রমজান মুমিনদের আল্লাহর রহমত লাভের সুযোগ করে দিয়েছে

পবিত্র রমজানুল মোবারককে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম ১০ দিন রহমতের। এই সময়ে আল্লাহর অফুরন্ত রহমত বর্ষিত হতে থাকে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের সামনে রমজান মাস হাজির। এটি অত্যন্ত বরকতপূর্ণ মাস। এ মাসের রোজা আল্লাহ তোমাদের ওপর ফরজ করেছেন। এ মাসে এমন একটি রাত আছে, যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। যে লোক এই রাতের মহাকল্যাণ লাভ থেকে বঞ্চিত থাকল, সে প্রকৃতই সবকিছু থেকে বঞ্চিত ব্যক্তি।’

মহাবরকত ও কল্যাণের মাস মাহে রমজানে বেশি বেশি দোয়া-দরুদ পাঠ, তওবা-ইস্তেগফার ও প্রার্থনার মাধ্যমে আল্লাহর রহমতের ভাগীদার হওয়া যায়। রমজান মাসের প্রতিটি মুহূর্ত মহান আল্লাহর বিশেষ রহমতে পরিপূর্ণ। রোজা পালনের মধ্য দিয়ে মুমিন বান্দারা আত্মিকভাবে নিজেদের গড়ে তুলতে সক্ষম হন। তাই আল্লাহতায়ালা রোজাদারদের জন্য পবিত্র রমজান মাসে তার রহমতের দরজা অবারিত করে দেন। রমজানে রোজাদার আল্লাহর কাছে যত চাইবে, আল্লাহ ততই দেবেন। যে বান্দা আল্লাহর কাছে চায়, আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট হন। আল্লাহর কাছে চাওয়ার ক্ষেত্রে কখনও কুণ্ঠিত হওয়া উচিত নয়।

আমরা প্রত্যেকেই আল্লাহর রহমতের মুখাপেক্ষী। প্রতিটি মুহূর্তে আমাদের রহমতের প্রয়োজন পড়ে। যারা দুনিয়াতে সফল হয়েছেন, সবাই আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতপ্রাপ্ত। রমজান আমাদের আল্লাহর রহমত লাভের অনন্য সুযোগ করে দিয়েছে। এই দশকে আমরা বেশি করে তওবা, ইস্তেগফার ও দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি। আমরা আল্লাহর দিকে যত দ্রুত এগিয়ে যাব, আল্লাহ এর চেয়ে শতগুণ বেশি বেগে আমাদের দিকে ছুটে আসবেন। আল্লাহর রহমতও এমনই। যারা এবাদতের মাধ্যমে আল্লাহকে রাজি-খুশি করতে পারবে; দুনিয়া-আখেরাতে আল্লাহর রহমত তাদের সঙ্গী হবে। আর কারও জীবনে আল্লাহর রহমতের বারিধারায় সিক্ত হওয়ার সুযোগ হলে এর চেয়ে সৌভাগ্যের আর কিছু নেই। রমজানে এই সুবর্ণ সুযোগ পেয়েও যারা কাজে লাগাতে পারবে না, তারা বড়ই হতভাগা। হাদিসে আছে, ‘যে রমজানে তার গোনাহ ক্ষমা করাতে পারল না, তার চেয়ে হতভাগা আর নেই।’

রমজান মাসকে আল্লাহতায়ালা অন্য সব মাসের ওপর মর্যাদাবান করেছেন। রমজানে বান্দার ইবাদত-বন্দেগি প্রার্থনা সহজেই মঞ্জুর হয় আল্লাহর দরবারে। আসুন আমরা এতিমদের হক আদায়ে যত্নবান হই। আত্মীয়দের খোঁজখবর নিই। নিজের ভাষা ও দৃষ্টিকে সংযত রাখি। রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসে রোজা রাখার মাধ্যমে কিয়ামত বা বিচার দিবসের ক্ষুধা-তৃষ্ণাকে স্মরণ করার উপদেশ দিয়েছেন। হাদিসে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তির দুটি দিন একই রকম হলো, সে হতভাগ্য; অর্থাৎ একজন মুসলমান বা মুমিনের আজকের আমল গতকালের চেয়েও উন্নত হওয়া জরুরি।

রমজানের বিশেষ ক’টি দোয়া: ইয়া আল্লাহ! আমার আজকের রোজাকে প্রকৃত রোজাদারের রোজা হিসেবে গ্রহণ করুন। আমার নামাজকে কবুল করুন। গাফিলতির ঘুম থেকে আমাকে জাগ্রত করুন। হে রাব্বুল আলামিন, আমার সব গুনাহ মাফ করে দিন। হে অপরাধীদের অপরাধ ক্ষমাকারী! ক্ষমা করে দিন আমার যাবতীয় অপরাধ।

ইয়া আল্লাহ! আপনার রহমতের অসিলায় আজ আমাকে আপনার সন্তুষ্টি নসিব করুন। আপনার ক্রোধ আর গজব থেকে আমাকে দূরে সরিয়ে রাখুন। আমাকে তৌফিক দিন আপনার পবিত্র কোরআনের আয়াত তেলাওয়াত করার।

ইয়া আল্লাহ! আজকের দিনে আমাকে সচেতনতা ও বিচক্ষণতা দান করুন; আমাকে দূরে রাখুন অজ্ঞতা, নির্বুদ্ধিতা ও ভ্রান্ত কাজকর্ম থেকে। এদিনে যত ধরনের কল্যাণ দান করবেন, তার প্রত্যেকটি থেকে আপনার দয়ার অসিলায় আমাকে কিছু দান করুন। হে সর্বোত্তম দাতা।

হে আল্লাহ! এদিনে আমাকে রোজা পালন ও নামাজ কায়েমে সাহায্য করুন। আমাকে অন্যায় কাজ ও সব গুনাহ থেকে রক্ষা করুন। আপনার তৌফিক ও শক্তিতে সব সময় আমাকে আপনার স্মরণে থাকার সুযোগ দিন, হে পথহারাদের পথ প্রদর্শনকারী।

হে আল্লাহ! এদিনে আমাকে আপনার রহমতের অধিকারী করুন। আমাকে পরিচালিত করুন আপনার উজ্জ্বল প্রমাণের দিকে। হে আগ্রহীদের লক্ষ্যস্থল। আপনার ভালোবাসা ও মহব্বতের অসিলায় আমাকে আপনার পূর্ণাঙ্গ সন্তুষ্টির দিকে নিয়ে নিন।

মুহাম্মদ আকিল নবী

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০