রাজধানীর রেস্তোরাঁ ও ভবনে রাজউকডিএসসিসির অভিযান

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর বিভিন্ন রেস্তোরাঁ ও ভবনে অভিযান পরিচালনা করছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এ সময় অগ্নিনিরাপত্তার ঝুঁকি ও আবাসিক ভবনে রেস্তোরাঁ থাকায় এসব ভবন ও রেস্তোরাঁ সিলগালা করা হয়েছে। একই সঙ্গে মোহাম্মদপুর ও কামরাঙ্গীরচরে ৫৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার এসব অভিযান পরিচালনা করা হয়। সকালে বেইলি রোডে ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করে রাজউক। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মনির হোসেন হাওলাদারের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালিত হয়। এ সময় তিনি ‘নবাবী ভোজ’ নামে একটি রেস্তোরাঁয় এসে দেখেন সেটি বন্ধ। সেখানে রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ একটি নোটিশ টানিয়ে রেখেছে। নোটিশে বলা হয়, ‘গ্রাহকদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে, সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত ভয়াবহ দুর্ঘটনা আমলে নিয়ে যথাযথভাবে জরুরি ভিত্তিতে সঠিকভাবে সংস্কারের কাজ চালু থাকায় সাময়িক সময়ের জন্য রেস্টুরেন্টটি বন্ধ থাকবে। এজন্য সবার কাছে

আমরা দুঃখিত।’ পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মনির হোসেন হাওলাদার সাময়িক সময়ের জন্য রেস্টুরেন্টটি সিলগালা করে দেন।

এছাড়া বেইলি রোডে অবস্থিত সুলতানস ডাইনেও অভিযান চালায় রাজউক। এ সময় রেস্তোরাঁটির উপস্থিত কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিক কোনো কাগজপত্র দেখাতে না পারায় এটিও সিলগালা করা হয়। কাগজপত্র দেখাতে পারলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানান মনির হোসেন হাওলাদার।

অভিযানকালে রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাংবাদিকদের বলেন, আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে থাকি। কিন্তু কোনো দুর্ঘটনা হলে সেগুলোর খবর সামনে আসে। প্রয়োজনের তুলনায় রাজউকে লোকবল কম রয়েছে বলেও এ সময় তিনি জানান।

সকালে একই সময় রাজধানীর খিলগাঁওয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাহাঙ্গীর আলম ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। এ সময় ‘স্কাইভিউ নাইটিঙ্গেল টাওয়ার’ নামক আটতলা আবাসিক ভবনে যান তিনি। এই ভবনের নিচতলায় একটি কাপড়ের শোরুম এবং বাকি তলাগুলোয় একটি করে রেস্টুরেন্ট দেখা গেছে। এছাড়া পার্কিংয়ের জায়গায় একটি রেস্টুরেন্টের নির্মাণকাজ চলতে দেখা যায়।

অভিযান শেষে আবাসিক ভবনে রেস্তোরাঁ ও অগ্নিনিরাপত্তার ঝুঁকির কারণ দেখিয়ে ভবনটি সিলগালা করে দেন মো. জাহাঙ্গীর আলম। ভবনের সামনে ‘অগ্নিপ্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন, ২০০৩’ অনুযায়ী, ‘এই ভবনটি অগ্নিনিরাপত্তার ক্ষেত্রে অত্যধিক ঝুঁকিপূর্ণ’ লেখা একটি ব্যানার টানিয়ে দেয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স।

মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ভবনটি অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে। তাই আপাতত বন্ধ থাকবে। ভবনমালিক এবং সংশ্লিষ্ট রেস্তোরাঁর মালিকরা সঠিক কাগজপত্র দেখাতে পারলে পরবর্তীকালে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে অভিযানের খবর পেয়ে স্থানীয় রেস্তোরাঁগুলো বন্ধ করে রাখা হয়। ফলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা দিনব্যাপী অভিযান চালু রাখতে না পেরে চলে যান।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা হোটেল-রেস্তোরাঁয় অনিরাপদ সিলিন্ডার ব্যবহারের কারণে বিশেষ অভিযান চালিয়েছে মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ। এ সময় রেস্টুরেন্টের মালিক, ম্যানেজারসহ ৩৫ জনকে আটক করা হয়েছে। গত সোমবার বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প, রিং রোড, তাজমহল রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় এ অভিযান চালানো হয়।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মোহাম্মদপুর এলাকায় গড়ে ওঠা ১১টি হোটেল-রেস্তোরাঁয় বিভিন্ন অনিয়ম, অব্যবস্থাপনাসহ নানা অভিযোগে অভিযান চালানো হচ্ছে। গ্যাসের সিলিন্ডার ব্যবহারে সবাই উদাসীন। অভিযানের মূল উদ্দেশ্য হলো, দাহ্য পদার্থ ব্যবহারে মানুষকে সচেতন করা। কোথাও অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা দেখামাত্রই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তাদের সতর্ক করা হচ্ছে।

ডিএমপি মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সবুজ রহমান বলেন, ‘বেইলি রোডের মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় সারাদেশের মানুষ শোকে কাতর। মোহাম্মদপুর থানা এলাকায় যেন এমন দুর্ঘটনা না ঘটে, সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা বিভিন্ন ভবনে থাকা হোটেল ও রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘অভিযানে আমরা দেখেছি, এসব হোটেল ও রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী সবচেয়ে বেশি অসতর্ক। কোনো দুর্ঘটনা কীভাবে সামাল দেবেন, সে সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা নেই। আমরা পুরো এলাকায় পর্যায়ক্রমে অভিযান শুরু করেছি। বিশেষ করে সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার এবং অবৈধভাবে গড়ে ওঠা হোটেল ও রেস্তোরাঁ মালিকদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।’

এদিকে কামরাঙ্গীরচর থানার রসুলপুর, আশরাফাবাদ, লোহারব্রিজসহ বিভিন্ন এলাকায় অনিয়ম, অব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন অভিযোগে রেস্টুরেন্টের মালিক ও ম্যানেজারসহ ২৪ জনকে আটক করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। লালবাগ জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. ইমরান হোসেন মোল্লা অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, অভিযানের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দাহ্যপদার্থ ব্যবহারে মানুষকে সচেতন করা। কোথাও অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা দেখামাত্রই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি অনেককে সতর্ক করাও হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, হোটেল-রেস্তোরাঁর যথাযথ অনুমোদন রয়েছে কি না, নিরাপদ স্থানে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার হচ্ছে কি না, নিরাপত্তা ব্যবস্থা কতটুকু টেকসই এবং অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র ও ঝুঁকির বিষয়গুলো যথাযথভাবে চেক করা হচ্ছে। তবে গ্যাসের সিলিন্ডার ব্যবহারে সবাই বেশ উদাসীন।

অভিযানে ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মো. মাহবুব-উজ-জামান, জোনাল অতিরিক্ত উপকমিশনার মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম, লালবাগ জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. ইমরান হোসেন মোল্লা, কামরাঙ্গীরচর থানার ওসি মো. সাইফুল ইসলাম এবং পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. ফজলুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০