Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 5:38 pm

রমজান ঘিরে ব্যস্ত মুড়ি গ্রামের গৃহিণীরা

পবিত্র রমজানে ইফতারের অন্যতম উপাদান মুড়ি। মুড়ির আসল স্বাদ পেতে আসুন টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলায়। দেশের বিভিন্ন স্থানে এ এলাকার মুড়ির চাহিদা সারা বছরব্যাপী থাকলেও রোজার সময় এর চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। তাই উপজেলার নারান্দিয়া ইউনিয়নের মুড়ি গ্রামের গৃহিণীরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন মুড়ি ভাজার কাজে।
ব্যস্ততার পাশাপাশি তাদের মাঝে দেখা গেছে হতাশাও। পুঁজি সংকট ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে প্রতিযোগিতায় টেকা যাচ্ছে না মেশিনে ভাজা মুড়ির সঙ্গে।
মুড়ি ভাজার কারিগররা বাপ-দাদার এ পেশা ছেড়ে এখন অনেকেই অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। তবে এখনও এখানকার প্রায় ৬০০ পরিবার জীবিকা নির্বাহ করে হাতে মুড়ি ভেজে। পুরুষেরা বাজারজাত করলেও মুড়ি ভাজার সব কাজ করেন নারীরা। এ গ্রামগুলোয় প্রতিদিন প্রায় ৩০০ মণ মুড়ি ভাজা হয়। মুড়ি ভাজার জন্য চাল, লবণ, খোলা, বালু খোলা, ঝাইনজোর, চালুন, ছামনি ও পাট কাঠি ব্যবহার করতে হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিদিন ভোর থেকেই গৃহিণীরা মুড়ি ভাজার কাজ শুরু করেন। অনেকে চালুন চালিয়ে মুড়ি থেকে বালু ছাড়াচ্ছেন, কেউ বস্তা ভরছেন। আবার এ সব কাজ অনেক বাড়িতে এক জনেই করছেন। ব্যবসায়ীরা নারান্দিয়ার মুড়ি পিকআপ-ভ্যানযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছেন।
ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের ল²ী রানী মোদক জানান, ‘মুড়ি ভাজা বেশ কঠিন, রাত ৩টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত মুড়ি ভাজি। মেশিনের মুড়ি বাজারে আইলেও আমাগো হাতে ভাজা মুড়ির স্বাদ ও চাহিদা এহনো আছে।’ একই গ্রামের জীতেন মোদক জানান, বংশ পরম্পরায় এ মুড়ি ভাজার পেশায় আমরা নিয়োজিত আছি। এ হাতে ভাজা মুড়ি বিক্রি করেই আমার সংসার চলে। স্বপন কুমার মোদক জানান, রমজানের ২০ থেকে ২৫ দিন আগে থেকেই মুড়ির ধান সংগ্রহ করি। রমজানের এক থেকে দুদিন আগে মুড়ি ভাজার কাজ শুরু হয়। প্রতি মণ বিক্রি করছি ৩২০০ টাকায়। মাইস্তা গ্রামের প্রমেলা বেগম বলেন, ‘ভোর রাত থেকে ভাজা শুরু করি। হাতে মুড়ি ভাজা মেলা কষ্ট, খরচও বেশি। খড়ির দামও বেশি ও লবণের দামও মেলা বাইরা গেছে। শুনছি সরকার নারীগো মেলা সাহায্য করে কিন্তু এহন পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনো সুযোগ-সুবিধা পাই নাই।’
মুড়ি ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম জানান, বাড়ি বাড়ি গিয়ে মুড়ি কিনে ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করি। এ হাতে ভাজা মুড়িতে কোনো রকম ভেজাল নেই। এ মুড়িতে শুধু লবণ-পানি ছাড়া আর কিছুই দেওয়া হয় না। তাই এর চাহিদা তুলনামূলক বেশি।

শাহরিয়ার সিফাত