কোরআন নাজিলের মাস রমজান। শবেকদরের মাস রমজান। জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাস রমজান। জান্নাত লাভের মাস রমজান। তাই রমজান মাস কাক্সিক্ষত, প্রার্থিত। রমজান ও রোজা, তথা সিয়াম সাধনার বিধিবিধান, নিয়মকানুন, রীতিনীতি, মাসআলা মাসায়িল ভালোভাবে জেনে আমল করলেই রমজানের শিক্ষা, লক্ষ্য ও দর্শন অর্জিত হবে। তা না হলে রোজা উপবাস ভিন্ন আর কিছুই নয়।
রমজানের ফরজ
রমজান মাসে ফরজ হলো একটি এক মাস রোজা পালন করা। কোরআনুল কারিমে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মোমিনরা! তোমাদের জন্য রোজা ফরজ করা হলো, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের আগে যারা ছিল তাদের প্রতিও, যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পারো।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৩)। রোজা ওইসব ব্যক্তির ওপর ফরজ, যারা প্রাপ্তবয়স্ক, স্বাভাবিক জ্ঞানসম্পন্ন ও শারীরিকভাবে রোজা পালনে সক্ষম। যদি কেউ মুসাফির বা সফর অবস্থায় থাকে, অথবা অসুস্থতার কারণে রোজা পালনে অপারগ হয়, তবে তারা রোজার পরে কাজা আদায় করতে পারবে। যদি কোনো ব্যক্তি সুস্থ হয়ে কাজা আদায় করার সুযোগ বা সামর্থ্য ফিরে না পাওয়ার আশঙ্কা করে, তবে সে বা তার পক্ষ থেকে রোজার ফিদইয়া প্রদান করতে হবে। ফিদইয়ার পরিমাণ হলো প্রতি রোজার জন্য এক ফিতরার সমান। আল্লাহতায়ালার বাণী, ‘তোমাদের মধ্যে যদি কেউ অসুস্থ থাকে অথবা সফরে থাকে, তবে তাদের নির্ধারিত সংখ্যা (রোজা) পরে পূর্ণ করে নেবে; আর যারা রোজা পালনে অসমর্থ, তার (প্রতি রোজার বিনিময়ে) একজন মিসকিনকে খাদ্য ফিদইয়া দেবে। আর যারা উত্তম কর্ম অতিরিক্ত বেশি করবে, তা তার জন্য কল্যাণকর। যদি তোমরা রোজা পালন কর, তবে তা তোমাদের জন্য, যদি তোমরা বুঝতে!’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৪)। ফিদইয়া প্রদানের পরে যদি আবার রোজা পালনের সামর্থ্য ফিরে আসে, তবে ওই রোজা কাজা আদায় করতে হবে। উল্লেখ্য, হালাল বা বৈধ উপার্জন এবং হালাল রিজিক বা পবিত্র খাবার ছাড়া নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতসহ কোনো ইবাদতই আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না।
রমজানের ওয়াজিব
রমজানের ওয়াজিব দুটি। যথা: সদকাতুল ফিতর আদায় করা ও ঈদের নামাজ পড়া। ঈদের দিন সকালে যিনি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক বা অধিকারী থাকবেন, তিনি তার নিজের ও পরিবারের সব সদস্যের ফিতরা আদায় করবেন। যদি কেউ নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক নাও থাকেন, তবু সুন্নত বা নফল হিসেবে হলেও সদকাতুল ফিতরা প্রদান করা উত্তম।
রমজানের সুন্নত
রমজান মাস উপলক্ষে বিশেষ কিছু সুন্নত রয়েছে। যথা: রজব ও শাবান মাস থেকে রমজানের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা, রজব ও শাবান মাসে অধিক পরিমাণে নফল রোজা রাখা ও নফল নামাজ আদায় করা, শাবান মাসের চাঁদের তারিখের হিসাব রাখা, রমজানের চাঁদ দেখা, সাহ?রি খাওয়া, তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা, ইফতার করা ও করানো, বিশ রাকাত তারাবির নামাজ আদায় করা, পবিত্র কোরআন বেশি বেশি তিলাওয়াত করা ও ইতিকাফ করা। রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোয় শবেকদরের সন্ধান করা এবং এই দোয়া পড়া, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নি।’ অর্থ, ‘হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমা পছন্দ করেন, সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দিন।’
রমজানের মুস্তাহাব, মুস্তাহসান ও নফল আমলগুলো
রমজান মাসের বিশেষ নফল আমলগুলো হলো পবিত্র কোরআন একাধিকবার খতম বা পূর্ণ পাঠ করা, কালিমা তৈয়্যেব অধিক পাঠ করা, দরুদ শরিফ সর্বাধিক পরিমাণে পাঠ করা, তওবা ও ইস্তিগফার করতে থাকা, সর্বদা তাসবিহ তাহলিল ও জিকির আজকার করতে থাকা। ধর্মীয় বই-পুস্তক, কোরআন তাফসির, হাদিস, ফিকহ নিজে পড়া ও অন্যকে পড়তে সাহায্য করা। অধীনস্থ কর্মচারী ও শ্রমিকদের কাজের চাপ কমিয়ে দেয়া এবং তাদের পূর্ণ মজুরি ও অতিরিক্ত সম্মানি প্রদান করা, বেশি বেশি দান-খয়রাত করা প্রভৃতি (বুখারি শরিফ, প্রথম খণ্ড, ইমান অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: ৩৭, হাদিস: ৪৮, পৃষ্ঠা: ৩৮)।
মুহাম্মদ আকিল নবী