রাজধানীকে ‘প্রতিবেশ সংকটাপন্ন’ঘোষণায় হাইকোর্টের মত

নিজস্ব প্রতিবেদক: দূষণ পরিস্থিতি বিবেচনায় মহানগরী ঢাকাকে ‘প্রতিবেশ সংকটাপন্ন’ ঘোষণা করা দরকার বলে মত দিয়েছেন আদালত। বুড়িগঙ্গা দূষণ রোধ-সংক্রান্ত জনস্বার্থে করা এক রিট মামলার শুনানিতে গতকাল বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও মোহাম্মদ উল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ থেকে এ মন্তব্য আসে।

এ মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আইনগত বিষয় বিবেচনা করে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন বলে রিট আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানিয়েছেন। বুড়িগঙ্গা নদী দূষণে পরিবেশগত ছাড়পত্র ও বর্জ্য সংশোধনাগার ছাড়া চলা শিল্প-কারখানার বৈধতা নিয়ে বুধবার শুনানি চলছিল।

শিল্প মালিক সমিতির পক্ষে শুনানি করেন সিদ্দিকুর রহমান। পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষে অ্যাডভোকেট আমাতুল করিম ও মনজিল মোরসেদ উপস্থিত ছিলেন।

শুনানির এক পর্যায়ে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, “পত্রপত্রিকায় দেখলাম ঢাকা পৃথিবীর দূষণতম শহরে স্ট্যান্ড করে বসে আছে। দুই না তিন নম্বরেই জানি আছে। এখন ‘প্রতিবেশ সংকটাপন্ন’ হিসেবে এটিকে ঘোষণা দেওয়া দরকার।”

মনজিল মোরসেদের এ মন্তব্যে সমর্থন জানালে বিচারক গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর বলেন, ‘আপনি এ নিয়ে সম্পূরক আবেদন করতে পারেন। অথবা আলাদা আবেদনও করতে পারেন।’

তখন মনজিল মোরসেদ আদালতকে জানান, এ নিয়ে তার চিন্তা আছে।

আদালতের মন্তব্য উদ্ধৃত করে পরে তিনি বলেন, আদালত বলেছেন, ঢাকাকে বিশ্বের এক নম্বর দূষিত শহর হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। যদি এরকম দুরবস্থা হয়, সেক্ষেত্রে ‘ইকোলজিক্যাল ক্রিটিক্যাল এরিয়া’ ঘোষণা করার বিধান আছে পরিবেশ আইনে। ‘এখন যেহেতু ঢাকা সবচেয়ে দূষিত নগরী, তাই গোটা ঢাকা শহরকেই ইকোলজিক্যাল ক্রিটিক্যাল এরিয়া ঘোষণার সময় এসেছে।’

এ বিষয়ে আদালতে আবেদন করবেন কি না জানতে চাইলে এই আইনজীবী বলেন, ‘আদালতের এ আলোচনাটা শুনলাম, নিশ্চয়ই এর আইনগত বিষয়গুলো বিবেচনা করে পদক্ষেপ নেব।’

এক প্রশ্নে মনজিল বলেন, দূষণ রোধে আদালত বিভিন্ন নির্দেশনা দিলেও সেগুলোর বাস্তবায়ন হচ্ছে না। সরকারদলীয় লোকজন বা সংসদ সদস্যরা অনেকেই দূষণকারীদের পেছনে থেকে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে তাদের রক্ষা করার জন্য অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

‘ঢাকাকে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হলে আইনগতভাবেই অনেক কিছু করা সম্ভব নয় বা কিছু করার ক্ষেত্রে বাধ্য হয়ে সরকারকে অনেক পদক্ষেপ নিতে হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের আইনজীবী আমাতুল করিম বলেন, ‘এটা সত্য যে, আমাদের পরিবেশ এখন সুস্থ অবস্থায় নেই। তবে এখনই ঢাকা মহানগরীকে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন ঘোষণার সময় এসেছে বলে আমি মনে করি না।’

এর আগে গত ২০ জানুয়ারি হাইকোর্ট বুড়িগঙ্গা নদী দূষণে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ও পরিবেশগত ছাড়পত্র এবং বর্জ্য সংশোধনাগার ছাড়া চলা ২৩১ শিল্পপ্রতিষ্ঠান অবিলম্বে বন্ধ করতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেন।

সে সঙ্গে এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের চিঠি পাওয়ার পর ওইসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের পানি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে ঢাকা ওয়াসা, তিতাস গ্যাস ও ডিপিডিসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

আদালতের নির্দেশনা কার্যকর করতে সহযোগিতা দিতে ঢাকা জেলা প্রশাসক, ডিএমপি কমিশনার ও সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে নির্দেশ দেন আদালত। এ আদেশ বাস্তবায়নের বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের পরিবেশ অধিদপ্তরের মাধ্যমে আগামী ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০