মঈন উদ্দীন বাপ্পী, রাঙামাটি: রাঙামাটি সদর হাসপাতাল জেলার বাসিন্দাদের কাছে চিকিৎসাসেবার অন্যতম ভরসা। উপজেলাগুলোতে স্বাস্থ্যসেবা থাকলেও জেলার প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষের চিকিৎসার অন্যতম ভরসা এ হাসপাতালটি। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে হাসপাতালটি চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। হাসপাতালে রয়েছে চিকিৎসক সংকট, টয়লেটের বেহাল অবস্থা এবং চারদিকে নোংরা পরিবেশ। রয়েছে শয্যাসংকটও।
হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৩১ চিকিৎসকের পদে ১৪টি পদ খালি রয়েছে। এর মধ্যে হাসপাতালের সার্জারি, অর্থোপেডিক্স, মেডিসিন ও গাইনি বিষয়ের জন্য চারটি সিনিয়র কনসালট্যান্ট পদের প্রতিটি পদই শূন্য রয়েছে। জুনিয়র কনসালট্যান্ট পদের ছয়টির মধ্যে শুধু নাক, কান, গলা ও শিশু বিভাগের চিকিৎসক রয়েছেন। আবাসিক চিকিৎসক পদে দায়িত্ব পালন করছেন মাত্র একজন। নার্স সংকট কিছুটা দূর হলেও অন্য অনেক পদ খালি রয়েছে। লোকবল সংকট থাকায় হাসপতালের কার্যক্রম চলছে কচ্ছপ গতিতে। বর্তমানে রাঙামাটি মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা হাসপাতালে ইন্টার্নশিপ করায় চিকিৎসক সংকট কিছুটা পূরণ হচ্ছে।
এদিকে জেলার এ হাসপাতালটির এমন বেহাল দশার কারণে বিভিন্ন সময় স্থানীয় রোগীরা নানা সময়ে প্রতিবাদ জানালেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় হাসপাতালের এমন বেহাল দশা বলে মন্তব্য করছে সাধারণ মানুষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের চারদিকে ময়লার স্তূপ। সন্ধ্যা হলে হাসপাতালের ফ্লোরে কুকুর ঘুমায়। রোগীদের বেডগুলো নোংরা ও ব্যবহার-অনুপযোগী। টয়লেটগুলো নোংরা ও দুর্গন্ধময়। শয্যাসংকটের কারণে রোগীরা ফ্লোরে বিছানা পেতে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করছেন। এছাড়া চিকিৎসা যন্ত্রপাতির সমস্যা তো রয়েছেই।
একাধিক রোগী অভিযোগ করেন, রাঙামাটির চিকিৎসাসেবার একমাত্র স্থল হলো এ সদর হাসপাতাল। কিন্তু হাসপাতালের এমন বেহাল দশায় তারা সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছেন না।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ডায়রিয়া রোগী রাবেয়া বেগম জানান, হাসপাতালে এসেছেন চিকিৎসা করাতে; কিন্তু চিকিৎসকের দেখা না পাওয়ায় এবং হাসপাতালের এমন বেহাল দশা দেখে এখান থেকে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
তবে সংশ্লিষ্টরা জানান, ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটিকে ২০০ শয্যায় উন্নীত করা হবে। এতে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া যেমন সহজ হবে, তেমনি জায়গাস্বল্পতারও সমাধান হবে।
ডেপুটি সিভিল সার্জন নীহার রঞ্জন নন্দী জানান, হাসপাতালে লোকবল সংকট থাকলেও রোগীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। আর যেসব সমস্যা আছে, তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, কিছুদিনের মধ্যে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট রাঙামাটি সদর হাসপাতালটিকে ২০০ শয্যায় উন্নীত করা হবে। হাসপাতালটি ২০০ শয্যায় উন্নীত হলে অনেক সমস্যার সমাধান হবে।
রাঙামাটি সদর হাসপাতাল চিকিৎসক সংকটে সেবা ব্যাহত
