নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহারে অর্থ-শ্রম-সময় বাঁচবে’ প্রতিপাদ্যে রাজধানী ঢাকার ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) চত্বরে শুরু হয়েছে প্রথমবারের মতো ‘জাতীয় কৃষি যন্ত্রপাতি মেলা’। গতকাল শনিবার তিন দিনব্যাপী এ মেলার উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, নগরায়ন ও শিল্পায়নের ফলে দেশে কৃষিজমির পরিমাণ কমছে। উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে কৃষি শ্রমিকরা দিন দিন বিকল্প পেশায় নিয়োজিত হচ্ছে। ফলে কৃষিকাজে শ্রমিক সংকট দেখা দিচ্ছে।
তিনি বলেন, কৃষি উন্নয়নের ধারাকে ধরে রাখতে হলে বিজ্ঞানসম্মত ও আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয় ও ব্যবহারে আমাদের উদ্যোগী হতে হবে। এতে আমার মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধিত এক লাখ ৭৫ হাজার সমবায় সমিতিকে কাজে লাগানো যেতে পারে।
মন্ত্রী জানান, সরকার গ্রামীণ হাটবাজারের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করছে। দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে মডেল হাটবাজার স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। এতে কৃষিপণ্যের বাজারজাতকরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের সব সুবিধা এখন জনগণের নাগালে রয়েছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, দিন দিন আমাদের কৃষিতে কায়িক শ্রম দেওয়ার শ্রমিকের অভাব দেখা দিচ্ছে। ফলে কৃষিতে উৎপাদন সময়ও বেশি লাগছে। আমরা নি¤œ মধ্যম আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। কৃষক আগে অনেকটা বাধ্য হয়ে কৃষিকাজ করতেন। এখন অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। এজন্য কৃষিতে যন্ত্রের ব্যবহার নিয়ে আমাদের নতুন করে ভাবতে হচ্ছে।
কৃষি যন্ত্রপাতিতে ভর্তুকির বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, সরকার হাওর ও এক ফসলি এলাকায় ৭০ শতাংশ ও অন্যান্য এলাকায় ৫০ শতাংশ ভর্তুকি দিচ্ছে। আমাদের ধানের কিছু জাত আছে যেগুলোর ছড়া নুইয়ে পড়ে। এ ধরনের ধান কাটার কোনো যন্ত্র আমাদের নেই। সরকারি, বেসরকারি, আমদানিকারক ও গবেষকদের এ ধরনের নুইয়ে-হেলে পড়া ধান কর্তনের যন্ত্রপাতি বা প্রযুক্তি আনার আহ্বান জানান।
মন্ত্রী বলেন, আমাদের জমি ছোট। কৃষিকে কীভাবে লাভজনক করা যায়, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কৃষকের কথা মাথায় রেখে সিøম, স্মার্ট ও ইফেকটিভ যন্ত্রপাতি উদ্ভাবন করতে হবে।
মেলা উপলক্ষে শোভাযাত্রা, সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। উদ্বোধনী দিনে কেআইবি অডিটরিয়ামে ‘বাংলাদেশে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের পথপরিক্রমা ও সরকারি উদ্যোগ’ বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মঞ্জুরুল আলম। মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় অংশ নেন কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ড. ওয়ায়েস কবীর। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ মহসীন। আয়োজিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পিপিসি) মোহাম্মদ নজমুল ইসলাম।
মেলায় সরকারি ও বেসরকারি ২১টি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন প্রকার আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি প্রদর্শন করে। সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সাধারণের জন্য মেলা উম্মুক্ত থাকবে।