Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 7:07 pm

রাজধানীর বিভিন্ন রুটে বাস চলাচল বন্ধ ভোগান্তিতে মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক: সম্প্রতি জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে গণপরিবহনে ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। এদিকে ১৪ নভেম্বর থেকে নগরীতে কোনো ধরনের ‘সিটিং সার্ভিস’ অথবা ‘গেটলক সার্ভিস’ বাসের চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। অন্যদিকে ভাড়া বাড়ানোর কারণে প্রায় প্রতিদিনই সাধারণ যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডার পরিস্থিতিও তৈরি হচ্ছে। সর্বোপরি এসব বিষয়ের কারণে রাজধানীর বিভিন্ন রুটের বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন পরিবহন শ্রমিকরা। একদিকে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

পরিবহন শ্রমিকরা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা বিআরটিএর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে দূরপাল্লার পরিবহন ও নগরীর গণপরিবহনের ভাড়া বাড়িয়েছেন। তারা বাড়িয়েছেন ২৭ শতাংশ অপরদিকে নতুন ভাড়ার ওপর সিটিং বাসগুলো ভাড়া নির্ধারণ করেছে ১৫ শতাংশ। এই নিয়ে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে মতের অমিল হওয়ার কারণে ঝামেলার সৃষ্টি হয়েছে।

পরিবহন চালক-হেলপাররা বলছেন, প্রতিদিনই যাত্রীদের সঙ্গে ভাড়া নিয়ে তর্ক ও ঝগড়া হচ্ছে। নতুন ভাড়া অনুযায়ী যাত্রীরা দিতে চাচ্ছে না। এদিকে পরিবহনের মালিকরাও পরিবহনের জমা ভাড়ার সঙ্গে মিলিয়ে নিতে চাচ্ছেন। এখন গাড়ি নিয়ে বের হয়ে দিনে চারটি ট্রিপ দিলে তেল খরচসহ সব মিলিয়ে আমাদের বেতনও ওঠে না। এতে আমরাও বিপাকে পড়েছি। তাই বাধ্য হয়ে আমরা গাড়ি বন্ধ রেখেছি।

পরিবহন শ্রমিক ও মালিকরা এই বিষয়ে বসে আলোচনা করে একটি সিদ্ধান্ত দিলে আগের মতো গাড়ি চলবে বলে জানিয়েছেন।

মনজিল এক্সপ্রেস পরিবহনের অধিকাংশ বাস বন্ধ রয়েছে। এই পবিহনের কয়েকটি বাসের মালিক মো. সুমন গণমাধ্যমকে বলেন, পরিবহন শ্রমিক ও মালিকদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার কথা রয়েছে বুধবার। সেখানে আমরা সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছি। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ যে সিদ্ধান্ত দেবেন সে অনুযায়ী আমরা চলব।

এদিকে রাজধানীর মিরপুরে দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘট। বাসের জন্য শত যাত্রী বিভিন্ন মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। সামান্য কিছু বাস চলাচল করলেও যাত্রীর তুলনায় তা অনেক কম। গতকাল বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মিরপুর ১০, ১১, ১২, কালশি, পূরবী, সিরামিক রোড ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।

এদিন অফিসগামী যাত্রীরা বাসের জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন। মিরপুর ১২ নম্বর থেকে হতে কয়েকটি বাস ছাড়লেও ওইসব বাসে যাত্রীতে ছিল টইটুম্বুর। মিরপুর ১২ নম্বরের প্রধান সড়কে বাস পার্ক করে রাখা হয়েছে। ওই সব বাসের  শ্রমিকরা সকাল থেকেই বিভিন্ন জায়গায় জড়ো হয়ে ধর্মঘট করছেন। সকাল ৮টায় মিরপুর ১২ নম্বর পূরবী সিনেমা হলের সামনে ৩০-৪০ জন শ্রমিক জড়ো হয়ে মিরপুর ১০ নম্বর থেকে আসা কয়েকটি বাস থামিয়ে ওই বাসের যাত্রীদের নামিয়ে দেন। এতে যাত্রীদের সঙ্গে শ্রমিকদের কয়েক দফা বাগবিতণ্ডা হয়। সকাল সাড়ে ৮টায় পুলিশ এসে ওই স্থান থেকে শ্রমিকদের  সরিয়ে দেয়। 

বাসযাত্রী নাজমা সাংবাদিকদের জানান, আমি মিরপুর ১২ নম্বর যাব। সকাল ৮টায় পূরবী সিনেমা হলের সামনে শ্রমিকরা আমাদের বাস থেকে নামিয়ে দেয়। আরও অনেক যাত্রী ছিলেন। বাস না থাকায় অনেকে হেঁটে রওনা দেন।

বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদ জানান, মতিঝিলে যাব। সকাল সাড়ে ৭টা থেকেই পূরবীর সামনে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে ছিলাম। মিরপুর ১২ নম্বর থেকে ২-১টি বাস এলেও অনেক যাত্রী। বাসে উঠাতে পারিনি। আবার শ্রমিকরা বাস থেকে যাত্রী নামিয়ে দিচ্ছেন। সিএনজিও নেই। রিকশায় করে মতিঝিল যাব কিনা চিন্তা করছি।

মিরপুর ১২ নম্বরের টিআই সোহেল জানান, শ্রমিকরা বাস না চালিয়ে আন্দোলন করছেন। সকাল থেকে কিছু বাস চললেও তা অনেক কম। পূরবীর সামনে সকালে পরিবহন শ্রমিকরা জড়ো হয়ে বাস থেকে যাত্রী নামিয়ে দেয়। সে সময় পুলিশ শ্রমিদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়।