নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের টেলিকম খাতে ব্যবসারত বহুজাতিক সেলফোন অপারেটরগুলোই এগিয়ে রয়েছে। গ্রাহক ধরে রাখার জন্য বিভিন্ন রকম অফারের পাশাপাশি নেটওয়ার্ক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিনিয়োগ করছে কোম্পানিগুলো। এর বিপরীতে বেশ পিছিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত একমাত্র সেলফোন অপারেটর টেলিটক। দেশজুড়ে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে না পারায় টেলিকম খাতে চলমান প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়েছে কোম্পানিটি। নেটওয়ার্ক উন্নয়নের মাধ্যমে চলমান সংকট কাটিয়ে উঠতে বহুজাতিক কোম্পানি রবির সঙ্গে সেলফোন টাওয়ার শেয়ার করছে টেলিটক। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চুক্তিও হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, প্রতিযোগী অন্য বহুজাতিক সেলফোন অপারেটরগুলো নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করতে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত টাওয়ার স্থাপন করেছে। বর্তমানে দেশজুড়ে বহুজাতিক কোম্পানি গ্রামীণফোনের প্রায় সাড়ে ১২ হাজার, রবির প্রায় সাড়ে ১০ হাজার ও বাংলালিংকের প্রায় সাড়ে নয় হাজার সেলফোন টাওয়ার রয়েছে। অন্যদিকে দেশীয় কোম্পানি টেলিটকের টাওয়ার রয়েছে চার হাজারেরও কম। প্রতিযোগী কোম্পানিগুলোর পর্যাপ্ত সেলফোন টাওয়ার থাকলেও অপর্যাপ্ত অবকাঠামো নিয়ে ধুঁকছে রাষ্ট্রায়ত্ত এ মোবাইল অপারেটরটি। অথচ প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্যই ন্যূনতম নয় হাজার টাওয়ার দরকার। অবকাঠামো উন্নয়নে মূলধনি ব্যয়ের জোগান না থাকা ও নতুন টাওয়ার স্থাপনের অনুমোদন নিয়ে জটিলতাসহ বেশকিছু কারণে কয়েক বছর ধরে টাওয়ার সংকটে ধুঁকছে টেলিটক। তাই এবার এ খাতের দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বহুজাতিক কোম্পানি রবির টাওয়ার ব্যবহারের পদক্ষেপ নিয়েছে টেলিটক। প্রায় এক সপ্তাহ আগে এ বিষয়ে রবি ও টেলিটকের মধ্যে চুক্তি হয়েছে। রবির ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও মাহতাব উদ্দিন আহমেদ ও টেলিটকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর কাজী মো. গোলাম কুদ্দুস টেলিটক প্রধান কার্যালয়ে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সমঝোতা চুক্তিতে সই করেছেন।
টেলিটকের এম অ্যান্ড ই ডিরেক্টর মো. শাহাব উদ্দিন শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বিটিআরসি নতুন করে মোবাইল টাওয়ার স্থাপনের অনুমতি দিচ্ছে। সংস্থাটি সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য টেলিকম খাতের অবকাঠামো শেয়ারিংয়ের ওপর জোর দিচ্ছে। তাছাড়া সবকিছু বিবেচনায় নতুন করে মোবাইল টাওয়ার স্থাপনের চেয়ে কোনো কোম্পানির সঙ্গে টাওয়ার শেয়ার করতে ব্যয় কম। এতে সময়ও কম লাগে। সে কারণেই আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এতে টেলিটকের গ্রাহকদের নেটওয়ার্ক-সংক্রান্ত জটিলতা কাটবে, যেটা কোম্পানি ও গ্রাহক দুই পক্ষের জন্যই ভালো হবে।’
চুক্তি অনুযায়ী, এখন থেকে দেশজুড়ে একে অপরের টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক সাইট শেয়ার করবে রবি ও টেলিটক। এর জের ধরে আরও বিস্তৃত হচ্ছে টেলিটকের নেটওয়ার্ক। এ চুক্তির কারণে কোম্পানি দুটির বর্তমান নেটওয়ার্ক সাইটগুলোর সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত হবে। আর লাইসেন্স পাওয়ার পর ফোরজি প্রযুক্তি চালুর দিক থেকেও এগিয়ে থাকবে রবি-টেলিটক।
উল্লেখ্য, বর্তমানে ব্যবসারত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর গ্রাহক বাড়লেও নজরদারি না থাকাসহ বেশকিছু কারণে পিছিয়ে পড়ছে টেলিটক। সঠিক পরিকল্পনার অভাব, পণ্য ও সেবার নি¤œমান, ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতা ও অনিয়মের কারণে লোকসানে রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি টেলিটক। ২৫ দশমিক ২০ মেগাহার্টজ বেতার তরঙ্গ নিয়েও গ্রাহকসংখ্যার দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে কোম্পানিটি। ২০০৪ সালে পথচলা শুরুর পর থেকেই ধুঁকছে টেলিটক। বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের পর কোম্পানিটির গ্রাহক কমে চলতি বছরের আগস্টে ২৯ লাখ ২৫ হাজারে নেমেছিল। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত গত বছরের নভেম্বর শেষে টেলিটকের গ্রাহকসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৪ লাখ ১৯ হাজার। কোম্পানিটিকে শক্তিশালী করার জন্য কয়েক বছরে দফায় দফায় ঘোষণা দেওয়া হলেও অবস্থার উন্নতি হয়নি।