শেয়ার বিজ ডেস্ক;প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পবিত্র রমজান মাস সামনে রেখে খাদ্যে ভেজাল, মজুতদারি, কালোবাজারি ও নিত্যপণ্যের সংকট সৃষ্টির অপচেষ্টাকে অত্যন্ত ‘গর্হিত কাজ’ বলে উল্লেখ করে এসবের বিরুদ্ধে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘খাদ্যে ভেজাল দেয়া, মজুতদারি বা কালোবাজারি এবং নিত্যপণ্যের সংকট সৃষ্টিÑএটা যেন কেউ করতে না পারে সেজন্য সবাইকে আমি সতর্ক থাকার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বৃহস্পতিবার দেশব্যাপী আরও ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন। সূত্র: বাসস।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামনে রমজান মাস। এ সময় আমাদের কিছু ব্যবসায়ী জিনিসের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করে। এটা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। কারণ রমজান কৃচ্ছ্র্রসাধনের সময় এবং মানুষ যাতে ভালোভাবে তাদের ধর্মকর্ম এবং রোজা পালন করতে পারে, সেদিকে সবার দৃষ্টি দেয়া উচিত। সে সময় এসব মুনাফালোভীদের জিনিসের দাম বাড়ানো আর মানুষকে বিপদে ফেলার কোনো মানে হয় না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ইমামরা যখন মসজিদে জুমার নামাজের খুতবা দেন, তখন কালোবাজারি বা মজুতদারি বা খাদ্যে ভেজাল দেয়া আর অযথা মানুষকে কষ্ট দেয়া যে গর্হিত কাজ, সে ব্যাপারে মানুষকে আপনাদের আরও বলা উচিত। খুতবাতেও এটা বলতে পারেন বা মানুষকে সচেতন করতে পারেন।
তিনি বলেন, সেভাবেই কাজ করতে আমি মসজিদের সম্মানিত ইমাম ও খাদেমদের অনুরোধ করব। তাহলে মানুষের মধ্যে অতিরিক্ত মুনাফা নেয়ার প্রবণতা নিশ্চয়ই কমবে।
নিম্নআয়ের মানুষের ন্যায্যদামে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে সরকার পারিবারিক কার্ডের ব্যবস্থা করেছে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা অধিক দামে চাল ক্রয় করে ৩০ টাকা মূল্যে বিভিন্ন পরিবারকে দিচ্ছি। রমজানকে সামনে রেখে আরও এক কোটি মানুষকে ১৫ টাকা কেজি দরে আমরা চাল সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছি এবং একেবারে কর্মক্ষমতাহীনদের বিনা পয়সায় ৩০ কেজি করে চালও দিয়ে যাচ্ছি। মানুষের যাতে কষ্ট না হয়, সেজন্য সরকার ন্যায্য দামে এ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে।
বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের কাজ সরকার যাতে আরও ভালোভাবে এগিয়ে নিতে পারে, সেজন্য সবার কাছে দোয়া চান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তৃতীয় ধাপে এসব মডেল মসজিদ উদ্বোধন করেন।
প্রধানমন্ত্রী তিনটি ধাপে সারাদেশে ৯ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য ৫৬৪টি মসজিদের মধ্যে এ পর্যন্ত ১৫০টি মসজিদ উদ্বোধন করেছেন। সরকারপ্রধান প্রথম দফায় ২০২১ সালের ১০ জুন ৫০টি মসজিদ এবং চলতি বছর ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় দফায় আরও ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করেন।
অবশিষ্ট মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নির্মাণকাজ ২০২৪ সালের জুনে শেষ হবে। এসব মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলোয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাসহ ওজু ও নামাজের আলাদা জায়গা রয়েছে।
এছাড়া হজযাত্রীদের জন্যে রেজিস্ট্রেশন ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা, ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, গবেষণা কেন্দ্র ও ইসলামিক লাইব্রেরি, অটিজম কর্নার, দাফনপূর্ব আনুষ্ঠানিকতা, গাড়ি পার্কিং সুবিধা, হিফজখানা, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ও কোরাআন শিক্ষা ব্যবস্থা, ইসলামিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও ইসলামের দাওয়াতের জন্যে সম্মেলন কেন্দ্র, ইসলামি বই বিক্রি কেন্দ্র, মসজিদসহ দেশি-বিদেশি অতিথিদের জন্য থাকার সুবিধা রয়েছে।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান ও মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী এনামুল হাসানও অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিন হাজার ১২৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয়ে পাঁচ বছর মেয়াদি মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পের সপ্তম পর্যায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় এক কোটি ২১ লাখ ৫১ হাজার শিক্ষার্থীকে প্রাক-প্রাথমিক, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা দেয়া হচ্ছে।
এ প্রকল্পের মাধ্যমে তার সরকার ৭৫ হাজার ৮৮৩ জন আলেমের সম্মানীর ভিত্তিতে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে বলেও তিনি জানান।
সরকার প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘দারুল আরকাম ইবতেদায়ি মাদ্রাসা স্থাপন ও পরিচালনা’ শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদন করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে এক হাজার ১০টি দারুল আরকাম ইবতেদায়ি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মসজিদগুলোকে ইসলামি জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে মসজিদ পাঠাগার স্থাপন প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশে প্রায় ২৮ হাজার মসজিদ পাঠাগার স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া ‘মসজিদ পাঠাগার সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পের মাধ্যমে আরও দুই হাজার ৫০০ নতুন পাঠাগার স্থাপন ও আড়াই হাজার পাঠাগারে পুস্তক সংরক্ষণের জন্য আলমারি দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
