রশিদ বিল্ডিংয়ে গঠিত হয় ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’

কাজী সালমা সুলতানা: ১৯৪৭ সালের ১ অক্টোবর তমদ্দুন মজলিসের উদ্যোগে ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ নামে একটি সর্বদলীয় সংগঠন গঠিত হয়। এই সংগঠনের প্রথম আহ্বায়ক হন অধ্যপক নূরুল হক ভূঁইয়া। অন্যান্য প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের মধ্যে ছিলেন সামসুল আলম, আবুল খয়ের, আব্দুল ওয়াহেদ চৌধুরী ও অলি আহাদ। পরবর্তীকালে এই কমিটিতে মোহাম্মদ তোয়াহা ও সৈয়দ নজরুল ইসলাম যোগ দেন। প্রথম আহ্বায়ক ভূঁইয়ার সময়কালে কমিটির সব ধরনের কর্মকাণ্ড গোপনে পরিচালনা করা হয়।

সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গেটের কাছে রশিদ বিল্ডিং নামে একটি বাড়ি ছিল। বাড়িটি এখন আর নেই। সেই রশিদ বিল্ডিংয়ের এক কামরায় তমদ্দুন মজলিসের অফিস ছিল। সেখানেই সর্বপ্রথম ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়। পাকিস্তান সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ফজলুল রহমান উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করা, আরবি হরফে বাংলা লেখা প্রভৃতির সপক্ষে সভাসমিতি ও সংবাদপত্রের মাধ্যমে অনেক বিতর্কের অবতারণা করেন। তিনি ছিলেন পাকিস্তান সরকারের বাংলাবিরোধী অন্যতম মুখপাত্র।

রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন হওয়ার পরপরই শিক্ষামন্ত্রী ফজলুল রহমান ঢাকায় আসেন। এসময় (১৯৪৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি) আবুল কাশেমসহ পরিষদের আরও কয়েকজন সদস্য তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎকারে তালিকা থেকে বাংলা ভাষাকে বাদ দেয়া, পাকিস্তানের মুদ্রা, ডাকটিকিট প্রভৃতি ক্ষেত্রে বাংলা ভাষা স্থান না পাওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। ফজলুল রহমান বলেন, বাংলা ভাষাকে বাদ দেয়ার ব্যাপারটি একেবারেই ইচ্ছাকৃত নয়। তিনি ভুল সংশোধনের আশ্বাস দেন। তবে মুদ্রা, ডাকটিকিট ও পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষার বিষয় ছাড়াও পাকিস্তানের নৌবাহিনীতে পূর্ব পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও লোক নিয়োগের জন্য উর্দু ও ইংরেজি পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা হয়।

১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন করাচিতে শুরু হয়। গণপরিষদের মুসলিম লীগদলীয় বাঙালি সদস্যরা বাংলাকে গণপরিষদের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার বিরুদ্ধে ভোট দেয়ার খবর ঢাকায় পৌঁছালে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। মুসলিম লীগদলীয় সদস্যদের এই আচরণের বিরুদ্ধে ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছাত্র ধর্মঘট পালিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়) এবং স্কুলের ছাত্ররা রাস্তায় মিছিল করে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে প্রত্যক্ষ আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১৯৪৮ সালের ২ মার্চ ফজলুল হক হলে পূর্ববাংলার সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কর্মীদের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় উপস্থিত উল্লেখযোগ্য কর্মীদের মধ্যে ছিলেন ১. কমরুদ্দিন আহমেদ, ২. রণেশ দাশ গুপ্ত, ৩. অজিত গুহ (প্রগতিশীল লেখক সংঘ), ৪. আবুল কাশেম (তমদ্দুন মজলিশ), ৫. নঈমুদ্দীন আহমদ, ৬. তফাজ্জল আলী (পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ), ৭. মোহাম্মদ তোয়াহা (গণতান্ত্রিক যুবলীগ), ৮. শহীদুল্লা কায়সার (ছাত্র ফেডারেশন), ৯. সরদার ফজলুল করিম, ১০. তাজউদ্দীন আহমদ প্রমুখ। সভায় সভাপতিত্ব করেন কমরুদ্দিন আহমেদ। এই সভায় ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’কে সর্বদলীয় রূপ দেয়া হয়। এই কমিটির আহ্বায়ক হন শামসুল আলম।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০