Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 2:42 am

রহমত আলীর বিসিএসে প্রথম হওয়ার গল্প

নিজের ভালোলাগা আর বাবার উৎসাহে ক্যাডার সার্ভিসের প্রতি ভালোবাসা জন্মে তার। তাই স্নাতকোত্তরে পড়ালেখার পাশাপাশি বিসিএসের প্রস্তুতি নিয়েছেন। প্রথমবার অংশ নিয়েই পররাষ্ট্র ক্যাডারে প্রথম হওয়ার সাফল্য অর্জন করেন। রহমত আলী শাকিলের বিসিএসে প্রথম হওয়ার গল্প এটি। এক আলাপনে নবীন বিসিএস পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। তার সাফল্যের গল্প ও পরামর্শের কথা জানাচ্ছেন আলী ইউনুস হদয়

স্কুলে পড়ার সময় ক্যাডার সার্ভিসের প্রতি ভালোলাগা শুরু হয়। বাবা উৎসাহ দিতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর বিসিএসের প্রতি আগ্রহ বাড়তে থাকে। বিশেষ করে পররাষ্ট্র ক্যাডারের প্রতি আকর্ষণ তুলনামূলকভাবে বেশি ছিল। স্নাতকে সারা বছর ক্লাস-ল্যাব নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হতো। তখন বিসিএসের প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হয়নি। স্নাতকোত্তরে পড়ার সময় বন্ধুদের দেখে বিসিএসের ফরম পূরণ করেন। নিশ্চিত ছিলেন না পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারবেন কি না। স্নাতকোত্তরের থিসিস জমা দেওয়ার সময়ে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার মাত্র দুই মাস সময় হাতে ছিল। সময় নষ্ট না করে পুরোদমে পড়াশোনা শুরু করলেন। গণিত ও ইংরেজির বেসিক ভালো ছিল। টিউশনি করানোর ফলে গণিত ও বিজ্ঞান চর্চার মধ্যেই ছিল। দুই মাসের মধ্যে সাধারণ জ্ঞান, বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্য শেষ করে ফেলেন।
চাকরির বাজারে দেশের সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতির শুরু এভাবেই হয়েছিল রহমতের। পরিশ্রম ও মেধা দিয়ে ৩৭তম বিসিএসে (সুপারিশকৃত) পররাষ্ট্র ক্যাডারে প্রথম স্থান অর্জন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সাবেক এই শিক্ষার্থী স্নাতক পর্যায়ে ৩.৯৮ ও স্নাতকোত্তরে ৩.৯৬ সিজিপিএ পেয়ে বিভাগে প্রথম হন। অর্জন করেছেন প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক ২০১৫ ও ডিনস অ্যাওয়ার্ড।
আমাদের সমাজে একটি ধারণা রয়েছে যে, একাডেমিক রেজাল্ট ভালো যাদের, তাদের বিসিএসের ফল ভালো হয় না। এসব কথায় কান না দিয়ে রহমত আলী নিজের মতো করে প্রস্তুতি নিতে থাকেন। ভাবতেন, প্রিলি পাস না করলেও কিছু অভিজ্ঞতা তো হবে। তবে যখন দেখলেন প্রিলিতে টিকে গেছেন, তখন পুরোদমে লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করলেন। ল্যাবে গবেষণা প্রকল্পের কাজের পাশাপাশি বিসিএসের প্রস্তুতি নেন। ল্যাবে কাজের ফাঁকে ও রাতে বাসায় ফিরে লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতেন। ল্যাবের সহকর্মীদের সঙ্গে সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেন, যা লিখিত ও ভাইভা পরীক্ষায় অনেক কাজে লেগেছে। আর যেদিন ল্যাবে কাজ থাকত না, সেদিনের পুরোটাই পড়ালেখা করে কাটিয়ে দিতেন।
প্রস্তুতিতে বিশেষ কৌশল ছিল, টপিক ধরে টানা পড়তেন। একটি বিষয়ের ওপর একাধিক সহায়ক ও রেফারেন্স বই অনুসরণ করতেন। প্রথমে পরিকল্পনা করে নিতেন, কতটুকু সময়ে কতটুকু পড়া শেষ করবেন। তারপর সে অনুযায়ী পড়তেন। নিয়মিত পত্রিকা পড়তেন। বিশেষ করে অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক ও সম্পাদকীয় পাতা দেখতেন। একই খবর ইংরেজি পত্রিকা থেকে পড়ে নতুন ইংরেজি শব্দ রপ্ত করতেন। লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির সময় যেসব বিষয়ে বেশি নম্বর আসে, সেগুলো আগে পড়তেন।
সাফল্যের গল্প সম্পর্কে রহমত আলী বললেন, পরীক্ষার সময় নির্ভার ছিলাম। সামনে আরও সুযোগ ছিল। বিসিএসে না হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কিংবা দেশের বাইরে গবেষণার সুযোগ ছিল। তাই চাপমুক্ত থেকে প্রিলি ও লিখিত পরীক্ষা দিয়েছি। পরীক্ষা ভালো হয়েছিল। ফল প্রকাশের আগেই ভাইভার প্রস্তুতি নিতে শুরু করি। ভাইভা ভালো হয়েছিল। পরীক্ষা শেষে নিজের ওপর বিশ্বাস ছিল যে, ক্যাডার পাব। তবে পররাষ্ট্র ক্যাডারে প্রথম হব এতটা ভাবিনি।
বিসিএস পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ক্যাডার নির্বাচন ভেবেচিন্তে করতে হবে। গণিত ও ইংরেজির ক্ষেত্রে কোনো কম্প্রোমাইজ করা যাবে না, শুরু থেকে ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। যেহেতু বিসিএস পরীক্ষা অনেক প্রতিযোগিতামূলক, সেজন্য প্রিলি ও লিখিত পরীক্ষার সিলেবাস সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা রাখতে হবে। একইসঙ্গে দুটো সিলেবাসের আলোকে প্রস্তুতি নিতে হবে, কারণ প্রিলিমিনারির পর লিখিত পরীক্ষার জন্য পর্যাপ্ত সময় থাকে না। আর ইংরেজির শব্দ বেশি না পড়ে ব্যাকরণ ও সাহিত্য বেশি পড়তে হবে। মনে রাখবেন, ইংরেজি আর গণিতে দুর্বলতা মানেই পিছিয়ে পড়া। ভাইভা নিয়ে পরে চিন্তা করতে হবে। নিয়মিত পত্রিকা পড়তে হবে। সমসাময়িক বিষয়গুলো সম্পর্কে আপডেট থাকতে হবে। নিজের মতো করে প্রস্তুতি নিন। চাপমুক্ত থেকে পরীক্ষা দিতে হবে।
রহমত আলী গাজীপুরের কাওরাইদ কেএন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং রাজধানীর বিএএফ শাহীন কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পার হন। বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার নিগুয়ারী গ্রামে। অবসরে হিস্ট্রিক্যাল মুভি দেখা এবং ইংরেজি ও মানসিক দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য গেমস খেলতে পছন্দ করেন। এছাড়া গল্প ও উপন্যাস বই পড়েন।