রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সাবেক গাড়িচালক মো. আব্দুল জলিল আকন্দ (৬০) ও তার স্ত্রী জাহানারা বেগমের (৫১) বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ গোপন করায় দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় (সজেকা) ঢাকা-১-এ গত ১২ অক্টোবর মামলাটি করা হয়েছে। দুদকের উপপরিচালক মো. হাফিজুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪-এর ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারা এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২-এর ৪(২) ও দণ্ডবিধি ১০৯ ধারায় মামলাটি করা হয়েছে।
দুদক সূত্র জানিয়েছে, আব্দুল জলিল আকন্দ নিজ নামে ২৩ লাখ ২৮ হাজার ৩৭৯ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ গোপন করে অবৈধভাবে জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত নিজ নামে ৫৭ লাখ ৮৮ হাজার ৩৬০ টাকা ও তার স্ত্রী জাহানারা বেগমের নামে ১ কোটি ১০ লাখ ২৪ হাজার ৪২ টাকাসহ মোট ১ কোটি ৬৮ লাখ ১২ হাজার ৪০২ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ গোপন করতে স্ত্রীর নামে মৎস্য ও হ্যাচারি ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, মো. আব্দুল জলিল আকন্দের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিস জারির সুপারিশসহ ২০১৭ সালের ২০ আগস্ট অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করে দুদক। আব্দুল জলিল ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণী নোটিস জারি করা হয়।
আব্দুল জলিল ২০১৮ সালের ১৩ ডিসেম্বর দুদকে নিজের, স্ত্রীর ও তার কন্যার নামে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তথ্যসহ সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। বিবরণীতে দাবি করা হয়, তিনি কোনো সম্পদ গোপন করেননি। তিনি সম্পদ বিবরণীতে নিজ নামে ৩৪ লাখ ১৮ হাজার ১৯৮ টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদ ও ১ কোটি ১০ লাখ ৫৬ হাজার ৪১৭ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদসহ ১ কোটি ৪৪ লাখ ৭৪ হাজার ৬১৫ টাকার ঘোষণা দেন। কিন্তু দুদক সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে তার নামে ঢাকা মেট্রো-ট-১৫-৪৭৫৮ নম্বর গাড়ি ক্রয় বাবদ ১০ লাখ ২০ হাজার ৯১১ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদসহ মোট ২৩ লাখ ২৮ হাজার ৩৭৯ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ গোপন করার প্রমাণ পায়, যা দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪-এর ২৬ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এ ছাড়া মো. আব্দুল জলিল আকন্দ ৫৭ লাখ ৮৮ হাজার ৩৬০ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪-এর ২৭ (১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
অন্যদিকে আব্দুল জলিল আকন্দের স্ত্রী জাহানারা বেগম দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে নিজ ও কন্যাদের নামে ৫২ লাখ ৬৪ হাজার ৪৩৮ টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদ ও নিজ নামে ২ কোটি ২৬ লাখ ৬৭ হাজার ৪৩৯ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদের ঘোষণা দেন। কিন্তু সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে দেখা গেছে, জাহানারা বেগম পূবালী ব্যাংকের কুড়িল বিশ্বরোড শাখায় ৩০ হাজার ৬৮৯ টাকা, ঢাকা মেট্রো-ট-১৫-৩৩৩৫ নম্বর গাড়ি ক্রয় বাবদ ৯ লাখ ১৪ হাজার ৮২৬ টাকা, ঢাকা মেট্রো-ট-১৫-৪৯১৭ নম্বর গাড়ি ক্রয় বাবদ ৪ লাখ ৫৪ হাজার ৯১২ টাকা, ঢাকা মেট্রো-ক-০২-৩৩০৯ নম্বর গাড়ি ক্রয় বাবদ ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং মাটি কাটার এক্সক্যাভেটর ক্রয় বাবদ ১২ লাখ টাকাসহ মোট ২৭ লাখ ৫০ হাজার ৪২৭ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন।
দুদক জানিয়েছে, অস্থাবর সম্পদের তথ্য গোপন করে তিনি দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪-এর ২৬ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। সম্পদবিবরণী যাচাইকালে জাহানারা বেগমের নামে ৭৯ লাখ ৩১ হাজার ৮৭৭ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। ওই সময় আয়কর নথি মোতাবেক তিনি ব্যয় করেছেন ৫৮ লাখ ৯৯ হাজার ৮৮০ টাকা। এতে জাহানারা বেগমের নিজ নামে অর্জন করা সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ কোটি ৩৮ লাখ ৩১ হাজার ৭৫৭ টাকা। ওই সময় তার নামে ২ কোটি ২৮ লাখ ৭ হাজার ৭১৫ টাকা মূল্যের গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায়। আসামি জাহানারা বেগমের বিরুদ্ধে ১ কোটি ১০ লাখ ২৪ হাজার ৪২ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করার সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়, যা তার স্বামী মো. আব্দুল জলিল আকন্দ চাকরিকালীন দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধভাবে উপার্জিত সম্পদ গোপন করার মানসে স্ত্রীর নামে মৎস্য ব্যবসা ও হ্যাচারি ব্যবসায় কথিত বিনিয়োগ দেখিয়ে স্থানান্তর করেন।