Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 11:19 pm

রমজানের আগেই বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিন

আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেলের দাম বাড়ায় আবার দেশের বাজারে খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে সাত টাকা এবং বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে আট টাকা বাড়ছে। এছাড়া পাঁচ লিটারে ৩৫ টাকা ও পাম তেলে ১৫ টাকা বাড়ছে। গতকাল থেকেই এ দাম কার্যকর হয়। রোববার বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

ভোজ্যতেল বলতে আমাদের দেশে সয়াবিন তেল ও পাম অয়েলকেই বোঝায়। অন্য তেলের তুলনায় এ দুটির দাম কম হওয়ায় দেশের ভোক্তাসাধারণ এগুলোই ব্যবহার করেন। লক্ষণীয় বিষয় হলো, রোজার সময় তেলের ব্যবহার বাড়ে। ইফতারে বিভিন্ন ভাজাপোড়া খাবারের ব্যবহার বেশি। চাহিদা বিবেচনায় রোজাকেই লক্ষ করেন ব্যবসায়ীরা। অবশ্য দায় এড়াতে তারা রোজার দুমাস আগেই নিজেরা দাম বাড়িয়ে দেন বা সরকারের কাছ থেকে বাড়তি দামের বৈধতা আদায় করে নেন। ফলে রোজার সময় আর দাম বাড়াতে হয় না। ব্যবসায়ীরা বলেন, রোজার সময় দাম বাড়েনি। কয়েক বছর ধরে এ কৌশল দেখে আসছে দেশবাসী।

সরকারের সঙ্গে বৈঠকে ব্যবসায়ীরা বলেছেন, দাম সমন্বয় না করলে তারা ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারবেন না, তাদের লোকসান হচ্ছে। আমরা মনে করি, কেবল ব্যবসায়ীদের ‘অসুবিধা’ বিবেচনায় নেয়া হয়েছে, সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ নয়। এখন যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, তা যেন মেনে চলা হয়, সেটি তদারক করতে হবে।

আমরা জানি, ভোজ্যতেল নিত্যপণ্যের বাজার অস্থিতিশীল করতে বড় ভূমিকা রাখে। কিন্তু প্রতি বছর একই সময় একই কৌশলে দাম বাড়ানো হয়। কেন আগে থেকে ভোজ্য তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যবস্থা নেয় না? দেশে উৎপাদন কম হওয়ায় পণ্যটির জন্য নির্ভর করতে হয় আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর। দেশে মজুত থাকলেও আন্তর্জাতিক বাজারে দামের পরিবর্তন অনেক ক্ষেত্রেই ভোজ্যতেলের বাজার অস্থিতিশীল করে তোলে। আপৎকালীন সমস্যা মোকাবিলায় আগেই সমন্বিত ব্যবস্থা নেয়া উচিত। টিসিবির ন্যায্য মূল্যের দোকান বা ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে সাশ্রয়ী দামের পণ্য কিনতে ভিড় প্রতিদিনই বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের সম্পূর্ণ দোষ দেয়া ঠিক হবে না।’ আমরাও স্বীকার করি, সব দায় ব্যবসায়ীদের নয়।

রমজানের আগেই বাজার নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিতে হবে। কয়েক বছর ধরে দেশে রমজান ও নিত্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি যেন সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবারও ব্যত্যয় ঘটছে না। নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে সব মানুষই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। বিশেষ করে হতদরিদ্র, দরিদ্র ও নি¤œ আয়ের মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা ঝুঁঁকিতে পড়ে। নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা নিয়ন্ত্রণে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে রমজানে বহুল ব্যবহৃত খাদ্যদ্রব্য ও নিত্যপণ্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যে থাকে।