কোষ্ঠকাঠিন্য এমনিতেই একটি যন্ত্রণাদায়ক ও বিরক্তিকর সমস্যা। রমজান মাসে অনেকেরই এই প্রবণতা বেড়ে যায়। অনেক রোজাদার কমবেশি এ সমস্যায় ভোগেন। সাবধানতা অবলম্বন না করলে কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে মলত্যাগের সময় রক্তপাত এবং পাইলস ও অ্যানাল ফিশারের মতো জটিল সমস্যা দেখা দিতে পারে।
রোজায় কোষ্ঠকাঠিন্য বৃদ্ধির কারণ: রমজানে আমাদের খাদ্যাভ্যাসে ব্যাপক পরিবর্তন দেখা যায়। খাদ্যতালিকায় অধিক ভাজাপোড়াযুক্ত ও শাকসবজিহীন বা ফাইবারবিহীন খাবারের পরিমাণ বাড়ে। অপর্যাপ্ত পানি পান, গ্রীষ্মকালীন গরমে অধিক ঘামে সৃষ্ট হওয়া পানিশূন্যতা এবং দীর্ঘ ১৪-১৫ ঘণ্টা পানি পান করতে না পারার কারণও এর জন্য দায়ী। এ ছাড়া কিছু রোগ, যেমন হাইপোথাইরয়েডিজম এবং কিছু ওষুধের মধ্যে ক্যালসিয়াম, আয়রন, অ্যালুমিনিয়ামসমৃদ্ধ ওষুধ প্রভৃতি কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রভাব বাড়িয়ে দিতে পারে।
কীভাবে ভালো থাকবেন: ইফতারের পর থেকে সাহ্রি পর্যন্ত প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। খেতে হবে অধিক আঁশসমৃদ্ধ খাবার। যেমন ঢেঁকিছাঁটা চাল, লাল আটা, গোটা শস্য, শাকসবজি ও ফলমূল। যেসব খাবার শরীরে পানি কমিয়ে ফেলে, সেসব খাবার বা পানীয়, যেমন চা, কফি, অধিক মসলাযুক্ত ও তেল-চর্বিজাতীয় খাবার, ভাজাপোড়া ও মাংস কম খেতে হবে। ইফতারে অধিক চিনিযুক্ত পানীয় বা শরবত না খাওয়াই ভালো। যেসব ফলে পানির পরিমাণ বেশি, যেমন তরমুজ, শসা, বাঙ্গি ইত্যাদি বেশি খেতে পারেন।
খেজুর খাওয়া যেতে পারে, এটি কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে। আগে থেকেই কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে ইফতারে ইশবগুলের ভুসির শরবত খাওয়া যেতে পারে। এটি স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। নিয়মিত কায়িক পরিশ্রম ও শরীরচর্চা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়ক হতে পারে।
কোষ্ঠকাঠিন্যকে অবহেলা করা যাবে না। সাধারণত যারা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন, তাদের পরবর্তী সময়ে পাইলসসহ মলদ্বারের নানা রকম সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কোষ্ঠকাঠিন্যের পাশাপাশি যদি কারও মলত্যাগের আগে ও পরে রক্তপাত হয়, অথবা মলের সঙ্গে রক্তপাত হয়, মলত্যাগে ব্যথা অনুভব হয়, অথবা ওজন কমতে থাকে, তবে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ডা. মো. মাহবুবুর রহমান
সহকারী অধ্যাপক, ক্যাজুয়ালটি বিভাগ
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা