Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 1:11 am

রমজানে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে তৎপর হোন

উৎসব-পার্বণ উপলক্ষে সব দেশেই কিছু পণ্যের চাহিদা বাড়ে। ওই পণ্যগুলো নিছক উপহারের পণ্য, নিত্যপণ্য নয়। ওই পণ্য প্রতিদিন কেনা হয় না। কেবল বিশেষ দিনেই কেনা হয়। তাই ওই পণ্যগুলোর দাম বাড়লেও সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ে না। এদিক দিয়ে আমাদের দেশ ভিন্নতর। দামি বিলাসী পণ্য নয়, সুযোগ পেলেই নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়। প্রতি বছরই রোজা সামনে রেখে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ে। এবারও ব্যত্যয় হয়নি।

‘রোজা শুরুর আগেই চড়া মাছ-মাংসের দাম’ শীর্ষক প্রতিবেদনে গতকাল শেয়ার বিজের প্রতিবেদক জানিয়েছেন, নিন্ম মধ্যবিত্ত তো বটেই, মধ্যবিত্তরাও নাগাল পাচ্ছেন না নিত্যপণ্যের। হাড়ছাড়া গরুর মাংস কেজিপ্রতি ৮০০ টাকা আর হাড়সহ ৭০০-৭৫০ টাকা। খাসির মাংসের কেজি ৯৫০ থেকে এক হাজার টাকা। ব্রয়লার ১৮০, লেয়ার ২৬৫ ও কক মুরগি ৩৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বড় দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি ৫০০, মাঝারি ৪৫০ ও ছোট মুরগি ৪০০ টাকায়। অথচ গত সপ্তাহেও গরুর মাংস ৬০০-৬৫০ টাকা, খাসির মাংস ৯০০ টাকা ও ব্রয়লার ১৭০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হয়েছে। কী কারণে হঠাৎ করেই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ল, তা বলতে রাজি হননি কোনো মাংস বিক্রেতা। একাধিক বিক্রেতা বলেন, রোজার সময় একটু দাম বাড়েই। কয়েক বছর ধরে ব্যবসায়ীরা একই কৌশল নেন। আগেই দাম বাড়িয়ে নেন সংঘবদ্ধভাবে। এবারও বাড়িয়েছেন কয়েকবার। এরপরও রমজানের আগেই আবার বাড়ল। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগও বাড়বে।

বাজারে মজুত, দাম তদারকি ও নিয়ন্ত্রণে কাজ করা সরকারি সংস্থাগুলো বলেছে, রমজানে নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক থাকবে। কিন্তু দাম ‘স্বাভাবিক’ থাকল না, সশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরাই স্বীকার করবেন। সংযম ও আত্মশুদ্ধির রমজান মাসে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মুসলিম সম্প্রদায় আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টা করেন। ধর্মপ্রাণ ব্যবসায়ীরা ধর্মকর্ম নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। অথচ তাদের কর্মীরদের ধর্মের অনুশাসন মেনে পণ্য বিক্রির নির্দেশনা দেন। মন্ত্রীরাও রোজার মাসে ধর্মের বিধান মেনে ব্যবসার পরামর্শ দেন। দুর্ভাগ্যজনক, তবুও দাম বেড়ে যায়!

কভিডকালে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা যে কমেছে, তা মানতে হবে। সরকারের পদক্ষেপ সত্ত্বেও নিত্যপণ্যের অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি থামানো যায়নি। এ ব্যর্থতা নাকি অসততা, তা খতিয়ে দেখা উচিত। উদার বাণিজ্য ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বাজার অস্থিতিশীল করলে দায়িত্বশীল সরকার দর্শকের ভূমিকা থাকতে পারে না। ব্যবসার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে মুনাফা করতেই হবে। কিন্তু অতিরিক্ত মুনাফার আশায় অনৈতিক কর্মকাণ্ড সমর্থনযোগ্য নয়। ব্যবসায়ীরা প্রতিবছরই রোজার প্রাক্কালে একই কৌশলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করলেও এ প্রবণতা বন্ধ করা যায়, এর দায় এড়াতে পারে না নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো। রমজানে নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে কঠোর হওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই।