তারাবির নামাজ পড়া যেমন সুন্নত, তেমনি তারাবিতে এক খতম কোরআন তেলাওয়াত করা ও শ্রবণ করাও সুন্নত। আরও অধিক খতম করতে পারলে, তা আরও বেশি ইবাদত।
এটা পবিত্র কোরআনের একটি স্বতন্ত্র হক এবং আল্লাহ তায়ালার অতি বড় এক ইবাদত। রমজান মাসে কোরআনুল কারিমে হক হলো, তাড়াহুড়া না করে ধীরস্থিরভাবে পূর্ণ কোরআন তেলাওয়াত করার পাশাপাশি কোরআনের ভাব-ভাষা-ভঙ্গির মর্মার্থ অনুধাবন করা। ইমাম জুহরি রহমাতুল্লাহি আলাইহি রমজান মাসের আগমনে বলতেন, ‘এ মাস হলো কোরআন তেলাওয়াত ও খাদ্যদানের মাস।’ হজরত সুফিয়ান সাওরি রহমাতুল্লাহি আলাইহি নিজে রমজান মাসে অন্যান্য সব নফল ইবাদতের চেয়ে কোরআন তেলাওয়াতে বেশি মশগুল থাকতেন। হাদিসে এসেছে কোরআন তেলাওয়াতকারী ব্যক্তির জন্য কোরআন সুপারিশকারী হবে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘রোজা ও কোরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। কোরআন বলবে, ‘হে আমার রব! আমি তাকে রাতে ঘুম থেকে বিরত রেখেছি। তাঁর সম্পর্কে আমার সুপারিশ কবুল করুন।’ তখন আল্লাহ তায়ালা রোজা ও কোরআনের সুপারিশ গ্রহণ করবেন।’ কোরআন তেলাওয়াত মানবকে পরিশুদ্ধ করে। কোরআন তেলাওয়াত করা মুমিনদের জন্য সওয়াবের কাজ। রমজান মাসে কোরআন তেলাওয়াত করলে অক্ষরপ্রতি ১০ নেকি হয় (তিরমিজি, মিশকাত ২১৩৭)।
তবে আল্লাহ কোরআন মনোযোগসহ শোনার জন্য আদেশ করেছেন। অতএব ছওয়াবের আশায় শুনলে ছওয়াব পাওয়া যাবে। আল্লাহ বলেন, ‘যখন কোরআন তেলাওয়াত করা হয়, তখন মনোযোগ দিয়ে শোনো এবং চুপ করে থাকো, যাতে তোমাদের ওপর রহমত হয়।’ (আ’রাফ ৭/২০৪)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আদমসন্তানের প্রত্যেক নেক আমলের ১০ গুণ থেকে ৭০০ গুণ ছওয়াব প্রদান করা হয়..’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত ৯/১৯৫৯)।
মিশকাত শরিফে বর্ণিত আছে, ‘লোহায় পানি লাগলে যেমন মরিচা ধরে, তেমনই মানুষের অন্তরগুলোয়ও মরিচা ধরে। মহানবী (সা.)কে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘হে আল্লাহর রাসুল (সা.) এর প্রতিষেধক কী?’ উত্তরে মহানবী (সা.) বললেন, ‘মৃত্যুকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করা এবং কোরআন তেলাওয়াত করা।’
আর যখন কোরআন পাঠ করা হয়, তখন তাতে কান লাগিয়ে রাখো এবং নিশ্চুপ থাকো, যাতে তোমাদের ওপর রহমত হয়। (সুরা আল আ’রাফ ২০৪)
হাদিসে এরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ যদি আল্লাহর সঙ্গে কথা বলতে চায়, তবে সে যেন বেশি করে কোরআন তেলাওয়াত করে।’ যে ব্যক্তি কোরআন তেলাওয়াত ও মুখস্থ করেছে, তার জন্য জান্নাতের সুসংবাদ। এ মর্মে রাসুল (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন কোরআন তেলাওয়াতকারীকে বলা হবে, কোরআন তেলাওয়াত করতে করতে জান্নাতে প্রবেশ করতে থাকো।’ সুতরাং কোরআন পাঠ জান্নাতে প্রবেশের উছিলা। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘ইবাদতগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম ইবাদত হচ্ছে কোরআন পড়া।’ তিনি আরও বলেন, ‘তোমরা কোরআন পড়। কারণ কিয়ামতের দিন এই কোরআন স্বীয় পাঠকের জন্য সুপারিশ করবে।’ (মুসলিম)
মাহে রমজানে আল-কোরআন তেলাওয়াতের ফজিলত সম্পর্কে নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি আল কোরআন শেখে এবং অপরকে তা শিক্ষা দেয়, সেই সর্বোত্তম।’ (বুখারি)
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে উল্লেখ আছে, তিনি বলেছেন, ‘রমজান মাসের প্রতি রাতে ফেরেশতা জিবরাইল (আ.) নবী করিম (সা.)-এর খেদমতে হাজির হতেন এবং তাঁরা উভয়ই কোরআন তেলাওয়াত করে একে অপরকে শোনাতেন।’ (বুখারি)
রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর উম্মতদের রমজান মাসে বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াতের নির্দেশ দিয়েছেন। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, ‘যদি কেউ আল্লাহর সঙ্গে বাক্যালাপ করার ইচ্ছা করে, তাহলে সে যেন আল কোরআন তেলাওয়াত করে।’ নবী করিম (সা.) বাণী প্রদান করেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআনের একটি অক্ষর পাঠ করে, সে একটি নেকি পায়, আর প্রত্যেকটি নেকি ১০টি নেকির সমান।’ রোজা ও কোরআন শরিফ কিয়ামতের দিন রোজাদারের জন্য আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করবে এবং আল্লাহ তাদের সুপারিশ কবুল করবেন।
মুহাম্মদ আকিল নবী