে। কৃষকদের পাশাপাশি কৃষানিরাও শিমসহ অন্য সবজি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। গত রোববার সরেজমিনে ওই গ্রামে গিয়ে কথা হয় জুলেখা বেগম নামে এক নারী শিমচাষির সঙ্গে। তিনি জানান, কয়েক বছর ধরে দুই বিঘা জমিতে শিম চাষ করে আসছেন। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া সবজি চাষের অনুকূলে থাকায় প্রতিবছর ভালো ফলন পাচ্ছেন। তিনি জানান, শিম বিক্রির টাকায় পরিবারের পুরো বছরের খাদ্যসংস্থানের পাশাপাশি ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচসহ সংসারের যাবতীয় খরচ চলে। তিনি স্বামীকে একটি মোটরসাইকেল কিনে দিয়েছেন। একটি টিনের ঘরও তৈরি করেছেন। তার ছেলেমেয়েরা এখন স্কুল-কলেজে পড়ছে। আগে সংসার চলত অনটনে। সবজি চাষের ব্যাপারে তিনি স্থানীয় কৃষি অফিসের সহযোগিতা নেওয়ার কথা জানান।

চাষি খোকা মোল্লা জানান, তিনি তিন বিঘা অর্থাৎ এক একর জমিতে শিম চাষ করেছেন। প্রতি বিঘায় বীজ বপন, সার, সেচ, মাচা তৈরিসহ খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকার মতো। এবার যে ধরনের ফলন হয়েছে তাতে অকস্মাৎ প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না এলে শিম বিক্রি করে প্রায় ৯০ হাজার থেকে এক লাখ টাকার মতো আয় হবে বলে আশা করছেন। এ বছর তিনি তিন বিঘা জমির শিম বিক্রি করে দুই লাখ টাকার মতো লাভ করতে পারবেন বলে আশা করছেন। ওই গ্রামে আনোয়ার হোসেন তিন বিঘা, মিজান দুই বিঘা, নূরুল ইসলাম এক বিঘা, আবদুল আজিজ এক বিঘা, আবুল কাসেম তিন বিঘা, সাদিক তিন বিঘা, কুলছুম দুই বিঘা, আছিয়া এক বিঘা, আমেনা ৩০ শতাংশ, জুলেখা দুই বিঘা, নার্গিস এক বিঘা, শরীফা ৫০ শতাংশ, মাসুমা এক বিঘা, হাসিনা তিন বিঘা, রোমানা দুই বিঘা, আবদুল রাজ্জাক ছয় বিঘা ও আকলিমা এক বিঘা জমিতে শিম চাষ করেছেন। তাদের মতো প্রায় ৫০০ কৃষক শিম চাষ করেছেন।

তালাব গ্রামের যে দিকে চোখ যায় মাচার ওপর সবুজ পাতার ওপরে শীষধরা লাল-সাদা ফুল আর চিকন লম্বা শিমের ঝোকা দেখা যায়। নিয়মিত পরিচর্চার পাশাপাশি অনেকে আবার বিক্রির জন্য মাচার ওপর থেকে শিম তোলায় ব্যস্ত রয়েছেন।

কাচিনা ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবদুল হক জানান, চলতি মৌসুমে তালাব গ্রামে শিমের আবাদ হয়েছে ১২০ হেক্টর, অর্থাৎ প্রায় ৩০০ একর জমিতে। অক্টোবরে জমি তৈরি করে শিমের বীজ বপন করতে হয়। চারা গজানোর কয়েক দিনের মধ্যে বাঁশের কাঠি দেওয়া হয় গাছ মাচায় ওঠার জন্য। সুতার জাল বুনে বাঁশের খুঁটির সঙ্গে সারা ক্ষেত জুড়ে তৈরি মাচায় এক মাসের মধ্যেই গাছ ছড়িয়ে পড়ে।

দুই মাসের মাথায় গাছে ফুল ও ফলন আসতে শুরু হয়। তিন মাসের সময় শিম বাজারজাত শুরু হয়। এই এলাকায় সাধারণত তিন ধরনের শিমের আবাদ হয়ে থাকে বলে জানায় স্থানীয় কৃষি অফিস। এগুলো হচ্ছে নলডুগ, ফুটকা ও বংশী। এর মধ্যে ফুটকা জাত সুস্বাদু হওয়ায় এর চাহিদাও বেশি। স্থানীয় কৃষকরা জানান, এলাকার ফরিয়া ও পাইকাররা কৃষকের কাছ থেকে শিম কিনে প্যাকেট করেন, যা ট্রাকভরে ঢাকার মহাজনরা এসে কিনে নিয়ে যান রফতানির জন্য। তবে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের সীডস্টোর বাজার থেকে ওই গ্রামে যাওয়ার প্রায় তিন কিলোমিটার সড়ক বেহাল। এতে পরিবহন খরচ বেশি হওয়ায় কৃষকরা উপযুক্ত মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে তাদের অভিযোগ। ওই গ্রামে চলাচলের রাস্তাটি সংস্কারের জন্য তারা সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাবিব উল্লাহ বাহার জানান, এখানকার উৎপাদিত সবজি গুণে-মানে অনেক ভালো। তাই দেশের পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশেও এর চাহিদা রয়েছে।

 

এম ইদ্রিছ আলী, ময়মনসিংহ

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০