রসুন এসিলিন (Alliacec) পরিবারভুক্ত কন্দজাতীয় গুরুত্বপূর্ণ মসলা। খাবারের স্বাদ, গন্ধ ও রুচি বাড়াতে ভূমিকা রাখে এটি। রসুনে নানা পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এসব উপাদান অজীর্ণ, পেটফাঁপা, হƒদরোগ, অর্শ, কৃমি, সর্দি, কাশি, টাইফয়েড, ডিপথেরিয়া, বাতরোগসহ চর্মরোগ সারিয়ে তুলতে বেশ কার্যকর। রসুন থেকে তৈরি করা হয় নানা ধরনের ওষুধ। এসব ওষুধ ফুসফুসের রোগ, হুপিং কাশি, বাত, কানব্যথা প্রভৃতি উপশম করে।
রসুনে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, তেল, খনিজ পদার্থ, আঁশ ও ভিটামিন ‘সি’। রসুনের তেলে সালফারজাতীয় পদার্থ বিদ্যমান। যৌবন রক্ষায় এর ব্যবহার চোখে পড়ে। এর অ্যালিসিন রক্তের কোলেস্টেরল কমায়।
ভেষজ গুণে সমৃদ্ধ রসুন বেশ ঝাঁঝালো। এ কারণে কাঁচা অবস্থায় খেতে পারেন না অনেকে। রসুন প্রক্রিয়াকরণ করে নানা পণ্য তৈরি করা হয়। রসুনের চাটনি এর মধ্যে অন্যতম, যা এরই মধ্যে মুখরোচক খাবার হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে।
মাঠ থেকে রসুন সংগ্রহের সময় পানি পেলে সংরক্ষিত রসুন দ্রুত পচে যায়। তাছাড়া অনেক সময় রসুনের কোয়াগুলো রসুন হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এগুলোর সংরক্ষণ ক্ষমতা তুলনামূলক কম। সংগত কারণে এ-জাতীয় রসুন কৃষককে অল্প দামে বাজারে বেচে দিতে হয়। এসব রসুন সংগ্রহ করে কম খরচে রসুনের চাটনি তৈরি করা সম্ভব।
রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলার কৃষি, খাদ্য ও পুষ্টিমেলায় রসুনের চাটনি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছে। এতে রসুনের সংরক্ষণজনিত সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি কৃষককে কিছুটা আর্থিক ক্ষতি থেকে রক্ষা করা গেছে। কৃষক তাদের উৎপাদিত পণ্যের ক্ষতি হ্রাস ও উপযুক্ত দাম পেলে পরবর্তী সময়ে উৎপাদন বাড়াতে উৎসাহ পাবে। আর্থিকভাবে তারা লাভবান হবে। সে সঙ্গে বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান হবে।
রসুনের চাটনি তৈরির প্রণালি উপকরণ

ছিলা রসুন এক কেজি, সরষের তেল ২৫০ মিলিগ্রাম, সিরকা ২০০ মিলিগ্রাম, লবণ সাত গ্রাম, জায়ফল ১০ গ্রাম, জয়ত্রী ১০ গ্রাম, পোস্তদানা ২০ গ্রাম, পাঁচফোড়ন ২০ গ্রাম, গুঁড়ো মরিচ পাউডার আট গ্রাম, গোলমরিচ দুই গ্রাম, এলাচ পাঁচ গ্রাম, জিরা পাঁচ গ্রাম, চিনি ৫০০ গ্রাম, তেঁতুল ২০০ গ্রাম
প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি
চুলা, কড়াই, রিফ্রাক্টোমিটার, স্টিল বা মেলামাইন পাত্র প্রভৃতি
প্রস্তুত প্রণালি
# প্রথমে খোসামুক্ত রসুন পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন
# কড়াইয়ে পানি নিয়ে চুলায় বসিয়ে ফুটাতে হবে
# রসুনের কোয়াগুলো ফুটন্ত পানিতে ঢেলে সেদ্ধ করতে হবে
# সেদ্ধ কোয়াগুলো ব্লেন্ডিং করে মণ্ড তৈরি করতে হবে
# কড়াইয়ে তেল উত্তপ্ত করে মসলার পেস্ট কষিয়ে নিতে হবে
# সিরকা মেশাতে হবে
# কষানো মসলায় রসুনের মণ্ড যোগ করতে হবে
# চার থেকে পাঁচ মিনিট জ্বালানোর পর চিনি দিতে হবে
# পরে তেঁতুলের নির্যাস যোগ করতে হবে
# মণ্ডে আঠালো ভাব হওয়া পর্যন্ত আবারও জ্বাল দিতে হবে
# টিএসএস মাত্রা ৬৫ হলে জ্বাল দেওয়া বন্ধ করতে হবে
# সবশেষে মণ্ডটি নামিয়ে ঠাণ্ডা করলেই হয়ে যাবে মজাদার চাটনি
# জীবাণুমুক্ত শুকনো কাঁচের বোতল বা বৈয়ামে চাটনি ঢালতে হবে
# বোতলের মুখ ভালোভাবে আটকিয়ে ঠাণ্ডা জায়গায় সংরক্ষণ করুন
ব্যবহার
রসুনের চাটনি মুখরোচক ও সুস্বাদু খাবার। রুটি কিংবা ভাতের সঙ্গেও খাওয়া যায় এটি। তবে কোনো প্রিজারভেটিভ কিংবা কেমিক্যাল ছাড়া এ চাটনির বিপণন হলে তা সমাদৃত হবে।
আবিদ হোসেন বুলবুল, গাজীপুর
মন্তব্য