নিজস্ব প্রতিবেদক: আজ বাদে আগামীকাল রমজান মাস শুরু হতে যাচ্ছে। তবে ইফতারের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ খেজুরের দাম নিয়ে কয়েক মাস ধরেই চলছে নানা বিতর্ক। চলতি অর্থবছরের বাজেটে খেজুরকে ‘বিলাসী পণ্য’ হিসেবে চিহ্নিত করে শুল্কহার ৫৮ শতাংশ নির্ধারণ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এতে খেজুরের দাম বেড়ে যায়। এছাড়া রমজানের ঠিক দুই মাস আগে খেজুরের শুল্কায়নযোগ্য মূল্য বেঁধে দিয়ে দামকে আরও উসকে দেয়া হয়।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের জারি করা এ-সংক্রান্ত আদেশটি সম্প্রতি শেয়ার বিজের হাতে এসে পড়েছে। এতে দেখা যায়, রপ্তানির ঠিক দুই মাস আগে গত ১০ জানুয়ারি মানভেদে খেজুরের শুল্কায়নযোগ্য মূল্য বেঁধে দেয়া হয় এবং সে অনুযায়ী খেজুরে শুল্ক আদায়ের নির্দেশনা দেয়া হয়। এক্ষেত্রে খেজুরের আমদানি মূল্য যাই হোক না কেন এনবিআরের বেঁধে দেয়া দরে শুল্কায়ন করার কথা বলা হয়েছে।
আদেশের তথ্যমতে, আজওয়া, মরিয়ম, মেডজুল, মাবরুর এবং রেফার কনটেইনারে আমদানিকৃত খেজুরের শুল্কায়নযোগ্য মূল্য হবে প্রতি কেজিতে চার ডলার। এর বাইরে অন্যান্য কার্টনজাত খেজুরের শুল্কায়নযোগ্য মূল্য হবে প্রতি কেজিতে আড়াই ডলার। আর রিটেইল প্যাকেটজাত খেজুরের শুল্কায়নযোগ্য মূল্য হবে প্রতি কেজিতে পৌনে তিন ডলার। এছাড়া বস্তায় আমদানিকৃত শুকনা খেজুরের শুল্কায়নযোগ্য মূল্য হবে প্রতি কেজিতে আড়াই ডলার এবং ভেজা বা গালা খেজুরে এক ডলার।
আমদানিকারকদের তথ্যমতে, আন্তর্জাতিক বাজারে সাধারণ বা নিম্নমানের খেজুরের ক্রয়মূল্য কেজিপ্রতি ৬৫ থেকে ৭৪ টাকা। কিন্তু এর অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু (শুল্কায়নযোগ্য মূল্য) এক ডলার বা ১২০ টাকা নির্ধারণ করে এই খেজুরের শুল্কায়ন করছে এনবিআর। এ কারণে ভোক্তা পর্যায়েও খেজুরের দাম বাড়ছে। আর ভালোমানের খেজুরের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে দেড় থেকে দুই ডলার। এতে দাম পড়ে সর্বোচ্চ ২৪০ টাকা। তবে এগুলোর দাম প্রতি কেজিতে ৪৮০ টাকা বা চার ডলার ধরে শুল্ক আদায় করছে এনবিআর।
আমদানিকারকদের ভাষ্যমতে, ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত খেজুর আমদানিতে টোটাল ট্যাক্স ইনসিডেন্স (টিটিআই) ছিল ১০ শতাংশ। তখন সাধারণ মানের খেজুরের অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু (শুল্কায়নযোগ্য মূল্য) ছিল টনপ্রতি ৫০০ ডলার। ফলে এই খেজুরে কেজিপ্রতি শুল্ক দিতে হতো পাঁচ টাকা ৪৫ পয়সা। কিন্তু চলতি অর্থবছরে অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু দ্বিগুণ করার পাশাপাশি কাস্টমস ডিউটি (সিডি), রেগুলেটরি ডিউটি (আরডি) এবং ভ্যাট মিলে শুল্ক-কর ৪৮ দশমিক ৬০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।
যদিও গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সরকার খেজুর আমদানিতে কাস্টমস ডিউটি ২৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করে। তবে শুল্কায়নযোগ্য অতিরিক্ত মূল্য নির্ধারণের কারণে খেজুরের দাম উচ্চই রয়ে গেছে।
বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফআইএ) সভাপতি সিরাজুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে শেয়ার বিজকে বলেন, নতুন অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু কার্যকর হওয়ায় পিপি ব্যাগে আসা প্রতি কেজি খেজুরে পাঁচ টাকা ৪৫ পয়সার পরিবর্তে ৬৪ টাকা ৪১ পয়সা, ড্রাই কনটেইনারে কার্টনে আসা খেজুরে ১০ টাকা ৯৩ পয়সার পরিবর্তে ১৬৯ টাকা ৯৭ পয়সা, রিফার কনটেইনারে আসা কার্টন খেজুরে ১০ টাকা ৯৩ পয়সার পরিবর্তে ২৭২ টাকা এবং রিটেইল প্যাকেটজাত খেজুরে ২১ টাকা ৮৪ পয়সার পরিবর্তে ১৮০ টাকা ৩৭ পয়সা শুল্ক দিতে হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, বাজারে সবচেয়ে কম দামি খেজুর জাহিদি জাতের। খেজুরটি প্রতি কেজি ৩০০ টাকায় পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছর ছিল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। অর্থাৎ এই জাতের খেজুরের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। এছাড়া দাবাস খেজুর গত বছর বিক্রি হয়েছিল ২৮০ টাকা কেজি দরে, এখন তা বিক্রি হচ্ছে হচ্ছে ৪৫০ টাকায়। বরই নামে পরিচিত খেজুর গত বছর প্রতি কেজি ২৫০ টাকায় বিক্রি হলেও এবার তা বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ টাকায়।
আজওয়া, মাবরুম ও মরিয়ম জাতের খেজুরের দামও অনেক বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি আজওয়া খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৯৫০ টাকায়, যা গত বছর ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল। মাবরুম বিক্রি হচ্ছে ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকায়, যা গত বছর ছিল ৫০০ থেকে ৫২০ টাকা। মরিয়ম বিক্রি হচ্ছে ৯৫০ থেকে এক হাজার টাকায়, যা গত বছর ছিল ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা। মেডজুল বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৩০০ টাকায়, যা গত বছর বিক্রি হয়েছিল ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায়। আলজেরিয়ান খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৫৮০ টাকায়, যা গত বছর ছিল ৪০০ টাকা।