সাপ্তাহিক ছুটির দিনে শুক্রবার সকাল থেকেই রাজধানীতে মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে বেশির ভাগ এলাকার সড়ক, অলিগলিতে পানি জমে যায়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় রাস্তাঘাটে মানুষজন কম ছিল। এ দিন ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা ছিল। ফলে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েন এ পরীক্ষায় অংশ নেয়া চাকরিপ্রার্থীরা। বিভিন্ন এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরীক্ষার কেন্দ্র ছিল। এমন কোনো এলকা ছিল না, যেখানে ভোগান্তি ছিল না। রাজধানীতে সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা যেন নগরবাসীর নিয়তি। সেখানে কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টির বিড়ম্বনা সহজেই অনুমেয়।
সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় শুক্রবার সড়কে যানবাহন ও মানুষের চাপ কম ছিল। কিন্তু ডুবে যাওয়া সড়কের বিভিন্ন অংশে বিকল হয়ে পড়েছিল সিএনজিচালিত অটোরিকশা, বাস ও প্রাইভেট কার। ফলে দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ ঢাকাবাসীকে গন্তব্যে যাওয়ার জন্য হাতে সময় নিয়ে বের হওয়ার অনুরোধ জানাতে হয়। গণমাধ্যমের অনলাইন সংস্করণে ডুবে যাওয়া সড়কের ছবি ও ভিডিওর সঙ্গে নানা ধরনের মন্তব্য লিখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দেন অনেকে। আশ্চর্যের বিষয়
হলো, ভারী বৃষ্টিতেও ঢাকায় যাতে জলাবদ্ধতা না হয়, সে জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন গত চার বছরে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে খরচ করেছে প্রায় ৩৬০ কোটি টাকা। ডিএসসিসির প্রকৌশল বিভাগ সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটির প্রকৌশল বিভাগ বলছে, জলাবদ্ধতা নিরসনে চার বছরে খরচ করা হয়েছে
প্রায় ৩৭০ কোটি টাকা। দুই সিটির প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, আগের চেয়ে ঢাকার জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। ‘পরিস্থিতির উন্নতি’র ধরন নাগরবাসী নিত্যই প্রত্যক্ষ করছে। নগর-পরিকল্পনাবিদেরা বরাবরই বলছেন, জলাবদ্ধতার ভোগান্তি কমাতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কার্যক্রমে সমন্বিত পরিকল্পনার অভাব সুস্পষ্ট। ঢাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে করা মহাপরিকল্পনাকে গুরুত্ব না দিয়ে শুধু টাকা খরচ করছে তারা। দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ ছাড়া ঢাকার জলাবদ্ধতার সমাধান হবে না।
আমাদের মেয়রদ্বয় জোর গলায় বলেন, বর্ষায় অতিবৃষ্টি হলেও ১৫ মিনিটের মধ্যে পানিনিষ্কাশিত হবে। জলাবদ্ধতার সমস্যা ৭০ থেকে ১০ শতাংশে নেমে এসেছে। কিন্তু আত্মমূল্যায়ন করলে এমন বক্তব্যে অনুশোচনা করবেন তারা। ২০২১ সালের আগে ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনের মূল দায়িত্ব ছিল ঢাকা ওয়াসার। তখন পানিতে রাস্তা ডুবে গেলেই ঢাকা ওয়াসার ওপর দায় চাপানো হতো।
২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকা ওয়াসা আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনের মূল দায়িত্ব (খাল ও ড্রেনেজ) দেওয়া হয় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে। কিন্তু অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। আমরা আশা করি, রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী ব্যবস্থা নিতে আন্তরিকতা দৃশ্যমান হবে।