রমজান মাস এলেই বাজারে এক ধরনের অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। নানা অজুহাতে নিত্যপণের দাম বাড়িয়ে দেন বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা। যেমনÑবাজারে বেড়েই চলছে পেঁয়াজের দাম। শুক্রবারই আগের সপ্তাহে ১১০ টাকা কেজির পেঁয়াজ কেজিপ্রতিতে আরও ১০ টাকা বেড়েছে। এমনকি বিশেষে একই পেঁয়াজ ১৩০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে। ওইদিনই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কোনো সংকট হবে না বলে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘রমজানে কোনো কিছুর (অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের) অভাব হবে না। এরই মধ্যে সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোনো সমস্যা হবে না।’
প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার তার সরকারি বাসভবন গণভবনে সাম্প্রতিক জার্মানি সফর সম্পর্কে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন। ব্যবসায়ীদের প্রতি কিছুটা বিরক্তও তিনি। নানা সুযোগ-সুবিধা দেয়ার পরও ব্যবসায়ীরা জনভোগান্তির কারণ হচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী বলতে বাধ্য হয়েছেন, মজুত করে রেখে পচিয়ে যারা বস্তায় বস্তায় পেঁয়াজ পানিতে ফেলে, তাদের কী করা উচিত? এদের গণধোলাই দেয়া উচিত।
উৎসব-পার্বণ উপলক্ষে সব দেশেই কিছু পণ্যের চাহিদা বাড়ে। ওই পণ্যগুলো নিছক উপহারের পণ্য, নিত্যপণ্য নয়। ওই পণ্য প্রতিদিন কেনা হয় না। কেবল বিশেষ দিনেই কেনা হয়। তাই ওই পণ্যগুলোর দাম বাড়লেও সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ে না। এদিক দিয়ে আমাদের দেশ ভিন্নতর। দামি বিলাসী পণ্য নয়, সুযোগ পেলেই নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়। প্রতি বছরই রোজা সামনে রেখে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ে। এবারও ব্যত্যয় হয়নি। ব্যবসায়ীরা প্রতিবছরই একই কৌশল নেন। আগেই দাম বাড়িয়ে নেন সংঘবদ্ধভাবে। ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার সুযোগ নেই। আর রমজানে দাম বৃদ্ধি না পাওয়ায় অভিযোগ করারও সুযোগ থাকে না। বরং ব্যবসায়ীরাই বলেন ‘দাম বাড়েনি’। বাজার দাম তদারকি ও নিয়ন্ত্রণে সরকারের কয়েকটি সংস্থা জড়িত। বাজার যাচাই করে সেগুলো জানায়, রমজানে নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক রয়েছে। কিন্তু রমজানের প্রাক্কালে পণ্যের দাম যে পরিমাণ বাড়ানো হয়, পরে তা আর কমানো হয় না।
বাজারব্যবস্থার স্বাভাবিক গতি যোগসাজশের মাধ্যমে বাধাগ্রস্ত করা হলে ভোক্তাস্বার্থের হানি ঘটে, অন্যদিকে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর পড়ে এর বিরূপ প্রভাব। গত কয়েক বছরে সরকারের পদক্ষেপ সত্ত্বেও নিত্যপণ্যের অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি কেন থামানো যায়নি, তা খতিয়ে দেখা উচিত। উদার বাণিজ্য ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে স্বার্থান্বেষী কতিপয় ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বাজারের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত করার অপচেষ্টা রোধে সরকারকে শক্ত ভূমিকা রাখতে হবে। বাজার নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা সরকারি সংস্থাগুলোর তৎপরতায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির আওতায় আসতে হবে। ব্যবসায়ীরা ব্যবসার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন। ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে মুনাফা করতেই হবে। কিন্তু মুনাফা অর্জনের নামে অনৈতিক কর্মকাণ্ড সমর্থনযোগ্য নয়। আসন্ন রমজানে নিত্যপণ্যসহ সব ধরনের পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে তাদারকি ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে; প্রয়োজনে সাঁড়াশি অভিযান, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।