রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ছাত্রদের অবস্থান অব্যাহত

নিজস্ব প্রতিবেদক: টানা ষষ্ঠ দিনের মতো গতকাল শুক্রবারও রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের অবস্থান অব্যাহত ছিল। তবে গতকালের অবস্থান গত পাঁচ দিনের মতো ব্যাপক আকারে না হলেও মিরপুর, শাহবাগ, আসাদগেট, উত্তরা ও রায়েরবাগ এলাকায় সড়কে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের। তবে লাইসেন্স নয়, গতকাল সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে নির্ধারিত লেন মেনে চলছে কি না সেগুলোই দেখছিল শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সব রিকশা এক লাইনে চালানোর অনুরোধ করছে শিক্ষার্থীরা। এছাড়া হেলমেট না পরলে মোটরসাইকেল আটকানো হচ্ছে। তবে শুক্রবারে শিক্ষার্থীরা যানবাহনের লাইসেন্স দেখছে না। গাড়ির ফিটনেস ও সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে সবাই মিরপুরের বিভিন্ন সড়কের মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিয়েছে।
মিরপুর-২-এর শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী মাহজাবিল সায়রা মিতু গলায় আইডি কার্ড ও ইউনিফর্ম পরে ট্রাফিকের ভূমিকায় সড়কে। তার আহ্বানে সব রিকশা এক লাইনে চলাচল করছে।
মিতু বলেন, আজকে আমরা লাইসেন্স দেখছি না, কারণ এটা নিয়ে নানা ধরনের কথা হচ্ছে। আমরা শুধু সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজ করছি। সব রিকশাকে এক লাইনে চলাচল করতে বাধ্য করছি। কেউ যাতে কোনো ধরনের ওভারটেকিং না করে সেই বিষয়ও খেয়াল রাখছি। মোটরসাইকেলে শুধু চালক নয় যাত্রীরও হেলমেট থাকা বাধ্যতামূলক। সড়কে শৃঙ্খলা না ফেরা পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না।
সড়ক নিরাপদ করতে শিক্ষার্থীরা যে ৯টি দাবি তুলেছেন, তা পূরণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সংবাদ সম্মেলন করে জানান।
সমালোচনার মুখে থাকা নৌমন্ত্রী ও পরিবহন শ্রমিক নেতা শাজাহান খানের বারবার ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এর পরও শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে অযৌক্তিক।
‘বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পরেও নৌমন্ত্রী শাজাহান খান কীভাবে হাসতে পারেনÑএই প্রশ্ন রেখে সাম্য বলেন, ‘আমরা শাজাহান খানের পদত্যাগ চাই। এখানে অনেকেই বলছে, এটা বিএনপির দাবি; কিন্তু না, এটা সাধারণ ছাত্রদের দাবি। এই মন্ত্রীর পদত্যাগ চাই আমরা।’
আরও একজন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দাবি পূরণের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে কোনো ঘোষণা না পাওয়ায় তারা বের হয়েছেন। তারা দাবি মেনে নেওয়ার লিখিত ঘোষণা চান।
মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘দিয়া আর করিমের পরিবারকে ২০ লাখ টাকা করে দিলেই কি সব সমাধান হয়ে যাবে? সড়ক দুর্ঘটনা কি শেষ হয়ে যাবে? ফিটনেসবিহীন অদক্ষ চালকরা আর গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হবে না? আমাদের ন্যায্য দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনে থাকব।’
সেখানে ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী প্রিয়া বলেন, ‘আমাদের মিরপুরে অহরহ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। এটা নিত্যদিনের ঘটনা। মনিপুরের একটা বাচ্চা কিছুদিন আগেই বাসের চাপায় মারা গেছে। আমার সঙ্গের বন্ধু মারা গেছে বাসের চাপায়। এখানকার কোনো মানুষের নিরাপত্তা নেই।’
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে থাকা এক অভিভাবক পারুল বলেন, ‘আমরা পারিনি দেখেই ওরা রাস্তায় নামছে। এই অবস্থার সমাধান এখন না হলে কোনোদিনই হবে না।’
মিরপুর ১০ নম্বরে আসা অনেক শিক্ষার্থীই ট্রাফিকের ভূমিকা পালন করছিলেন, অনেকে আবার পথচারীদের নির্দেশনা দিচ্ছিলেন ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারের। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে শাহবাগ মোড়ে কয়েকজন শিক্ষার্থী জড়ো হলেও তাদের সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
সকাল থেকে শাহবাগ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পুলিশের রমনা জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. আজিমুল হক বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৃতীয় পক্ষ ঢুকে যেন কোনো কিছু করতে না পারে সেদিকে আমরা নজর রেখেছি। শিক্ষার্থীদেরও বিষয়টি বোঝানো হচ্ছে।’

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০