বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় আমাদের রাজধানী প্রথম দিকেই রয়েছে। নগরবিদরা বলছেন, বায়ুদূষণের অন্যতম উৎস হচ্ছে ধুলোবালি। রাজধানীসহ দেশের বায়ুদূষণের অবস্থা ক্রমেই খারাপ হচ্ছে, এটি নতুন নয়। বায়ুদূষণ রোধের মূল দায়িত্ব রাষ্ট্রীয় সংস্থা পরিবেশ অধিদপ্তরের। দূষণ ঠেকাতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হলেও পরিবেশের উন্নয়নে সেগুলো যথেষ্ট নয়। পরিবেশ নিয়ে কাজ করা বৈশ্বিক ও দেশীয় সংগঠনের বায়ুমান যাচাই-বিষয়ক সূচকে বরাবরই পিছিয়ে থাকি আমরা।
জানুয়ারিতে এখন পর্যন্ত এক দিনের জন্যও নির্মল বাতাস পাননি রাজধানীবাসী। পরিবেশবাদী সংগঠন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এ তথ্য দিয়েছে। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে ঢাকার বায়ুদূষণ নিয়ে তথ্য তুলে ধরে সংগঠনটি বলছে, রাতে ঢাকা শহরের বাতাসের মান সবচেয়ে খারাপ থাকে। রাত ১০টার পর পণ্যবাহী ট্রাকের প্রবেশকে এজন্য দায়ী করা হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, নগর পরিকল্পনায় ঘাটতি, আইনের দুর্বলতা ও আইন প্রয়োগের সীমাবদ্ধতা বায়ুদূষণের প্রধান কারণ। রাতের বেলায় রাস্তায় ঝাড়ু দেয়ায় ঢাকা শহরের বাতাসে ধুলা উড়তে থাকে। দিনের চেয়ে রাতে তাপমাত্রা কম থাকায় ধুলাবালি বাতাসে বেশি সময় ধরে অবস্থান করে। বায়ুদূষণ নাগরিকদের মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
রাজধানীর সড়কে ইট ভাঙা হয়। ইটের ক্ষুদ্র কণা বায়ুতে ছড়িয়ে পড়ে। ইটের ব্যবহার বন্ধ করার সুযোগ নেই। কিন্তু তা তৈরি করতে ও ভাঙতে হবে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে। দূষণের অন্যতম উৎস নির্মাণকাজের ধুলা নিয়ন্ত্রণে পরিকল্পিত উদ্যোগ নিতে হবে। রাজধানীতে চলাচলকারী ফিটনেসবিহীন মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন থেকে অতিরিক্ত কালো ধোঁয়া নির্গত হয়। এগুলো নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। রাজধানীর সড়কগুলোয় সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়েছে। সড়কের পাশে লাগানো হয়েছে ছোটখাটো গাছ। ধুলা-ময়লা জমে পাতা বিবর্ণ হয়ে গেছে। এগুলো পরিষ্কার করতে পানি ছিটাতে হবে। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বায়ুদূষণ রোধে ৯ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। যেমন ঢাকা শহরে মাটি, বালি ও বর্জ্য পরিবহন করা গাড়িতে মালামাল ঢেকে রাখা; কালো ধোঁয়া নিঃসরণকৃত গাড়ি জব্দ করা; পরিবেশ লাইসেন্স ব্যতীত চলমান সব টায়ার কারখানা বন্ধ করা প্রভৃতি।
উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ না থাকায় ২০২২ সালের ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত চলতি বছরও এক দিনের জন্য নির্মল বাতাস পায়নি রাজধানীবাসী। এটি দুঃখজনক। এর আগেও বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে, দেশে প্রতি বছর এক লাখ ২২ হাজার ৪০০ মানুষের মৃত্যু হয় শুধু দূষিত বায়ুর কারণে। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকার প্রায় সাত হাজার কোটি টাকার বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল সাসটেইনেবল ট্রান্সফরমেশন (বেস্ট) শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করেছে। তা সত্ত্বেও পরিবেশ বায়ুদূষণমুক্ত করা যাচ্ছে না। পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো দূষণের বিষয়টি সামনে আনায় আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে। দূষণমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতে ‘নির্মল বায়ু আইন, ২০১৯’ বাস্তবায়নের পাশাপাশি পরিবেশ ক্যাডার সার্ভিস এবং পরিবেশ আদালত চালু ও কার্যকর করতে হবে।