Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 5:37 am

রাজধানীর রূপনগরে পাঁচ শিশুর মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর মিরপুরের রূপনগর আবাসিক এলাকার ১১ নম্বর সড়কে দুই-তিন দিন পরপরই গ্যাস বেলুন বিক্রি করতে আসতেন এক ব্যক্তি। আসামাত্রই তাকে ঘিরে ধরত ফজর মাতবরের বস্তির শিশুরা। বরাবরের মতো গতকালও বেলুন বিক্রেতার গাড়িটিকে ঘিরে দাঁড়িয়েছিল শিশুরা। সে সময় গ্যাস সিলিন্ডারের ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। এতে মুহূর্তেই ঝরে যায় পাঁচ শিশুর প্রাণ।

নিহত শিশুরা হলো শাহিন (১০), নূপুর (৭), ফারজানা (৯), জান্নাত (১৪) ও রমজান (৮)। রূপনগর থানার এসআই মো. সুমন নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত করেন। বিস্ফোরণের ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। চিকিৎসার জন্য তাদের শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আহতদের নাম-পরিচয় এখনও জানা যায়নি।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একটি ভ্যানগাড়িতে করে ওই ব্যক্তি মিরপুরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে গ্যাসবেলুন বিক্রি করতেন। গতকাল বিকালে রূপনগর ১১ নম্বর সড়কের শেষ মাথায় ফজর মাতবরের বস্তির সামনে বেলুন বিক্রি করতে আসেন তিনি। তাকে দেখামাত্রই বস্তির শিশুরা তাকে ঘিরে ধরে। এ সময় সিলিন্ডারে পাউডারজাতীয় কিছু একটা ভরছিলেন ওই বেলুন বিক্রেতা। এর পরই হঠাৎ বিকট শব্দে সিলিন্ডারটি বিস্ফোরিত হয়। বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে আশপাশে থাকা ১০-১২ জন প্রায় ১৫ ফুটের মতো ছিটকে পড়েন। বিস্ফোরণের পরপরই ঘটনাস্থলে চার শিশুর ছিন্নভিন্ন দেহ পাওয়া যায়। পেটে আঘাত পাওয়া আরেক শিশু দৌড়ে সেখান থেকে পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু কিছু দূর যাওয়ার পরই সে লুটিয়ে পড়ে। পরে সেখানেই তার মৃত্যু হয়।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মো. হোসেন বলেন, ‘বিস্ফোরণের স্থান থেকে কিছুটা দূরে আমি ঝালমুড়ি বিক্রি করি। বিকাল সাড়ে ৩টায় ওই বেলুন বিক্রেতা ভ্যান নিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়ালে আমি তাকে চলে যেতে বলি। এরপর একটু সামনে এগিয়ে গিয়ে তিনি একটি টিনশেডের ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়ান। কিছুক্ষণ পর বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাই।’ বিস্ফোরণে বিকট শব্দ হলেও আগুন লাগার ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

বিস্ফোরণে আহত নারী জান্নাত বেগমের স্বামী নজরুল ইসলাম বলেন, বিকালে বাজার করে ফেরার সময় ১১ নম্বরের সড়কের মাথায় আসতেই বিস্ফোরণ হয়। বিস্ফোরণে তার স্ত্রীর ডান হাতের একটি অংশ শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে মরদেহ উদ্ধার করেন। মরদেহগুলো শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী গাড়িচালক মো. মোস্তফা বলেন, ‘আমি ১২ নম্বর রোডে ছিলাম। একটি বিকট শব্দ শুনে ১১ নম্বরের দিকে ছুটে যাই। যাওয়ার সময় দেখি রিকশায় একজনকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তার মাথার একটা অংশ রক্তাক্ত। এরপর আমরা বস্তির পাশে চিৎকার শুনি এবং গিয়ে দেখি সেখানে চার শিশু পড়ে আছে, নড়াচড়া করছে না।’

তিনি আরও বলেন, যে বেলুনের সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়েছে, সেই বেলুনওয়ালা প্রায়ই আসতেন। লোহার জিনিস ও কাচের বোতলে বেলুন বিক্রি করতেন। বিস্ফোরণের সময় তার কাছে থাকা কনডেন্সড মিল্কের কৌটা ছিটকে গিয়ে আশপাশের অনেকে আহত হন। কমপক্ষে ২০-২৫ জনকে আশপাশের হাসপাতালে ভর্তি হতে দেখেছি।