Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 3:42 am

  রবি-এয়ারটেল একীভূতকরণ: ভ্যাট জটিলতায় আটকে আছে লাইসেন্স

পলাশ শরিফ: একীভূতকরণ প্রক্রিয়া শেষ হলেও এখনও লাইসেন্স পায়নি নতুন ‘রবি’। নির্ধারিত লাইসেন্স ফি’র ১০৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা বকেয়া, লাইসেন্স ফি’র ওপর প্রদত্ত ভ্যাট নিয়ে জটিলতা ও প্রযুক্তিগত শর্ত পরিপালন বিষয়ে ব্যাখ্যা না পাওয়ায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ওই বহুজাতিক কোম্পানিটির লাইসেন্স আটকে রেখেছে টেলিকম খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। তবে লাইসেন্স পাওয়ার আগেই ‘একীভূত হওয়া’র ঘোষণা দিয়েছে কোম্পানিটি।

নির্ভরযোগ্য সূত্রের তথ্যানুযায়ী, একীভূতকরণের জন্য তরঙ্গ সমন্বয় ফি ৩০৭ কোটি টাকা ও একীভূতকরণ ফি ১০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। মূল্য সংযোজন করসহ (ভ্যাট) রবির মোট পাওনা দাঁড়ায় ৪২৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এককালীন কিংবা তিনটি কিস্তিতে ওই অর্থ পরিশোধের নির্দেশ দেয় বিটিআরসি। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ২০ নভেম্বর বিটিআরসির পাওনার ৩১৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে রবি। এখনও রবির কাছে বিটিআরসির ১০৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে। ওই টাকা দুটি কিস্তিতে পরিশোধ করার কথা রয়েছে। তবে লাইসেন্স ফি’র ওপর প্রদত্ত মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) পরিশোধ নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে বিটিআরসির সঙ্গে রবির চিঠি চালাচালিও হয়েছে।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত রবি দ্বিতীয় কিস্তির পাওনা পরিশোধ করেনি। তবে বকেয়া ফি নিয়ে জটিলতা নেই। জটিলতা তৈরি হয়েছে ভ্যাট নিয়ে। রবি ভ্যাট হিসেবে পাওনা নগদে না দিয়ে তার বদলে ব্যাংক গ্যারান্টি দিতে চায়। ভ্যাট নিয়ে সিদ্ধান্ত হলে বকেয়া ফি নিয়ে চলমান জটিলতা কাটবে। বরির প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে রবির কাছ ভ্যাট নেওয়া বিষয়ে আইন ও পদ্ধতিগত দিকগুলো খতিয়ে দেখছে বিটিআরসি। সংস্থাটির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সংস্থাটির মুখপাত্র ও সচিব সারওয়ার আলম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘এখনও রবির কাছে ভ্যাটসহ বিটিআরসির প্রায় ১০৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা বকেয়া আছে। দুই কিস্তিতে এ টাকা পরিশোধ করার কথা। বকেয়া ফি দেওয়ার জন্য তারা প্রস্তুত বলেও জানিয়েছে। তবে ভ্যাটের অংশ পরিশোধ বিষয়ে রবি নতুন প্রস্তাব দিয়েছে। তারা নগদের বদলে ব্যাংক গ্যারান্টি দিতে চায়। রবির প্রস্তাব খতিয়ে দেখছে বিটিআরসি। সবকিছু বিশ্লেষণ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

লাইসেন্স না পেলেও একীভূত হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে রবি। গত বছরের ১৬ নভেম্বর কোম্পানিটির পক্ষ থেকে একীভূতকরণের চূড়ান্ত ঘোষণা দেওয়া হয়। ওইদিন সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রবির পক্ষ থেকে নতুন পথচলার তথ্য গণমাধ্যমকে জানানো হয়। অন্যদিকে ১০ ডিসেম্বর ধন্যবাদ জ্ঞাপনের জন্য রাজধানীর একটি হোটেলে জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে রবি ও এয়ারটেলের গ্রাহক, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসিসহ সংশ্লিষ্ট সব বিভাগকে ধন্যবাদও জানিয়েছে রবি।

রবির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কোনো তথ্য জানাতে চাননি। রবির জনসংযোগ শাখার দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে কয়েক দফায় যোগাযোগ করা হলেও কোনো উত্তর মেলেনি।

এদিকে ২০ নভেম্বর টেলিকম মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশি এ কে খান গ্রুপের যৌথ মালিকানায় ‘একটেল’ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৭ সালে। ২০১০ সালে মালিকানা বদলের পর ‘রবি’ নামে ব্যবসা শুরু করে কোম্পানিটি। একীভূতকরণের পর যৌথ মালিকানার ওই মোবাইল ফোন অপারেটর সেবাদাতা কোম্পানির মোট শেয়ারের মধ্যে ৬৮ দশমিক সাত শতাংশ শেয়ারের মালিক মালয়েশিয়ান আজিয়াটা গ্রুপ। এর বাইরে ভারতী এয়ারটেল ২৫ শতাংশ ও জাপানের এনটিটি ডোকোমো ছয় দশমিক তিন শতাংশ শেয়ারের মালিক। অন্যদিকে রবির তরঙ্গ ৩৪ দশমিক ৮০ মেগাহার্জে দাঁড়াবে। সাড়ে চার কোটি গ্রাহক নিয়ে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর মুঠোফোন অপারেটর কোম্পানি হবে রবি। একীভূত কোম্পানি রবির ‘০১৮’ ও এয়ারটেলের ‘০১৬’ কোডযুক্ত নম্বর অপরিবর্তিত রয়েছে।

২০১৫ সালে মালয়েশিয়াভিত্তিক কোম্পানি আজিয়াটার রবি ও ভারতীয় এয়ারটেলের মালিকানাধীন এয়ারটেল একীভূতকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে আজিয়াটা গ্রুপ বারহাদ (আজিয়াটা) ও ভারতী এয়ারটেল অব ইন্ডিয়া (ভারতী) বাংলাদেশে তাদের কোম্পানিগুলোকে একীভূতকরণের জন্য আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষর করে। এরপর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির কাছে আবেদন করে কোম্পানি দুটি। ২০১৬ সালের জুলাইয়ে আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে দুই কোম্পানির একীভূতকরণ ফি নির্ধারণ করা হয়। এরপর মূল্যায়ন কমিটি নির্ধারিত মাশুল ও একীভূতকরণের শর্ত অপরিবর্তিত রেখে গত বছরের ১ আগস্ট এ প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ওই বছরের ৩১ আগস্ট রবি-এয়ারটেলের একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেন উচ্চ আদালত। সে অনুযায়ী গত বছরের ২১ অক্টোবরের মধ্যেই একীভূতকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কথা ছিল। তবে বিটিআরসির নির্দেশনার কারণে প্রক্রিয়া ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত গড়িয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশে দুটি মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানির একীভূতকরণের ঘটনা এটিই প্রথম। তবে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে বড় একীভূতকরণের ঘটনা ঘটে ১৯৯৯ সালে। ওই বছর জার্মানির মোবাইল ফোন অপারেটর মানেসমানকে এক হাজার ৮০০ মার্কিন ডলার ব্যয়ে অধিগ্রহণ করে ব্রিটিশ কোম্পানি ভোডাফোন। সবশেষ ২০১০ সালে যুক্তরাজ্যের মোবাইল ফোন কোম্পানি ‘টি-মোবাইল’ ও ‘অরেঞ্জ’ একীভূত হয়ে এখন ‘এভরিথিং এভরিহোয়্যার (ইই)’ নামে ব্যবসা করছে।