সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: দেশের প্রধান পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ, আছদগঞ্জ ও চাক্তাই এলাকার ভোগ্যপণ্যের আমদানিকারক ও বড় পাইকাররা আসন্ন রমজান মাসে পণ্যসামগ্রীর সরবরাহের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেন। এর মধ্যে নিজেদের মোকামে ভোগ্যপণ্য রকমারি ডাল, ছোলা, চিনি, খেজুর, মসলা জাতীয় পণ্যের মজুদ বাড়িয়েছেন তারা। বিদেশ থেকে আমদানি তথা পাইপলাইনে আরও কয়েক লাখ টন পণ্য খালাসের পথে আছে। যদিও আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধি, জাহাজ ভাড়া এবং ডলারের মূল্য বাড়ায় দাম কিছুটা বাড়তে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন। তবে পণ্য সরবরাহে কোনো ঘাটতি থাকবে না।
খাতুনগঞ্জ, আছদগঞ্জ ও চাক্তাই এলাকার ভোগ্যপণ্যের আমদানিকারক ও বড় পাইকার সূত্রে জানা যায়, আগামী এপ্রিলের শুরুতে রোজা শুরু হচ্ছে। কিন্তু জানুয়ারি থেকে আমদানিকারকদের গুদামে পৌঁছতে শুরু করেছে আমদানি করা ভোগ্যপণ্য সম্ভার। আর সব পণ্য গুদামে পৌঁছাতে আগামী এক মাস পর্যন্ত সময় লাগবে। তবে চট্টগ্রাম বন্দরে কোনো ধরনের জট না থাকায় এবার তাড়াতাড়ি ভোগ্যপণ্য আমদানি করে জাহাজ থেকে নামিয়ে নিজেদের গুদামে নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে বন্দর ঘিরে তাদের বাড়তি পরিবহন খরচ করতে হয়নি। ব্যবসায়ীদের মতে, এবার রমজানের প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য, যেমন ছোলা, ভোজ্যতেল, চিনি, খেজুর, বুটের ডাল ও মসুর ডালের প্রচুর সরবরাহ আছে। আমদানির পথে কার্গো জাহাজে আছে আরও কয়েক লাখ টন পণ্য। ফলে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহে কোনো ঘাটতির সমস্যা নেই। এর পরও রমজানে ভোগ্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকবে কি না, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা। তবে রমজানের পণ্য ছোলার বাজারে দাম নিন্মমুখী। কারণ করোনার কারণে গত বছরের অবিক্রীত বিপুল ভোগ্যপণ্য গুদামেই রয়ে গেছে; তার ওপর পণ্য আমদানিও স্বাভাবিক আছে। পর্যাপ্ত আমদানির পরও শেষ পর্যন্ত ছোলার দাম কমার আশঙ্কা করছেন পাইকাররা। অন্যদিকে ভোজ্যতেল নিয়ে এরই মধ্যে বাজারে টালমাটাল অবস্থা। ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার অজুহাতে অন্তত আট দফা দাম বাড়িয়েছেন। ফলে রমজানে ভোজ্যতেলের বাজার কেমন থাকে, এ নিয়ে ভয় রয়েছে। একই সঙ্গে চিনির বাজারও অনেকটা অস্থির।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরের জেটি ও বহির্নোঙরের ৭৭টি পণ্যবাহী জাহাজ আছে। এর মধ্যে ২২টি সাধারণ কার্গোবাহী জাহাজ আছে, ১৪ কনটেইনার জাহাজ, ছয়টি চিনিবাহী জাহাজ, নয়টি তেলবাহী, ১৮টি ক্লিংকারবাহী এবং অন্যান্য পণ্যবাহী জাহাজ আছে আটটি। এসব পণ্যবাহী জাহাজের মধ্যে ৫৬টি জাহাজ থেকে পণ্য খালাস হচ্ছে এবং ২১টি পণ্য খালাস হচ্ছে না। এছাড়া বহির্নোঙরের পণ্য নিয়ে অবস্থানকারী জাহাজ অপেক্ষায় আছে।
খাতুনগঞ্জ এলাকায় সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, বর্তমানে প্রতি মণ (৩৭.৩২ কেজি) চিনি বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৬০০ টাকা দরে, যা এক মাস আগেও বিক্রি হয়েছিল প্রায় কাছাকাছি দামে; দুই হাজার ৫০০ টাকায়। কিন্তু ছয় মাস আগে এই চিনি বিক্রি হয়েছিল দুই হাজার ১০০ টাকায়। সে হিসাবে ছয় মাসের ব্যবধানে পাইকারিতে চিনির দাম বেড়েছে প্রতি মণে ৪০০ টাকা। আর ছোলা বস্তাপ্রতি দুই হাজার ৩০০ টাকা থেকে দুই হাজার ৬৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। যদিও গত বছরে সর্বোচ্চ ৬৫ টাকা দরে অস্ট্রেলিয়ার ছোলা বিক্রি হওয়া ছোলা বর্তমানে ৬২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
রমজানের বাজার নিয়ে খাতুনগঞ্জের আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ‘রমজানের কেনাবেচা এখনও শুরু হয়নি। তবে শবেবরাতের কয়েক দিন আগে মূলত বেচাকেনা শুরু হলেও এখন থেকে কিছু বিক্রি হয়। কিন্তু গতবারের মতো এবার সেটিও দেখছি না। এখন ভোজ্যতেল ছাড়া অন্য কোনো পণ্যের দাম বাড়তি নেই। তবে বাজারে সরবরাহ একেবারেই স্বাভাবিক; বন্দর দিয়ে প্রচুর পণ্য আড়তে আসছে। ফলে রমজানের বাজার খুব অস্থির হবে না।’
খাতুনগঞ্জের বড় ভোগ্যপণ্যের আমদানিকারক এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘করোনার প্রভাবে এ বছরের আন্তর্জাতিক বাজারে অনেকগুলো ভোগ্যপণ্যের দাম চড়া আছে। সঙ্গে জাহাজ ভাড়া, কনটেইনার ভাড়া, মার্কিন ডলারের বিনিময় মূল্যও বেশি ছিল। ফলে বেশি দামে কিনতে হয়েছে। এরপরও আমদানি ঠিক আছে, সরবরাহও ভালো। বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ জট না থাকায় দ্রুত সময়ে পণ্য খাণাস হয়েছে। এটা একটা ভালো দিক। ফলে আসন্ন রমজানে দামে খুব বেশি হেরফের হবে না। তবে বাজারে রমজানকে ঘিরে বেচাকেনা একেবারেই নেই।’