নাজমুল হুসাইন: এবার আসন্ন রমজানে খেজুর, চিনি ও তেলের দাম গত বছরের তুলনায় বাড়িয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। এর মধ্যে খেজুরের দর প্রতি কেজিতে ৩০ টাকা, চিনি সাত টাকা ও প্রতি লিটার তেলের দাম পাঁচ টাকা বাড়ানো হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রমজান উপলক্ষে সংস্থাটির মাধ্যমে খোলাবাজারে বিক্রিযোগ্য পণ্যগুলোর মূল্যতালিকা প্রকাশ করেছে টিসিবি।
এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে উল্লিখিত পণ্য তিনটির মূল্য নিম্নমুখী হলেও এগুলোর দাম বাড়ানোর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। টিসিবি কর্তৃক মূল্য বৃদ্ধির কারণে বাজারে এসব পণ্যের দাম আরও বেড়ে যাবে এবং ক্রেতা-ভোক্তাদের ওপর বাড়তি চাপ পড়বে বলে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
টিসিবির মূল্যতালিকা অনুযায়ী, এ বছর প্রতি কেজি চিনি কিনতে একজন ভোক্তাকে গুনতে হবে সাত টাকা বেশি। গত বছর টিসিবির চিনির দাম ৪৮ টাকা থাকলেও এ বছর তা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫ টাকা। একইভাবে প্রতি কেজি সয়াবিন তেলের দাম পাঁচ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৫ টাকা ও সব থেকে বেশি খেজুরের দাম ৩০ টাকা বাড়িয়ে এবার ১২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও আগের মতোই মসুর ডাল ৯০ টাকা ও ছোলা ৭০ টাকায় পাবেন ভোক্তারা।
বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টিসিবির বর্ধিত এসব পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজারদর নি¤œমুখী। দেশের বাজারেও গত কয়েক মাস ধরে বিচ্ছিন্ন পরিস্থিতি ছাড়া চিনি-তেলের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। এমনকি টিসিবির এ বছরে নির্ধারিত পণ্যের দামের তুলনায় অনেক পণ্যের খুচরা বাজারদর প্রায় কাছাকাছি দাঁড়াচ্ছে। যেখানে এসব পণ্য কম দামে ভোক্তার কাছে পৌঁছে দিতে উল্টো প্রতিবছর ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার, তারপরও কেন এ দাম বৃদ্ধি? এমন প্রশ্নের কোনো সঠিক উত্তর মেলেনি টিসিবির পক্ষ থেকে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খোলাবাজারে পণ্যের দর নির্ধারণে সংশ্লিষ্ট (সিএমএস ও বিওবি) শাখার প্রধান কর্মকর্তা শাহাবুদ্দিন শেয়ার বিজকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার মন্তব্য করার কিছু নেই। এরপরও টিসিবির বোর্ড এ দাম নির্ধারণ করেছে। এতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনও রয়েছে।’
তবে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, টিসিবির পণ্য ক্রয়ে অযৌক্তিক ব্যয় বৃদ্ধির প্রভাব পড়ছে ভোক্তা পর্যায়ে। খেজুরে আন্তর্জাতিক ও দেশি টেন্ডার না পেয়ে খোলাবাজার থেকে অনেক বেশি দামে কিনতে হয়েছে টিসিবিকে। এতে খেজুর কিনতেই খরচ হয়েছে প্রায় ১১৫ টাকা। যা গত বছর ছিল ৯০ টাকার কিছু বেশি। ফলে এত টাকা ভর্তুকি না পেয়ে দাম বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে।
অপরদিকে জানা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিশিল্প করপোরেশন থেকে ৬০ টাকা দরে চিনি কিনেছে টিসিবি। তবে ক্রয়-পরবর্তী গুদাম ভাড়া ও অন্যান্য খরচ যোগ করে এ দর হয়েছে ৬৫ টাকা, যা ১০ টাকা ভর্তুকি দিয়ে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। একইভাবে দেশি কোম্পানির কাছে তেল কেনায় অগ্রিম ট্যাক্স হিসেবে পাঁচ শতাংশ ব্যয় বেশি টিসিবির।
এদিকে টিসিবির সারা দেশের কয়েকজন পরিবেশক জানান, টিসিবির পণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়বে তাদের ব্যবসাসহ সাধারণ ক্রেতাদের ওপর। দাম বৃদ্ধিতে বাজারের তুলনায় পার্থক্য এবার বেশ কম দাঁড়াচ্ছে। ফলে পণ্যগুলো কেনায় আগ্রহ হারাবেন ক্রেতা।
রমজান মাস উপলক্ষে আগামী ১৫ মে থেকে এসব পণ্য খোলাবাজারে বিক্রি শুরু হচ্ছে। দেশের বিভাগীয় জেলা শহরে ১৮৫টি ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে এসব পণ্য বিক্রি হবে। যার মধ্যে ঢাকায় থাকবে ৩৩টি। এছাড়া দুই হাজার ৮১১ জন পরিবেশক ও ১০টি খুচরা বিক্রয়কেন্দ্রের মাধ্যমেও পণ্য বিক্রি হবে।
এবার প্রতিটি ট্রাকে দৈনিক ৩০০ থেকে ৪০০ কেজি চিনি, ২৫০ থেকে ৩০০ কেজি মসুর ডাল, ৩০০ থেকে ৪০০ কেজি সয়াবিন, ৩০০ থেকে ৪০০ কেজি ছোলা ও ২০ থেকে ৩০ কেজি খেজুর বিক্রির জন্য বরাদ্দ দেওয়া হবে। যদিও গত বছর প্রতি ট্রাকে আরও বেশি পরিমাণ ছোলা ও খেজুর বরাদ্দ ছিল। এ বছর প্রত্যেক ভোক্তা সর্বোচ্চ পাঁচ কেজি চিনি, তিন কেজি মসুর ডাল, পাঁচ লিটার তেল, পাঁচ কেজি ছোলা ও এক কেজি খেজুর কিনতে পারবেন।
ঢাকায় সচিবালয় গেট, প্রেস ক্লাব, কাপ্তানবাজার, আজিমপুর ছাপড়া মসজিদ, পলাশী মোড়, সায়েন্স ল্যাব মোড়, নিউমার্কেট, শ্যামলী-কল্যাণপুর, জিগাতলা মোড়, খামারবাড়ি-ফার্মগেট, কলমিলতা বাজার, মহাখালী, শেওড়াপাড়া, কচুক্ষেত, মিরপুর-১০ ও মিরপুর-১, আনসার ক্যাম্প-পাইকপাড়া, আগারগাঁও-তালতলা, শান্তিনগর বাজার, মালিবাগ বাজার, বাসাবো বাজার, বনশ্রী, বাংলাদেশ ব্যাংক চত্বর, মহাখালী কাঁচাবাজার, দৈনিক বাংলা মোড়, শাহজাহানপুর বাজার, রামপুরা বাজার, আশকোনা হাজি ক্যাম্প, উত্তরার রাজলক্ষ্মী, মোহাম্মদপুর কাঁচাবাজার, দিলকুশা, মাদারটেক নন্দীপাড়া, কালশী মোড়ে টিসিবির পণ্য পাওয়া যাবে বলে জানানো হয়েছে টিসিবির পক্ষ থেকে।
Add Comment