Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 9:36 pm

রাউজান বিসিক শিল্পনগরী জমি অধিগ্রহণেই শেষ প্রকল্পের মেয়াদ

মোহাম্মদ আলী, চট্টগ্রাম: উদ্যোক্তাদের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে চট্টগ্রামের রাউজানে একটি শিল্পনগরী গড়ে তুলছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশন (বিসিক)। এ শিল্পনগরী থেকে উৎপাদিত পণ্য রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পাশাপাশি বেশ কিছু মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্য রয়েছে। কিন্তু শিল্পনগরী স্থাপন প্রকল্পের অগ্রগতি হতাশাজনক। ভূমি অধিগ্রহণ করতেই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তিন বছরমেয়াদি প্রকল্পের মেয়াদ শেষে অগ্রগতি মাত্র ২৫ শতাংশ। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। তবে সংশোধিত প্রকল্পের আরডিপিপি অনুমোদন হতেই কেটে গেছে আরও আট মাস। দুই বছর মেয়াদি সংশোধিত প্রকল্পের বাকি আছে ১৬ মাস। ফলে সংশোধিত প্রকল্পের কাজও নির্ধারিত সময়ে শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

জানা যায়, চট্টগ্রামের রাউজান পৌর এলাকার জলিল নগরে ‘বিসিক শিল্পনগরী রাউজান’ শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন করা হয়। ৭৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকার প্রকল্পটি মেয়াদকাল ধরা হয়েছিল ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত। ৩৫ একর জমির ওপর গড়ে তোলা হচ্ছে শিল্পনগরীটি। এতে ১৮৪টি শিল্প প্লটে ১৪৮টি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ইউনিট স্থাপিত হবে। এ শিল্পনগরী কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন, অর্থনৈতিক উন্নতি এবং জিডিপিতে অবদান রাখবে।

প্রকল্পের আওতায় রয়েছে ৩৫ একর ভূমি অধিগ্রহণ। এর মধ্যে ৩০ লাখ ২২ হাজার ঘনমিটার ভূমির উন্নয়ন, ৩৭৫ বর্গমিটার প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ ও ৪৬ বর্গমিটার পাম্প ড্রাইভার কোয়ার্টার নির্মাণ করা হবে। এছাড়া অন্য কার্যক্রমগুলো হচ্ছে ২০ হাজার ৪১৫ বর্গমিটার অভ্যন্তরীণ সড়ক নির্মাণ, ৭১ হাজার মিটার ড্রেন নির্মাণ, পাঁচ দশমিক ৩২ কিলোমিটার বৈদ্যুতিক লাইন নির্মাণ, ছয় হাজার ৪৫০ মিটার গ্যাসলাইন স্থাপন, একটি ডিপ টিউবওয়েল স্থাপন, দুই দশমিক পাঁচ কিলোওয়াট সোলার প্যানেল, ২০টি কালভার্ট ক্রস ড্রেন ও প্লট তৈরি। এ শিল্পনগরীতে মোট ১৮৪টি প্লটের মধ্যে ছয় হাজার বর্গফুটের ৯০টা ‘এ’ টাইপের, পাঁচ হাজর ৪০০ বর্গফুটের ৪৮টি ‘বি’ এবং বিভিন্ন সাইজের ৫২টি ‘সি’ টাইপের প্লট হবে। প্লটগুলো রপ্তানিজাত তৈরি পোশাকশিল্প, আইসিটি/সফটওয়্যার শিল্প, পাট ও পাটজাত দ্রব্য, ওষুধ, আসবাবপত্র, প্লাস্টিক, হালকা ইঞ্জিনিয়ারিং, জুয়েলারি ও কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপনের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হবে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, ভূমি অধিগ্রহণ করতেই এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। গত জানুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ২৫ দশমিক ৫২ শতাংশ। আর ব্যয় হয়েছে ২৩ কোটি ৯১ লাখ এক হাজার টাকা। ফলে প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পের সংশোধিত আরডিপিপি গত ২৭ ফেব্রুয়ারি পরিকল্পনা কমিশনে অনুমোদন পেয়েছে। আরডিপিপি অনুসারে নতুন মেয়াদকাল ধরা হয়েছে ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। অর্থাৎ প্রকল্পের মেয়াদ বেড়েছে আরও দুই বছর। আর ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৩ কোটি ৬৬ লাখ। অর্থাৎ ব্যয় বেড়েছে ১৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এদিকে দুই বছরের মধ্যে এরই মধ্যে কেটে গেছে আট মাস।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিসিক চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার ও প্রকল্প পরিচালক আহমেদ জামাল নাসের চৌধুরী শেয়ার বিজকে বলেন, ‘রাউজান বিসিক শিল্পনগরী প্রকল্পের জন্য আমরা ৩৫ একর জমি অধিগ্রহণ করেছি এবং আমাদের দখলে নিয়েছি। জমি অধিগ্রহণ করার প্রক্রিয়াটা জটিল ও সময়সাপেক্ষ। জেলা প্রশাসন, জমির মালিক ও বিসিকÑতিন পক্ষের চেষ্টায় তিন বছরে জমি অধিগ্রহণ করতে সক্ষম হয়েছি। বর্তমানে মাটি ভরাটের উদ্দেশ্যে কার্যাদেশের জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করেছি। যখন আমরা টেন্ডার কাজ শুরু করলাম, তখন প্রকল্পের মেয়াদকাল শেষ হয়ে গেল। পরবর্তীকালে প্রকল্পের মেয়াদ দু’বছর বৃদ্ধি করার জন্য সংশোধিত আরডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণ করলাম। এরই মধ্যে আট মাস সময় পেরিয়ে গেছে। বিসিক, শিল্প মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা কমিশনÑএ তিন মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন রকম সংশোধনী, বিভিন্ন ধরনের ব্যাখ্যা দিতে দিতে অবশেষে গত ফেব্রুয়ারিতে সংশোধিত আরডিপিপি অনুমোদিত হয়েছে। অনুমোদন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা মাটি ভরাটের কার্যাদেশ দিয়েছি। সহসাই মাটি ভরাটের কাজ শুরু হবে। আমরা আশা করি, প্রকল্পের মেয়াদের মধ্যে রাউজান বিসিক শিল্পনগরী তৈরি কাজটা শেষ করতে পারব। দুঃখের বিষয়, প্রস্তাবিত আরডিপিপি নির্ধারিত সময়ে অনুমোদন না হওয়ায় আমাদের কাজ পিছিয়ে গেছে।