আসন্ন রমজানের আগে দেশে খেজুরের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার পর সরকারের এক মন্ত্রী ইফতারে খেজুরের পরিবর্তে বরই খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। ৪ মার্চ রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠানের শেষে শিল্পমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘খেজুর নিয়ে আমাদের অভাব-অভিযোগ আছে। বরই দিয়ে ইফতার করেন। খেজুর-আঙুর কেন লাগবে?’ ওই দিন বিকালেই সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও জাসদ সভাপতি রাজশাহীর এক সমাবেশে এই বক্তব্যের জোরালো প্রতিবাদ জানান। সেখানে তিনি শিল্পমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, গরিব মানুষ বরই খাবে, আর তুমি আঙুর আর খেজুর খাবা, তা হবে না।
এ অবস্থায় ইফতারিতে বরই কি খেজুরের বিকল্প হতে পারে কি না, সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। এটি মানতে হবে দেশপ্রেমের কারণে মন্ত্রী দেশি ফল বরই খেতে বলেছেন, তা নির্বোধও বলবে না। খেজুরের অনেক পুষ্টিগুণ আছে। প্রতিবারই রমজান এলে পুষ্টিবিদরা তা মনে করিয়ে দেন। তারা বলেন, সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতারিতে খেজুর সবচেয়ে উপকারী। এর সঙ্গে অন্য কোনো খাবার বা ফলের তুলনা চলে না, বরই তো নয়ই। বাংলাদেশসহ মুসলিম বিশ্বে রমজানের ইফতারিতে খেজুর খাওয়ার একটা প্রচলন রয়েছে। হাজার বছর ধরে যেটি সুন্নত বলে গণ্য। কেননা মুসলিম সমাজে ইফতারে খেজুর খাওয়ার প্রচলন রয়েছে ইমলাম ধমের প্রবর্তক নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর অনুসরণেই। এটিকে পুণ্যের কাজ বলে মনে করেন মুসলিমরা। এ অবস্থায় এটিকে ‘বিলাসী পণ্য’ আখ্যা দিয়ে অবস্থাসম্পন্নদের খাদ্য হিসেবে মনে করা দায়িত্ব এড়ানোর শামিল বলেই প্রতীয়মান। সাধারণ মানুষ সারা বছর খেজুর খান না। তারা কেবল রমজানেই সামর্থ্যমতো খেজুর কেনেন। ‘বিলাসী পণ্য’ হিসেবে তারা খেজুর কেনেন না। অবস্থাসম্পন্ন ব্যক্তিরা সারা বছরই খেজুর কেনেন।
অবশ্য শিল্পমন্ত্রীই খেজুরকে প্রথম ‘বিলাসী পণ্য’ বলেননি। খেজুরকে ‘বিলাসী পণ্য’ হিসেবে চিহ্নিত করে চলতি অর্থবছরের বাজেটে ৫৮ দশমিক ৬০ শতাংশ শুল্ক-কর আরোপ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। পাশাপাশি খেজুরের অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু তথা ট্যারিফ ভ্যালু দ্বিগুণ করা হয়েছে। যদিও গত মাসে খেজুরের শুল্ক ১০ শতাংশ কমানো হয়েছে। তবে দ্বিগুণ অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালুর জন্য খেজুরের দাম তেমন একটা কমেনি। খেজুর যেমন পুষ্টি জোগান দেয়, তেমনি এটি মুসলিমদের একটি আধ্যাত্মিক আকাক্সক্ষা। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠীর অনুভূতিকেও সম্মান দেখানো রাষ্ট্রের কর্তব্য। “
১০০ টাকার খেজুরকে ২০০ টাকা ধরে শুল্ক-কর আরোপ করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ১০ শতাংশ শুল্ক-কর বাড়িয়ে গত জুনে নির্ধারণ করা হয় ৫৮ দশমিক ৬০ শতাংশ। এই শুল্কহার বাড়ানোর কারণ দেখিয়ে একদিকে যেমন খেজুরের দাম বাড়ানো হয়েছে, অন্যদিকে তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম সংকট।
সুন্নত কিংবা ইসলামিক ঐতিহ্যগতভাবে কিংবা পুষ্টিগুণ বিবেচনায় ইফতারে খেজুরের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। আমারা বিশ্বাস করি, অন্তত রমজানে উপলক্ষে বাজারে খেজুরের মজুত, সরবরাহ ও সহনীয় মূল্য নির্ধারণে সরকার কার্যকর ব্যবস্থা নেবে।